ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকল্প অনুমোদনের জন্য একনেকে যাচ্ছে কাল

ভারতীয় ঋণে কেনা হচ্ছে ৫শ’ ট্রাক ॥ বিআরটিসি বহরে যুক্ত হবে

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ২৯ আগস্ট ২০১৬

ভারতীয় ঋণে কেনা হচ্ছে ৫শ’ ট্রাক ॥ বিআরটিসি বহরে যুক্ত হবে

আনোয়ার রোজেন ॥ পণ্যবাহী ট্রাক কেনার জন্য গত পাঁচ বছর ধরে অর্থায়নকারী সংস্থা বা দাতাগোষ্ঠী খুঁজে বেড়াচ্ছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি)। অবশেষে ভারতীয় ঋণে ৫০০টি নতুন ট্রাক কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত হচ্ছে। পণ্য পরিবহন সেবা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিআরটিসির বহরে এসব ট্রাক যুক্ত হবে। বিআরটিসির পুরাতন ও অচল ট্রাকগুলোকে প্রতিস্থাপন করবে এসব ট্রাক। সরকারী এবং বেসরকারী খাতের মালামাল পরিবহনের জরুরী চাহিদা মেটানোর জন্য এসব ট্রাক ব্যবহার করা হবে। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে প্রায় ২১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় ঋণের (লাইন অব ক্রেডিটের বা এলওসি) আওতায় পাওয়া যাবে ১৫৮ কোটি টাকা। বাকি ৯৯ কোটি টাকা জোগান দেয়া হবে সরকারী তহবিল থেকে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্পটি উপস্থাপনের কথা রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতাধীন বিআরটিসিতে বর্তমানে ১০০টির মতো ট্রাক রয়েছে। যাত্রী পরিবহনে বছরের পর বছর লোকসান গুনলেও ট্রাকসেবায় বরাবরই মুনাফা করে রাষ্ট্রায়ত্ত এই পরিবহন সংস্থা। তবে দীর্ঘদিন বহরে নতুন ট্রাক যোগ না হওয়ায় সংস্থাটির এ সেবা ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। বর্তমানে বিআরটিসির ট্রাক খাদ্য অধিদফতর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজি প্রেস, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ অক্সিজেন লিমিটেড, কর্ণফুলী পেপার মিল, বাংলাদেশ রেলওয়ে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন, বিটিভি, পিডিবি, আবহাওয়া অধিদফতর ও অন্যান্য বেসরকারী সংস্থার বিভিন্ন ধরনের পণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহার হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত ট্রাক না থাকায় অনেক সময় জরুরী প্রয়োজনে পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে মৌসুমী ফল, পোল্ট্রি সামগ্রী, ওষুধ, পোশাক শিল্পে ব্যবহৃত পণ্যসামগ্রী এবং অন্যান্য পণ্য পরিবহনের জন্য অনেক ট্রাকের চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও দ্রুত ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানের জন্য ট্রাকের প্রয়োজন হয়। তাই এসব সমস্যা থেকে রেহাই পেতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৫০০ ট্রাক কেনার জন্য প্রস্তাব পাঠায় পরিকল্পনা কমিশনের কাছে। তবে ২০১৩ সালে একনেকের অনুমোদন পাওয়ার পরও অর্থায়নকারী সংস্থা খুঁজে না পাওয়ায় ট্রাক কেনার বিষয়টি ঝুলে যায়। ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল মাসে নতুন করে প্রস্তাবিত প্রকল্পের ওপর পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। একনেকের চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে এসব ট্রাক কেনা সম্পন্ন করবে বিআরটিসি। ট্রাকগুলো সারা বাংলাদেশে চলাচল করবে বলে জানা গেছে। প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- ১৫ টন মালামাল ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৫০টি ট্রাক ও ১০ টন মালামাল ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ১৫০টি ট্রাকসহ খুচরা যন্ত্রপাতি এবং আনুষঙ্গিক সেবা ক্রয়, রেজিস্ট্রেশন ফি, ক্লিয়ারিং ফরোয়ার্ডিং এল/সি কমিশন, ইমপোর্ট ডিউটি এবং ভ্যাট প্রদান। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য খোরশেদ আলম চৌধুরী পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিআরটিসির আওতায় ট্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া সমগ্রদেশব্যাপী পণ্য পরিবহন সেবা বৃদ্ধিসহ আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। এমটিবিএফভুক্ত মন্ত্রণালয় হিসেবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির অর্থায়নের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ প্রস্তাবিত মেয়াদকালে প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালে সরকারী পণ্য পরিবহনে গড়ে তোলা হয় বিআরটিসির ট্রাক ইউনিট। তখন জাপানী রিলিফ সহায়তার কয়েকটি ট্রাক দিয়ে শুরু হয় সরকারী পণ্য পরিবহনের কার্যক্রম। তখন থেকে গত চার দশক সরকারী খাদ্য, ওষুধ, বীজ, সার, কাগজসহ সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পণ্য বহন করে আসছে বিআরটিসি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণসামগ্রী পরিবহনে বিআরটিসির ট্রাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
×