ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বড় বদর পালা শেষ ॥ মীর কাশেমের ফাঁসি

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বড় বদর পালা শেষ ॥ মীর কাশেমের ফাঁসি

শংকর কুমার দে/ আরাফাত মুন্না/ মোস্তাফিজুর রহমান টিটু ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আল বদর নেতা, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা ও অর্থের যোগানদাতা, ধনকুবের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীকে শনিবার রাত সাড়ে দশটায় ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে কাশিমপুর কারাগারে। এই প্রথমবারের মতো কাশিমপুর কারগারে কোন যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদ- কার্যকর করা হলো। এর মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীর শাস্তি দিয়ে কলঙ্কমোচনের পথে এগিয়ে গেল দেশ। একাত্তরের মূল ঘাতক ও জামায়াতের শীর্ষনেতা এবং দেশ-বিদেশে তদ্বির করে বিরাট অঙ্কের টাকায় লবিস্ট নিয়োগ করে যুদ্ধাপরাধীর বিচার বন্ধে ও ফাঁসি কার্যকরে বাধা সৃষ্টির পর ফাঁসি কার্যকরের ঘটনায় দেশের জন্য রচিত হলো আরও একটি নতুন ইতিহাস। মীর কাশেমের মৃত্যুদ- কার্যকর করার পর আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিংয়ে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক সাংবাদিকদের জানান, রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেমের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী এ ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। জনগণ যেটা চেয়েছিল সেটা পূরণ হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা নেই। আমরা মনে করি দেশের মানুষ অধীর অপেক্ষায় ছিল এ রায়ের জন্য। তাদের আকাঙ্খা পূরণ হয়েছে। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক জানান, রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কাশিমপুর কারাগারে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। এই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদ- কার্যকরের পর সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে রাত সাড়ে ১২টায় র‌্যাব ও পুলিশের কড়া প্রহরায় মীর কাশেমের লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স রওনা হয় মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলা তার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে। লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স কারাগার থেকে বের হওয়ার পথে এ্যাম্বুলেন্স লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করে স্থানীয় জনতা। মানিকগঞ্জে পৌঁছার পর মধ্যরাতেই পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশ হস্তান্তর করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রবিবার ভোরে তার গ্রামের বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া প্রহরায় জানাজা শেষে লাশ দাফন সম্পন্নও করা হয়। ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামে ডালিম হোটেলে হত্যাসহ বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১২ সালের ১৭ জুন গ্রেফতার হওয়ার পর আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ কারাগারে পাঠানো হয় মীর কাশেম আলীকে। ২০১৪ সালের ২ নবেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মীর কাশেম আলীকে ২টি অভিযোগে মৃত্যুদ- এবং ৮টি অভিযোগে ৭২ বছরের কারাদ- দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে আপীল করেন। আপীলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত ৮ মার্চ আপীল