ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

একটি শহরের অর্ধেক ধ্বংসস্তূপে পরিণত, ৬০ জনের প্রাণহানি

ইতালিতে ভূমিকম্পের আঘাত

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২৫ আগস্ট ২০১৬

ইতালিতে ভূমিকম্পের আঘাত

ইতালির মধ্যাঞ্চলে বুধবার ভোররাতে ৬ দশমিক ২ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ৬০ জন নিহত এবং বহু বাড়িঘর ধসে পড়েছে। এর এক ঘণ্টার মধ্যে সেখানে ৫ দশমিক ৫ মাত্রার একটি পরাঘাত অনুভূত হয়। ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ধ্বংস স্তূপের নিচে আটকাপড়া লোকজনকে বের করে আনতে উদ্ধারকর্মীদের তৎপরতা শুরু হয়। খবর এএফপি ও বিবিসি অনলাইনের। ভূমিকম্পে ইতালির মধ্যাঞ্চলীয় পার্বত্য এলাকাগুলো বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের কাছাকাছি হওয়ায় আম্ব্রিয়া, মার্চে ও লাজিওর গ্রামের অনেক বাড়ি ধসে পড়েছে। আম্ব্রিয়ার কাছাকাছি নোরসিয়া শহরের পাশে ছিল ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্ষুদ্র শহর আমাত্রিসিও। শহরের প্রায় অর্ধেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মেয়র সের্গিও পিরোজ্জি জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। ভূমিকম্পের ফলে ভূমিধসের ঘটনাও ঘটে এবং একটি সেতু ধসে যায়। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে ক্ষতিগ্রস্ত শহরটিতে ঢোকার পথও বন্ধ হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া মানুষের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে বলে মেয়র জানান। আমাত্রিস ইতালির একটি প্রাকৃতিক শোভাম-িত এলাকা। এটি দেশের অভ্যন্তরীণ অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ। গ্রীষ্মের সময় একটু শীতলতার পরশ পেতে রোম থেকে অনেকেই সেখানে যান। ইতালির জরুরী আপৎকালীন বিভাগ ভূমিকম্পকে ‘প্রলয়ঙ্করী’ বলে অভিহিত করেছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, বুধবার ভোররাত ৩টা ৩৬ মিনিটে আম্ব্রিয়া অঞ্চলের পেরুজিয়া প্রদেশের নোরসিকা টাউনের কছে শক্তিশালী এ ভূমিকম্পটি হয়। রাজধানী রোম থেকেও ভূমিকম্পের আঘাত টের পাওয়া যায়। ভোররাতে প্রবল ঝাঁকুনিতে উৎপত্তিস্থলের ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রাজধানী রোমের বাসিন্দাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। স্থানীয় দৈনিক লা রিপাবলিকান জানিয়েছে, ভূমিকম্পের প্রভাবে রোমের কোন কোন ভবন ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত কাঁপতে থাকে। ইতালির দমকল বাহিনীর মুখপাত্র লুকা কারি জানিয়েছেন, বিভিন্ন জায়গায় ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অনেক জায়গা থেকেই হতাহতের খবর আসছে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আকুমোলি, আমাত্রিস, পেকারা ও আরকুয়াটা ডেল টরোন্টো। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। ভূমিকম্পের তীব্রতার কথা জানিয়ে আম্ব্রিয়ার এক বাসিন্দা বলছিলেন, এটা অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকম্প ছিল। মনে হচ্ছিল বিছানাটা তাকে নিয়ে ঘরের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করছে। আরেকজন বলেন, তার বাড়ির দেয়ালগুলো ফাটল ধরার পর বইগুলো সব শেলফ থেকে পড়ে যায়। আকুমোলির মেয়র স্টেফানো পেত্রুচ্চি বলেন, আমরা এখানে একটি ট্র্যাজিডির মধ্যে রয়েছি। এখানে একজন মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও চারজন আটকা পড়েছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোন সাড়া শব্দ আসছে না। নরসিয়া থেকে শহরটির মেয়র জানিয়েছেন ভূমিকম্পে শহরের বেশ কিছু ঐতিহাসিক দালান কোঠা ধসে পড়েছে সেখানে থেকে হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি। ২০০৯ সালে ইতালির আকুইলা ও আবরুজ্জো এলাকায় সংঘটিত ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পের ৩ শতাধিক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছিল। এছাড়া ২০১২ উত্তরাঞ্চলীয় এমিলিয়া রোমানিয়া এলাকায় ভূমিকমপে ২৩ জন প্রাণ হারিয়েছিল।
×