ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লায় যুবলীগ নেতা হত্যার ১৩ মাস পর খুলি, কঙ্কাল উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৩১ আগস্ট ২০১৬

কুমিল্লায় যুবলীগ নেতা হত্যার ১৩ মাস পর খুলি, কঙ্কাল উদ্ধার

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ৩০ আগস্ট ॥ দীর্ঘ ১৩ মাস পর ডিবি পুলিশের অভিযানে কুমিল্লার যুবলীগ নেতা এটিএম তারিকুল হাসান টিটু হত্যার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। সেই সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে নিহতের মাথার খুলি ও শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড়। মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর ঠাকুরপাড়ার পরিত্যক্ত একটি বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে টিটুর কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। নিহত টিটু জেলার দেবিদ্বার পৌরসভার বানিয়াপাড়া (গোমতী আবাসিক এলাকা) গ্রামের মৃত আবু তাহের মাস্টারের ছেলে এবং দেবিদ্বার পৌর যুবলীগের সহ-সভাপতি ছিল। পুলিশ বলেছে, টিটুর শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড়ের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তার পরিচয় শনাক্ত করা হবে। গত বছরের ২ জুলাই গভীর রাতে টিটু তার বন্ধুদের হাতেই নির্মমভাবে নিহত হয়। এ হত্যাকা-ে ৭/৮ সন্ত্রাসী অংশ নেয়। এদের মধ্যে লিমন ও হৃদয় নামে দুই ঘাতককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দেবিদ্বারের যুবলীগ নেতা টিটু (২৮) গত বছরের ২ জুলাই নিখোঁজ হন। ওইদিন রাতেই টিটুকে কুমিল্লার ঠাকুরপাড়ার শ্মশানঘাটে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রথমে গুলি করা হয়। পরে তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে লাশ গুম করা হয়। এদিকে নিখোঁজের পর থেকে স্বামীর সন্ধান না পেয়ে তার স্ত্রী সেলিনা আক্তার শোভা ওই বছরের ১৩ জুলাই জেলার দেবিদ্বার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সন্ধান না পেয়ে চলতি বছরের ৮ মার্চ টিটুর মা রাজিয়া সুলতানা আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় জেলা ডিবি পুলিশ। এসআই শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ডিবির একটি দল গত ২৮ আগস্ট গভীর রাতে গুলিভর্তি রিভলবারসহ নগরীর অশোকতলা এলাকার আবুল হাশেমের ছেলে ১২ মামলার আসামি চিহ্নিত সন্ত্রাসী রফিকুল ইসলাম লিমন ওরফে চোরা লিমনকে (৩০) ছোটরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে লিমন তার সহযোগীদের নিয়ে দেবিদ্বারের যুবলীগ নেতা টিটুকে হত্যাসহ লাশ গুম করার তথ্য প্রকাশ করে। লিমনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকা-ে জড়িত ঠাকুরপাড়ার জিয়াউদ্দিনের ছেলে রিয়াদউদ্দিন হৃদয়কে (২৮) মঙ্গলবার গ্রেফতারের পর উভয়কে নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে টিটুর মরদেহের সন্ধানে অভিযান চালায়। দুপুর পৌনে ১টার দিকে নগরীর ঠাকুরপাড়ার একটি পরিত্যক্ত বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে টিটুর মাথার খুলি, দেহের বিভিন্ন অংশের হাড় উদ্ধার করে। এ সময় এলাকার উৎসুক জনতা ঘটনাস্থলের আশপাশে ভিড় জমায়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে টিটুর মা রাজিয়া সুলতানা বাদী হয়ে গ্রেফতারকৃত লিমন ও হৃদয়সহ অজ্ঞাতনামা আরও ৬/৭ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ডিবির এসআই শহিদুল ইসলাম জানান, টিটুকে হত্যার পর ঠাকুরপাড়া প্যারামেডিক্যাল ইনস্টিটিউট সংলগ্ন একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে প্রথমে টিটুর লাশ মাটি চাপা দেয়া হয়। ৩ দিন পর লাশটি তুলে বস্তাবন্দী করে ওই বাড়িরই সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে গুম করে রাখে। ছেলের কঙ্কালের ছবি দেখে কান্নাজড়িত কণ্ঠে টিটুর মা রাজিয়া সুলতানা বলেন, আমার ছেলে তার বন্ধুদের হাতে এমন নির্মমভাবে খুন হবে তা কখনও ভাবিনি। সিনান (৬) ও সিতাথী (৪) নামে টিটুর দুই শিশু সন্তান রয়েছে। টিটুকে হারিয়ে তার সন্তান ও স্ত্রী এখন নির্বাক হয়ে পড়েছে। তারা সব হত্যাকারীকে গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবি জানান। কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোঃ শাহ আবিদ হোসেন এক প্রেস বিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, এ হত্যাকা-ের কারণ উদ্ঘাটনসহ জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।
×