বিভাগ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদকে খুনের দায়ে ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন। গত ৬ জুন আপীল বিভাগ মীর কাশেমের ফাঁসি বহাল রেখে ২৪৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। মীর কাশেম ১৯ জুন ফাঁসির দ- থেকে খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন। রিভিউ আবেদনে ১৪টি যুক্তি উত্থাপন করে ফাঁসির দ- থেকে খালাস চান তিনি। এই রিভিউ আবেদনের ওপর ২৪ আগস্ট শুনানি শুরু হয়। ২৮ আগস্ট শুনানি গ্রহণ শেষ করে ৩০ আগস্ট রায়ের দিন ধার্য করা হয়। ৩০ আগস্ট মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ রিভিউ আবেদন খারিজের রায় দেন মঙ্গলবার। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার জন্য আবেদন করা নিয়ে নিখোঁজ ছেলেকে ফিরে পাওয়ার শর্তারোপ করে কালক্ষেপণের কৌশলের পর্যায়ে শুক্রবার প্রাণভিক্ষা চাইবেন না জানিয়ে দিলে মৃত্যুদ- কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। চূড়ান্ত রায়ের পর মীর কাশেম তার নিখোঁজ সন্তান ফিরে না আসা পর্যন্ত প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্ত নেবেন না বলে জানিয়েছিলেন। তবে মত পাল্টে শুক্রবার তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাওয়ার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে জানান। এরপর মীর কাশেমের ফাঁসি কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। শুক্রবার থেকেই কাশিমপুর কারাগারের চারপাশে, বিশেষ করে কারা ফটকের সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কারা ফটকেও তল্লাশি করে নিয়মিত দর্শনার্থীদের ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেয়া হয়। শুক্রবার রাতেই ফাঁসি কার্যকর করা হচ্ছে এমন কথা চাউর হলেও পরে কারাকর্তৃপক্ষ জানান, শুক্রবার ফাঁসি কার্যকর করা হয়নি। শনিবার পরিবারের লোকজনদের শেষ সাক্ষাতের জন্য সাড়ে তিনটায় যাওয়ার খবর দেয়া হলে মোটামুটি ধরে নেয়া হয় মীর কাশেম আলীর ফাঁসি হয়েই যাচ্ছে ও ফাঁসি হয়েই গেল। ফাঁসি দেয়ার নির্বাহী আদেশ ॥ শনিবার বিকেল তিনটায় একজন ম্যাজিস্ট্রেট সরকারের নির্বাহী আদেশ নিয়ে কারাগারে পৌঁছেন। বিশেষ বার্তা বাহকের মাধ্যমে লাল খামের মধ্যে বার্তা পাঠানো হয় গাজীপুরের ডিসি, এসপি, সিভিল সার্জনকে। বার্তা পাঠানো হয় মীর কাশেম আলীর মানিকগঞ্জের গ্রামের বাড়িতেও। এ বিষয়ে জেলার মোঃ নাশির আহমেদ জানিয়েছেন, বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কারাগারে এসে আদেশের কপি তাদের হাতে পৌঁছে দিয়েছেন। স্বজনদের সাক্ষাত ॥ মৃত্যুদ- কার্যকরের আগে মীর কাশেম আলীর সঙ্গে দেখা করেছেন তার স্বজনরা। ১ ঘণ্টা ৩৫ মিনিটের এই সাক্ষাতপর্বে তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন তার পরিবার সদস্যসহ ৩৮ জন স্বজন। অবশ্য কারাগারের ভেতরে সাক্ষাতের উদ্দেশে ঢুকেছিলেন ৩ শিশুসহ তার পরিবারের ৪৭ সদস্য। এ বিষয়ে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২-এর সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক জানান, ‘বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট থেকে ৫টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ৩৮ জন স্বজন মীর কাশেমের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। স্বজনদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ৮/১০ জন করে গ্রুপ করে তাদের সাক্ষাত করতে দেয়া হয়। সন্ধ্যা ৬টা ৩৮ মিনিটে তারা কারাগার থেকে বের হয়ে যান। এর আগে শনিবার সকালে কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মীর কাশেমের পরিবারের সদস্যদের তার সঙ্গে