ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

অলিম্পিকের পর্দা নামছে

নয় স্বর্ণপদকে মহাতারকা বোল্ট

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২১ আগস্ট ২০১৬

নয় স্বর্ণপদকে মহাতারকা বোল্ট

যেন নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পণ করেই রিও অলিম্পিকে পা রেখেছিলেন উসাইন বোল্ট। নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়াটাই ছিল তার একমাত্র উদ্দেশ্য। একের পর এক ইতিহাসের জন্ম দিয়ে সেটা করে দেখালেন বিশ্বের দ্রুততম মানব। ১০০ মিটারে পর ২০০ মিটার স্প্রিন্ট আর শনিবার রিলের স্বর্ণপদক, টানা তিনবার অলিম্পিক সোনা জয়ের অনন্য রেকর্ড গড়ে জ্যামাইকার ২৯ বছর বয়সী মহাতারকা ইঙ্গিত দিলেন আর নয়, সময় হয়েছে সরে দাঁড়ানোর। তিন ইভেন্টে টানা ৯ পদক। এতে পূর্ণ হয়ে গেল তার ‘ট্রিপল-ট্রিপল’ জয়ের স্বপ্ন। যেন অবিশ্বাস্য এক কীর্তি। অলিম্পিক গেমসের ১২০ বছরের ইতিহাসে যা এখনও করে দেখাতে পারেননি কেউ। কিন্তু বোল্ট পেরেছেন, যা তাকে বসিয়ে দিয়েছে ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের অবিসংবাদিত কিংবদন্তির আসনে। এর আগে ২০০৮ বেজিং ও ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকের রেকর্ডের সঙ্গে রিওতে রচিত হলো তার আরেক ইতিহাস। এ নিয়ে বিদ্যুত-বোল্টের সোনার মেডেলের সংখ্যা দাঁড়াল ৯টি। প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারাতে নয়, শনিবার বোল্ট দৌড়ালেন আগের টাইমিং টপকে যওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে। কিন্তু তিনটি ইভেন্টের কোনটিতেই নতুন রেকর্ড হয়নি। তাতে কী? আনন্দের তো কমতি নেই। ক্যামেরা তার দিকে তাক করলেই কোমর দোলাচ্ছেন, নাচছেন। কারণ আসল কাজ তো হয়ে গেছে নয়টি স্বর্ণপদক জয়ের মধ্য দিয়ে। আগেরদিনই জানিয়েছিলেন, মোহাম্মদ আলী আর পেলের মতো কিংবদন্তির পাশে আমাকে রাখতে চাই। শনিবার ফের একই উচ্চারণ, মোহাম্মদ আলী আর পেলের মতোই আমাকে স্মরণ রাখবে মানুষ। দৌড়ের পর তার পরিচিত স্টাইলে ট্র্যাকের ওপর দাঁড়ানো, দৌড়ে গিয়ে সমর্থকদের ভিড়ে মিশে যাওয়া, দেদার সেলফি তোলা সবই করলেন ক্যারিয়ারের শেষ অলিম্পিকে নিজের লক্ষ্য পূরণের আনন্দে। তারপর একটু দম নিয়ে জানালেন, এটাই আমার শেষ অলিম্পিক। সবাই যাতে মনে রাখে সেরকম পারফর্ম করে গেলাম রিওতেও। আমিই সেরার সেরা, তিন ইভেন্টে টানা তিনবারের চ্যাম্পিয়ন। এটা নতুন করে আর প্রমাণ করার কিছু নেই। ‘আই এ্যাম দ্য বেস্ট’। ক্যারিয়ারের পুরো সময় পরিশ্রম করেছি নিজেকে সেরা প্রমাণ করতেই। টানা তিন অলিম্পিকে ৯টি গোল্ড মেডেল নিঃসন্দেহে সবাইকে চমকে দেয়ার মতো। ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের মঞ্চে দাঁড়িয়ে অন্য কেউ এতদিন যা করতে পারেনি আমি সেটাই করে দেখিয়েছি। অলিম্পিকে আর খেলব না। কিন্তু ২০১৭ বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপাটায় খেলার ইচ্ছা আছে। এর পরই অন্য জীবনে ফিরে যেতে চাই, যোগ করলেন ৯টি অলিম্পিক স্বর্ণপদকের মালিক। সর্বশেষ রিলের জয়ে সাফল্যের বৃত্ত পূরণের করে নেয়া বোল্ট আরও বললেন, আমাকে অনেকে ভিন গ্রহের মানুষ বলতে শুরু করেছেন। আমি কিন্তু উসাইন বোল্ট নামেই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে চাই। বিরল রেকর্ড আর সাফল্যের পরও আমি আগের মতোই আছি। তবে অর্জনের মধুর একটা তৃপ্তি তো থাকবেই। আমি যে রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ। দেবতা নই। আমার সাফল্যের পেছনে ভক্তদের অনুপ্রেরণা আর সৃষ্টিকর্র্তার আশীর্বাদকেই বড় করে দেখছি। কিন্তু নিজেকে নয়। আবারও বলছি, আমি উসাইন বোল্ট। এ নামেই মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকতে চাই। কে সেরা তিনি না মাইকেল ফেলপস? প্রশ্নের উত্তরটা কৌশলে এড়িয়ে গেলেন বোল্ট। বললেন, সাঁতার আর ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ড আলাদা ইভেন্ট। একটার সঙ্গে আরেকটার কখনও তুলনা টানা যায় না। ফেলপস আসাধারণ, দুর্দান্ত। আমরা দুজনেই নিজেদের মঞ্চে সেরা। যবনিকাপাত হচ্ছে সতেরো দিনের মহামিলনের। আবার দেখা হবে চার বছর পর টোকিওতে। বিশ্বের ২০৬টি দেশ। ৪১ রকমের খেলা। প্রায় সাড়ে ১১ হাজার ক্রীড়াবিদের মিলনমেলার রিও অলিম্পিক গেমসের পর্দা নামছে ব্রাজিল সময় ২১ আগস্ট রাতে। আর বাংলাদেশে পরের দিন ভোরে। আনন্দ-বেদনা আর ইতিহাস গড়া নৈপুণ্য দেখিয়ে খেলোয়াড়রা নিজ নিজ দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরই মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়া বেশিরভাগ ইভেন্টের ক্রীড়া দল ত্যাগ করেছে রিও। তবে গেমসের রোশনাই ছড়ানোর আগেই প্রথম দফায় আউট হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের ১৬ সদস্যের ক্রীড়া দলের প্রায় সবাই রয়ে গেছেন রিওতে। ব্যতিক্রম কেবল গলফার সিদ্দিকুর রহমান। নিজের ইভেন্ট শেষ করে সেদিন রাতেই দেশে ফিরে গেছেন তিনি। তারা জ্বলে, তারা নিভে-অলিম্পিকে আর দেখা যাবে না দুই মহাতারকা যুক্তরাষ্ট্রের মাইকেল ফেলপস ও জ্যামাইকার উসাইন বোল্টকে। অখ্যাত আরও অনেকে আছেন এ তালিকায়। আগামীর তারকা হিসেবে রিওতে সাক্ষী হয়েছেন কয়েকজন। তাদের মধ্যে দ্রুততম মানবী জ্যামাইকার এ্যালেইন টম্পসন ও কানাডার তরুণ স্প্রিন্টার আন্দ্রে ডি গ্রাসেকে মনে রাখবে অলিম্পিক। কিন্তু গেমসের অন্যতম আকর্ষণ সাঁতার আর এ্যাথলেটিক্সের দুই মহাতারকা ফেলপস-বোল্টের জায়গা দখল করার মতো নতুন কেউ উঠে আসেন কিনা আগামীতে সেটাই দেখার। বর্ণিল উদ্বোধনীর মতো সমাপনী অনুষ্ঠানও জমকালো করতে মঞ্চ প্রস্তুত ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে।
×