ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত ১০ বাংলাদেশী সুস্থ আছেন

জিকা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই ॥ নাসিম

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জিকা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই ॥ নাসিম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিকা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য জনসাধারণকে পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তবে পাশর্^বর্তী দেশ সিঙ্গাপুরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ এবং ১০ বাংলাদেশীর আক্রান্ত হওয়ার খবরে মানুষের মধ্যে কিছুটা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। সিঙ্গাপুরের সঙ্গে আমাদের ট্যুরিজম আছে। মানুষ যাতায়াত করে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। শুক্রবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপিত স্ক্রিনিং মেশিন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। এ সময় অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বিমান কুমার সাহা, অতিরিক্ত সচিব ফয়েজ আহমেদ, আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহজাদী সাবরিনা ফ্লোরা, সিডিসি পরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম শামসুজ্জামান ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ড. এন পারানিথরণ উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে আগত এবং বিদেশগামী যাত্রীরা বিমানবন্দরে স্থাপিত স্ক্রিনিং মেশিনে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন। কারও শরীরে জিকা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে সরকারী খরচে তাকে চিকিৎসা দেয়া হবে। জিকা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জিকা সংক্রমণে মৃদু জ্বর হয়। শরীর ঠা-া রাখলে জিকা সংক্রমণ সেরে যায়। তাই বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এতে করে ২ থেকে ৭ দিনের মধ্যে জিকা সংক্রমণ সেরে যায়। তাই এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত ১০ ব্যক্তি সুস্থ আছেন বলে জানান তিনি। সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ট্যুরিজম চালু থাকার কথা জানিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জিকা সংক্রমণের কারণে এক্ষেত্রে কোন বিরূপ প্রভাব পড়বে না। আমাদের দেশের অনেক মানুষ সেখানে কাজ ও ব্যবসাবাণিজ্য করে, যাতায়াত আছে। এসব যাতায়াত ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। তবে গর্ভবতী মায়েদের একটু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ গর্ভবতী মায়ের জিকা সংক্রমণ হলে সন্তান বিকলাঙ্গ ও নিউরো-ডিসঅর্ডার হতে পারে। তাই তাদের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের সব বিমান, নৌ, স্থল বন্দরসহ প্রত্যেকটি প্রবেশ™^ারে ইতোমধ্যে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এক বিবৃতিতে সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সিঙ্গাপুরে অন্তত ১০ বাংলাদেশী মশাবাহিত রোগে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত তারা ১১৫ জনের শরীরে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি পেয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বিদেশ থেকে আসা নির্মাণ শ্রমিক। আক্রান্ত সবাই সিঙ্গাপুরের একই অঞ্চলের বাসিন্দা বা একই এলাকায় কাজ করেন বলে জানায় সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, ‘জিকা’ নামটি নেয়া হয়েছে উগান্ডার জিকা বন থেকে? ১৯৪৭ সালে বানরের দেহে এই সংক্রামক এজেন্টের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। ১৯৫২ সালে এর নাম দেয়া হয় জিকা ভাইরাস? জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণত জ্বর, চামড়ায় লাল ফুসকুড়ি, গোড়ালিতে ব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া- এসব লক্ষণ দেখা দেয়? এছাড়া পেশি, মাথায়ও ব্যথা হতে পারে? জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে? শিশুদের ‘মাইক্রোসেফালি’ রোগ হওয়ার কারণ জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতী মা? কিন্তু তার কোন উপসর্গ আগে থেকে দেখা যাবে না। গর্ভবতী মা মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হলে তার অনাগত শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হতে পারে, মস্তিষ্কের গঠন থাকতে পারে অপূর্ণ। এ রোগকে বলে মাইক্রোসেফালি। এই রোগ হলে শিশুদের মস্তিষ্কের গঠন ঠিকমতো হয় না। ফলে শিশু বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়া, শারীরিক বৃদ্ধি অস্বাভাবিক বা বিলম্বিত হওয়া থেকে শুরু করে অকালে মারা যাওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়? এই রোগের চিকিৎসায় এখনও কোন প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি? ফলে সতর্ক থাকাটাই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ? অবশ্য এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা বিরল? প্রতিরোধের মূল মন্ত্রই হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ। এই মশা যেন কামড়াতে না পারে তার ব্যবস্থা করা। স্বচ্ছ-পরিষ্কার পানিতে এরা ডিম পাড়ে। ময়লা-দুর্গন্ধযুক্ত ড্রেনের পানি এদের পছন্দসই নয়। তাই এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী স্থানগুলোকে পরিষ্কার রাখতে হবে। একই সঙ্গে মশা নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। একমাত্র সচেতনতা ও প্রতিরোধের মাধ্যমেই এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। গত মার্চে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চট্টগ্রামের এক ব্যক্তির রক্তের পুরনো নমুনায় জিকা ভাইরাসের অস্তিত্ব পেয়েছে জাতীয় রোগ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইইডিসিআর।
×