দেখা করার জন্য বিকেল তিনটার মধ্যে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। মীর কাশেম আলীর স্ত্রী সৈয়দা আয়েশা খানম সাক্ষাত শেষে কারাগার গেটের সামনে সাংবাদিকদের বলেছেন, মীর কাশেম আলী তাকে বলেছেন, মৃত্যুকে ভয় পাই না, বিচলিত নই। এই মৃত্যু শহীদী মৃত্যু। তবে আফসোস শেষ মুহূর্তে আমার ছেলেকে দেখে যেতে পারলাম না। ছেলে আমার পরিবারে ফিরে আসবে এ প্রত্যাশাই করি। আয়েশা খানম আরও জানান, উনি (মীর কাশেম আলী) বলেছেন, আমি জান্নাতে যাব। আমি আগে গিয়ে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করব। তোমরা কান্নাকাটি করো না। মীর কাশেম আলীর স্ত্রী খন্দকার আয়শা খাতুন গণমাধ্যমকে বলেন, মীর কাশেমের ইচ্ছেÑমৃত্যুর পর তার জানাজা যেন পড়ায় তার ছেলে মীর আহমদ বিন কাশেম। এটা তার অসিয়ত। যা খেলেন মীর কাশেম ॥ মীর কাশেম আলীর সঙ্গে দেখা করার সময়ে তার প্রিয় খাবার হালুয়া নিয়ে গেছে তার পরিবার। শাহজালাল মাজার থেকে ওই হালুয়া আনা হয়েছে। হালুয়া খেয়েছেন তিনি। তাকে খাওয়ানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয় সেমাই, বিরিয়ানীসহ নানা ধরনের পছন্দের খাবারও। মৃত্যুদ- কার্যকরের সময় যারা ছিলেন ॥ ফাঁসি কার্যকর করার সময় ফাঁসির মঞ্চ ও কারাগারের ভেতরে ছিলেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন, অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজি প্রিজন) কর্নেল ইকবাল হাসান, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম, পুলিশ সুপার হারুনুর রশিদ, সিভিল সার্জন ডাঃ আলী হায়দার খান, কাশিমপুর কারাগার-২-এর সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক, জেলার নাশির আহমেদ। মঞ্চের চারপাশে ছিলেন ২০ জন কারারক্ষী। এছাড়া পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তার নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস দলও ছিলেন কারাগারের ভেতরে-বাইরে। যেভাবে ফাঁসি কার্যকর ॥ মীর কাশেম আলীর পরিবার-পরিজন সাক্ষাত করে যাওয়ার পর কনডেমড সেলে গিয়ে তাকে গোসল করিয়ে রাতের খাবার দেয়া হয়। কারাগারের মাওলানা হেলালউদ্দিনের মাধ্যমে তওবা পড়িয়ে নেন কারা কর্তৃপক্ষ। এ সময় তার কাছ থেকে তার শেষ কোন কথা থাকলে তাও শুনে নেন কারা কর্মকর্তারা। এরপর ধর্মীয় রীতি অনুসারে তাকে তওবা পড়ান মাওলানা। এর আগেই তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করেন কারা চিকিৎসক। জেলসুপার রাতেই তার ফাঁসি কার্যকর করা হবে বলে জানিয়ে দেন। জেলসুপার বলেন, এটাই আপনার শেষ রাত। এখন আপনাকে তওবা পড়তে হবে। মাওলানা তাকে বলেন, আপনার কৃতকর্মের জন্য আদালত আপনাকে ফাঁসির রায় দিয়েছেন। আপনি একজন মুসলমান। এ কারণে আপনি আল্লাহর এই দুনিয়ায় কৃতকর্মের জন্য তওবা করেন। এরপর ইমাম সাহেব তাকে তওবা পড়ান। তওবা পড়ার মিনিট চারেক পর কনডেমড সেলে জল্লাদরা আসেন। তারা মীর কাশেম আলীকে নিয়ে যান ফাঁসির মঞ্চে। আগে থেকেই মঞ্চের পাশে রাখা ছিল মরদেহ বহনের জন্য এ্যাম্বুলেন্স। ফাঁসির মঞ্চে নেয়ার পর তার মাথায় পরানো হয় একটি কালো রংয়ের টুপি। এই টুপিটিকে বলা হয় ‘যমটুপি’। ফাঁসির মঞ্চে তোলার পর মীর কাশেম আলীর দুই হাত পেছন দিকে বাঁধা হয়। এ সময় ফাঁসির মঞ্চের সামনে উপস্থিত ছিলেন কারা কর্তৃপক্ষ, সিভিল সার্জন ও একজন ম্যাজিস্ট্রেট। ফাঁসির মঞ্চে প্রস্তুত ছিলেন জল্লাদও। মঞ্চে তোলার পর তার দুই পা বাঁধা হয়। পরানো হয় ফাঁসির দড়ি। কারা কর্তৃপক্ষের হাতে ছিল একটি রুমাল। রাত সাড়ে দশটায় রুমালটি হাত থেকে নিচে ফেলে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জল্লাদ ফাঁসির মঞ্চের লিভারে টান দেন। লিভারটি টান দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফাঁসির মঞ্চের নিচে চলে যান মীর কাশেম আলী। এ সময় তিনি মাটি থেকে ৪-৫ ফুট শূন্যে ঝুলে থাকেন। এতে মুহূর্তের মধ্যেই তার ঘাড়ের হাড় ভেঙ্গে মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে যায়। মৃত্যুদ- কার্যকরের পর মরদেহ তোলার পর কারা চিকিৎসক ঢাকা জেলার সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। এ সময় তার ঘাড়ের রগ কাটা হয়। মীর কাশেম আলীর ফাঁসির লিভারে টান দিয়ে ঐতিহাসিক এ দায়িত্ব পালন করেন প্রধান জল্লাদ শাজাহান ও অন্য জল্লাদ শাহীন, রিপন ও দ্বিন ইসলাম ছিলেন তার সহযোগী। এর আগে পাঁচ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর করেছেন এসব জল্লাদই। নিরাপত্তা জোরদার ॥ মীর কাশেম আলীর ফাঁসির রায় কার্যকরকে কেন্দ্র করে কাশিমপুর কারাগারের আশপাশের এলাকা ও গাজীপুর প্রধান সড়কগুলোসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। প্রধান সড়কে ব্যারিয়ার দিয়ে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হয়। সন্ধ্যায় জেলখানার মূল ফটক ঘিরে ফেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চারদিকে আট স্তরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিভিন্ন বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়। কারা ফটকজুড়ে ছিলেন শত শত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। পুলিশের পাশাপাশি ছিলেন র‌্যাব এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি কারাগারের ফটকে সারি বেঁধে অবস্থান নেন বিপুলসংখ?্যক র‌্যাব সদস?্য। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে কারাগারে ঢোকে ফায়ার সার্ভিসের একটা গাড়ি। পুলিশের একটি জলকামান আগের রাতেই কারাগারের ভেতরে নিয়ে রাখা হয়েছিল। বন্ধ করে দেয়া হয় কারাগারের সামনের সড়কে সাধারণ যান চলাচল ও আশপাশের সমস্ত দোকানপাট। গাজীপুরে ৪ প্লাটুন ও ঢাকায় ৬ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গাজীপুরের কারাগার এলাকায় সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত জারি করা হয়েছে রেড এ্যালার্ট। সর্বশেষ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর ॥ এর আগে আরও শীর্ষ ৫ যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। যে শীর্ষ পাঁচ যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয় এদের মধ্যেÑ ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসিতে ঝোলানো হয় একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে। এর দুই বছর পর ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল দলটির আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ২১ নবেম্বর জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয় একই দিনে। এ বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালের ১১ মে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে। এই পাঁচ যুদ্ধাপরাধীর সবাইকেই ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে নাজিমউদ্দিন রোডের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। ৬৩ বছর বয়সী মীর কাশেম আলী ২০১২ সাল থেকে এ কারাগারে ছিলেন। শুরুতে কারাগারে ডিভিশন পেলেও ২০১৪ সালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদ-ের রায়ের পর মীর কাশেম আলীকে এতদিন ধরে কনডেমড সেলে রাখা হয়। শনিবার রাতে কনডেমড সেল থেকে বের করে আইনানুগ প্রক্রিয়া ও রীতিনীতি অনুসরণ করে ধনকুবের যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদ- কার্যকর করার মধ্য দিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হলো।
×