ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

১৪ ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ॥ মরেছে মাছ ও গবাদিপশু- এলাকাজুড়ে দূষণ

চট্টগ্রামে ডিএপি প্লান্টে বিস্ফোরণ নাশকতা না দুর্ঘটনা?

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৪ আগস্ট ২০১৬

চট্টগ্রামে ডিএপি প্লান্টে বিস্ফোরণ নাশকতা না দুর্ঘটনা?

মোয়াজ্জেমুল হক/হাসান নাসির ॥ কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে সিইউএফএল সংলগ্ন ডাই এ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) কারখানার ট্যাংকে বিস্ফোরণের ঘটনাটি দুর্ঘটনা না নাশকতা তা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে। দুর্ঘটনার পর মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামে এসে বিসিআইসি চেয়ারম্যান ইকবাল সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর। এত সহজভাবে এ দুর্ঘটনাকে দেখা ঠিক হবে না। দুর্ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিটির রিপোর্টের পর এটি স্পষ্ট হবে। অপরদিকে ডিএপির বিভিন্ন সূত্রে এটিকে নাশকতা হিসেবে ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে। কেননা, শিফট পরিবর্তনের সময় বিস্ফোরণ ও গ্যাস নির্গত হওয়ার এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর পরই ডিএপির এমডি ও সিইউএফএল এমডি তাৎক্ষণিকভাবে অকুস্থলে পৌঁছান। এদিকে সোমবার রাত প্রায় দশটার দিকে ৩শ টন ভর্তি ১নং প্ল্যান্টে এ্যামোনিয়া গ্যাসের বিস্ফোরণের ঘটনার ১৪ ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। রাত দশটার দিকে প্ল্যান্টে পাইপ বিস্ফোরণে বিষাক্ত এ্যামোনিয়া গ্যাস নির্গত হওয়ার ঘটনার পর থেকে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ছয় ইউনিটের ১২টি টিম টানা প্রচেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এরই মধ্যে বিপুলসংখ্যক মানুষ শ্বাসকষ্টে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এছাড়া কয়েকটি গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। কারখানা সংলগ্ন এলাকার একটি মৎস্য প্রকল্পের প্রায় সব মাছ মরে গেছে। এ ঘটনায় সোমবার রাতেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠিত ৩ সদস্যের কমিটি কাজ শুরু করেছে। মঙ্গলবার সকালে বিসিআইসি চেয়ারম্যান ইকবাল চট্টগ্রাম এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ১০ সদস্যের আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। সংস্থার পরিচালককে (কারিগরি ও প্রকৌশল) প্রধান করে গঠিত এ কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। সোমবার রাত ১০টা বাজার ১০ মিনিট আগে গোলযোগের সূত্রপাত। প্রথমে কর্তৃপক্ষের কারিগরি বিশেষজ্ঞরা ত্রুটি সারানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। গ্যাস নির্গত হওয়া বাড়তে থাকে। ঘণ্টাখানের মধ্যে তরল গ্যাস বাতাসে মিশে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। রাত বারোটার মধ্যে বাতাসে দূষণের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে। এ সময় বাতাসের গতি ছিল উত্তরমুখী। সঙ্গত কারণে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত এ ডিএপি প্রকল্প থেকে নির্গত গ্যাস বাতাসে মিশে উত্তর পাড়ে অর্থাৎ শহরের পতেঙ্গা, হালিশহর, আগ্রাবাদ, সদরঘাট, মাঝিরঘাট, ইপিজেডসহ সন্নিহিত এলাকায় আঘাত হানে। শহরের একাংশজুড়ে এ পরিস্থিতির কারণে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। একদিকে মানুষ শ্বাসকষ্টে অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে। আবার কেউ কেউ প্রাণভয়ে এলাকা ছাড়তে থাকে। এ সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। মুখে ঘন ঘন পানি ছিটানো ও খাওয়ার পরামর্শও দেয়া হয়। এরপরও গ্যাসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মানুষের শ্বাসকষ্ট বিশেষ করে যাদের হাঁপানি রোগ রয়েছে তাদের অবস্থা বেগতিক হয়ে যায়। সোমবার রাত ২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫৭ জন ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। এছাড়া অন্য অসুস্থদের নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। সবমিলে এ ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়ার সংখ্যা প্রায় ২শ বলে জানানো হয়েছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী সোমবার রাতেই গণমাধ্যমকে এবং এলাকার মানুষজনকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে, এই গ্যাসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মানুষের মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা তেমন নেই। তবে সাময়িক অসুস্থ হয়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। সোমবার রাতে এ ঘটনার পর অকুস্থলে কারও পক্ষে যাওয়া সম্ভব হয়নি। উপরন্তু প্রকল্প ও সন্নিহিত এলাকার লোকজনও যে যেভাবে পারে সরে যায়। এর মধ্যে সন্নিহিত কাফকো এলাকার বেশকিছু নারী পুরুষ ও শিশু অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। গভীর রাত পর্যন্ত এ নিয়ে চট্টগ্রামজুড়ে ব্যাপক শঙ্কা বিরাজ করতে থাকে। রাত পোহানোর পর পরই গ্যাসের তীব্রতা কমতে শুরু করায় মানুষের অসুস্থ হয়ে পড়ার সংখ্যা আর বাড়েনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সর্বশেষ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন প্রাণহানি ঘটেনি। চট্টগ্রামে ডাই এ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) কারখানার ট্যাংক বিস্ফোরণের ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া ক্ষতিকর এ্যামোনিয়া গ্যাস চৌদ্দ ঘণ্টার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও এর মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশু, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সের বহু মানুষ। এছাড়া আতঙ্ক নির্ঘুম রাত কাটে সার কারখানা এলাকা ও মহানগরীর পতেঙ্গাসহ একাংশের অধিবাসীদের। পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে নেমে এলেও মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত অকুস্থলে অবস্থানকালে দেখা যায় রাতের ঘটনার রেশ তখনও কাটেনি। ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে কারখানা সংলগ্ন লেকে হাজার হাজার মরা মাছ ও নেতিয়ে পড়া বিবর্ণ গাছপালা। গ্যাস আক্রান্ত হয়ে মারা পড়েছে গবাদি পশুও। এদিকে স্থাপনের দশ বছর যেতে না যেতেই ট্যাংকটিতে কেন বিস্ফোরণ ঘটল তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। এর পেছনে কি দায়িত্বে অবহেলা, কারিগরি ত্রুটি নাকি অন্য কোন রহস্য কাজ করছে সে বিষয়টি ঘুরেফিরে আসছে আলোচনায়। মঙ্গলবার সকালে ডিএপি পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) চেয়ারম্যান মোঃ ইকবাল, ফায়ার সার্ভিসের ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন, সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবু তাহের ভুঁইয়া, ড্যাপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমল কান্তি বড়ুয়া, সিএমপির ডিসি (পোর্ট) হারুন হাজারী এবং প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সেক্টরের উর্ধতন কর্মকর্তারা। তবে এ ব্যাপারে তারা এখনও পরিষ্কার করে কিছু বলছেন না। ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন গঠিত ৩ সদস্যের কমিটি কাজ শুরু করেছে। অপরদিকে মঙ্গলবার বিসিআইসি ১০ সদস্যের আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে। এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিসিআইসির পরিচালককে (কারিগরি ও প্রকৌশল)। সোমবার রাতে গ্যাসে আক্রান্ত এলাকার লোকজন বাসা থেকে বেরিয়ে নিরাপদ দূরত্বে ছুটতে থাকে। প্রশাসন থেকেও মানুষজনকে বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের সরিয়ে নিতে মাইকিং করা হয়। অভয় দেয়া হয় যে, এ্যামোনিয়া গ্যাসে সাময়িক কষ্ট হলেও মৃত্যুঝুঁকি নেই। আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান সিভিল সার্জন। রাত একটার দিকে বাতাসে এ্যামোনিয়া গ্যাসের মাত্রা কম অনুভূত হতে থাকে। এতে করে আতঙ্কও ধীরে ধীরে দূরীভূত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিটের ১২টি টিম ডিএপি কারখানায় এ্যামোনিয়া গ্যাস নিয়ন্ত্রণে আনার কাজে নিয়োজিত হয়। পানি ছিটিয়ে ও কৃত্রিম বৃষ্টির মাধ্যমে ফেটে যাওয়া ট্যাংক ও পাইপের তরল গ্যাস বের করে দেয়া এবং এর কার্যকারিতা হ্রাস করা হয়। তবে এতে অন্তত ৫ ঘণ্টা সময় লাগে। ভোর ৪টার দিকে পরিস্থিতি অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। তবে মঙ্গলবার দুপুরেও ওই এলাকায় বিরাজ করে গ্যাসের উৎকট গন্ধ। বাতাসে দূষণের মাত্রা ॥ সিইউএফএল (চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড) এলাকায় অবস্থিত ডাই এ্যামোনিয়াম ফসফেট কারখানায় ট্যাংক বিস্ফোরণের ফলে নির্গত গ্যাসে বাতাসে দূষণের মাত্রা উপনীত হয় অসহনীয় পর্যায়ে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমল কান্তি বড়ুয়া জানান, বিস্ফোরণের পর রাতে বাতাসে দূষণের মাত্রা ছিল সবচেয়ে বেশি। এ সময় মাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬শ’ পিপিএম। অথচ, নরমাল মাত্রা ১০ পিপিএম। সাধারণত শিল্প এলাকায় বসবাসকারীদের জন্য ১শ পিপিএম মাত্রা পর্যন্ত সহনীয় ধরা হয়। কারণ বসবাস করতে করতে তারা ওই মাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর মঙ্গলবার সকালে সেই মাত্রা ২৫ পিপিএমে নেমে আসে। আরও কমানোর জন্য বিশেষজ্ঞরা কাজ করছে। তবে এখন আর কোন ঝুঁকি নেই বলে তিনি জানান। দুর্ঘটনা না নাশকতা ॥ ডিএপি সার কারখানার দুর্ঘটনাটিকে প্রথমে তরল এ্যামোনিয়ার ট্যাংক লিকেজ বা ফেটে যাওয়া বলা হলেও সেখানে বিস্ফোরণের ঘটনাই ঘটেছে বলে জানিয়েছে এলাকার লোকজন। অনেকেই বলেন, তারা রাত দশটার দিকে বিকট শব্দ শুনতে পেয়েছেন। অকুস্থলে গিয়েও দেখা যায়, ট্যাংকটি উপড়ে গেছে। সংযোগ পাইপও সরে গেছে অনেক দূরে। রাত দশটা শ্রমিক-কর্মচারীদের শিফট পরিবর্তন হওয়ার সময়। এ সময় একটি গ্রুপ চলে যায় আরেকটি গ্রুপ কাজে যোগ দেয়। ঠিক ওই সময়েই ঘটে দুর্ঘটনা। শিফট পরিবর্তনের সময়ে কাজে গাফিলতি কিংবা দায়িত্বশীল কর্মচারীর অনুপস্থিতি ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্রেফ দুর্ঘটনা নাকি এর পেছনে কোন রহস্য রয়েছে সে প্রশ্নটিও বার বার আসছে। বিসিআইসির চেয়ারম্যান ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সম্ভাব্য সকল কারণ খুঁজে দেখব। তবে এর নেপথ্যে স্পর্শকাতর কিছুও থাকতে পারে। কোন কিছুই উড়িয়ে দেয়া যাবে না। যেহেতু স্থাপনাটিও স্পর্শকাতর সেহেতু তদন্ত শেষে অনুমোদনসাপেক্ষে প্রতিবেদন মিডিয়াকে জানানো হবে। ২৫ বছরের গ্যারান্টি ১০ বছরে শেষ ॥ ডাই এ্যামোনিয়াম ফসফেট প্ল্যান্টটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০১ সালে। এটি উৎপাদনে যায় ২০০৬ সালে। এই প্ল্যান্টে মোট ৩টি এ্যামোনিয়া ট্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে দুই ইউনিটের জন্য দুটি ট্যাংক ছাড়াও রয়েছে একটি মাদার ট্যাংক। প্রথমে তরল এ্যামোনিয়া ঢোকানো হয় মাদার ট্যাংকে। এরপর সেখান থেকে যায় পৃথক দুটি ছোট ট্যাংকে। ছোট ট্যাংক দুটির ধারণ ক্ষমতা ৫শ টন করে মোট ১ হাজার টন। সোমবার রাতে যে ট্যাংকটিতে বিস্ফোরণ ঘটে সেটিতে ছিল প্রায় ৩শ টন তরল এ্যামোনিয়া। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে একটি চীনা কোম্পানি। এ ট্যাংকগুলোর গ্যারান্টি ২৫ বছরের। অথচ, মাত্র দশ বছর না যেতেই একটি ট্যাংক বিস্ফোরিত হল। বিষয়টি কারিগরি ত্রুটি কিংবা দায়িত্বে অবহেলা অথবা নাশকতা যে কোনটি হতে পারে। এ ব্যাপারে বিসিআইসি চেয়ারম্যান ইকবালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট চীনা প্রকৌশলী হিউ জুনকে টেলিফোনে অবহিত করেছি। তিনি তিনটি বিষয় জানতে চেয়েছেন। এ বিষয়গুলো অফিসিয়ালি জানানোর পর তাদের পক্ষ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানানো হবে। ডিএপি কারখানার প্ল্যান্ট দুটির উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি মাসে ৮শ মেট্রিক টন করে ১৬শ মেট্রিক টন। তবে উৎপাদন হয় ৫শ মেট্রিক টন করে। অবশ্য তাও নির্ভর করে গ্যাসের প্রাপ্তি সাপেক্ষে। দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে ডিএপি কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমল কান্তি বড়ুয়া জানান, সেফটি ম্যাজার বলতে যা বোঝায় তার সবই ছিল। ট্যাংকে তরল এ্যামোনিয়া থাকে মাইনাস ৩০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায়। তাপমাত্রা যদি এর থেকে কিছু বেড়ে যায় তাহলে কিছুটা বায়বীয় আকার ধারণ করে। এরসঙ্গে সংযুক্ত থাকে একটি বিশেষায়িত ফ্লেয়ার পাইপ। এই সিস্টেমের কারণে তরল এ্যামোনিয়া বায়বীয় গ্যাসের আকার নিলে তা নির্গত হওয়ার সময় নিজে নিজেই পুড়ে যায়। ফলে বাতাসে মেশার আশঙ্কা থাকে না। এছাড়া সেফটি বাল্বও রয়েছে। কিছু গ্যাস সৃষ্টি হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেরিয়ে যায়। এতে করে গ্যাসের চাপে ট্যাংক ফেটে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে না। সকল ব্যবস্থাই ছিল, তারপরও কেন এ দুর্ঘটনা ঘটল তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। মাছ ও গবাদি পশুর ক্ষতি ॥ কর্ণফুলী নদীর ওপারে সার কারখানার এ্যামোনিয়া ট্যাংক ফেটে বাতাসে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মৎস্য সম্পদ ও গবাদি পশু। ফায়ার সার্ভিসের ছিটানো পানি কর্ণফুলী নদীতে না গিয়ে পড়েছে সংলগ্ন লেকের একটি মৎস্য প্রকল্পে। কারখানা এলাকায় প্রায় ৫ একর আয়তনের এই লেকে ভাসতে দেখা যায় হাজার হাজার মরা মাছ। জাল দিয়ে সেগুলো উঠিয়ে রাখা হচ্ছে তীরে। এ প্রকল্পের প্রায় পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রতীয়মান। প্রকল্পের মালিক আবদুল মাবুদ চৌধুরী মোহন জনকণ্ঠকে জানান, তিনি ইজারা নিয়ে সেখানে মাছ চাষ করেছিলেন। কারখানার ট্যাংকের ছিটানো পানি গড়িয়ে আসায় মাছগুলো মরেছে বলে উল্লেখ করে তিনি জানান, এতে তার অন্তত ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পারকি এলাকায় মারা গেছে কয়েকটি গরু। তন্মধ্যে একটি গরু মারা যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন আনোয়ারার ২নং পারকি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কাইয়ুম। তিনি জানান, গ্যাস আক্রান্ত হয়ে রাত ২টার দিকে গরুটি মারা যায়। এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে ভর্তিরা বিপন্মুক্ত ॥ সোমবার রাতে বাতাসে এ্যামোনিয়া ছড়িয়ে পড়ায় গ্যাস আক্রান্ত হয়ে অসুস্থদের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্র্র্র্তি হন ৫৭ জন। রাতেই সেবা শুশ্রƒষার মাধ্যমে তারা আশঙ্কামুক্ত হন। মঙ্গলবার দুপুরে পাওয়া খবর অনুযায়ী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৮ জন। বাকিরা সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন। যারা রয়েছেন তারাও বিপন্মুক্ত বলে চিকিৎসকরা জানান। তবে চমেক হাসপাতালসহ নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে এখনও অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। চমেক হাসপাতালে চসিক মেয়র ॥ চট্টগ্রামের আনোয়ারায় সিইউএফএল সংলগ্ন ডিএপি সার কারখানার ট্যাংক লিকেজে নিঃসৃত এ্যামোনিয়া গ্যাসে অসুস্থদের দেখতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। মঙ্গলবার সকালে তিনি হাসপাতালের ১৩, ১৪ ও ১৬নং ওয়ার্ড পরিদর্শন করে চিকিৎসাধীন রোগীদের চিকিৎসা ও শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। এ সময় তিনি কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সঙ্গে আক্রান্ত রোগীদের বিষয়ে মতবিনিময় করেন। চসিক জনসংযোগ বিভাগ সূত্রে জানানো হয়, সোমবার রাতে প্ল্যান্ট থেকে গ্যাস নির্গত হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকেই মেয়র আক্রান্তদের উদ্ধার ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার জন্য পৌঁছে দেয়া এবং সুচিকিৎসার বিষয়ে মনিটরিং করেন। চমেক হাসপাতাল পরিদর্শনকালে মেয়রের সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মুজিবুল হক খান, অধ্যাপক ডাঃ এম এ হাসান, অধ্যাপক ডাঃ অশোক দত্ত, বিএমএর সহ-সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মনোয়ারুল হক শামিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাঃ ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য ডাঃ রেজুয়ান রায়হান, প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, কাউন্সিলর জেসমিন পারভীন জেসি, ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হোসেন বাচ্চু, সিটি মেয়রের সহকারী একান্ত সচিব রায়হান ইউসুফ, চসিক জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃ আবদুর রহিম এবং চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগ ও ছাত্র সংসদের নেতৃবৃন্দ।
×