ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যাটলিনের করুণ বিদায়

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৯ আগস্ট ২০১৬

গ্যাটলিনের করুণ বিদায়

ক্যারিয়ারের শেষ অলিম্পিকস গেমসটা বর্ণময় হলো না জাস্টিন গ্যাটলিনের। বিষাদেরই হয়ে গেল। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে উসাইন বোল্টের সঙ্গে দারুণ লড়াই করে রৌপ্য পেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের এই কৃতী এ্যাথলেট। কিন্তু ২০০ মিটার রেসে ছিটকে গেলেন সেমিফাইনাল থেকে। জ্যামাইকার বোল্ট যখন হাসতে হাসতে ফিনিশিং লাইন স্পর্শ করলেন তখন গ্যাটলিনকে দেখা গেল তিনজনের পেছনে দৌড়াচ্ছেন। টাইমিংটাও প্রত্যাশিত হয়নি। ফলে বাদ পড়ে গেলেন পদকের লড়াই থেকে। রিও অলিম্পিক পার্ক যখন বোল্ট ঝলকে উদ্ভাসিত, তখন গ্যালারির বড় একটা অংশ জুড়ে হতাশার চিত্র। পদকের লড়াইয়ে অন্য সব দেশকে ছাড়িয়ে শীর্ষে যথারীতি যুক্তরাষ্ট্র। এমন সাফল্যের পরও তখন হাজরেরও উপরে দর্শকের মধ্যে সুনসান নীরবতা। সুদূর আমেরিকা থেকে উড়ে আসা গ্যাটলিনভক্তদের করুন আর্তনাদ, বিষাদের কালো মেঘ। ভাবতেই পারেননি কেউ এত বাজেভাবে বিদায় নেবেন তিনি। কার্যত তাই ঘটল। অলিম্পিকের ইতিহাসে ততক্ষণে লেখা হয়ে গেছে করুন বিদায়ের কাহিনী। ১০০ মিটার রেসে সোনার মেডেল জিততে না পারলেও হতাশ হননি গ্যাটলিন। মনের মধ্যে আপসোস থাকলেও সেটা বুঝতে দেননি কাউকে যুক্তরাষ্ট্রকে অতীতে অলিম্পিকসহ অনেক স্বর্ণপদক উপহার দেয়া গ্যাটলিন। হাসতে হাসতেই মিডিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে প্রশংসা করেছিলেন প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী উসাইন বোল্টের। ইতিহাস গড়া ট্রিপল জিতে জ্যামাইকার পতাকা গায়ে জড়িয়ে উসাইন যখন ট্র্যাকের উপর দাঁড়িয়ে তার চিরাচরিত ‘রেইনবো পোজ’ দিচ্ছিলেন যখন তাকে ভিন গ্রহের বাসিন্দা বলে সম্মান জানাতে দ্বিধা করেননি গ্যাটলিন। তবে মনে মনে স্বপ্ন দেখছিলেন বা পণ করেছিলেন ২০০ মিটারে একটা বদলা নেয়ার। কিন্তু সেটা আর হলো কোথায়? বিদায় নিয়ে নিলেন মূল লড়াই, অর্থাৎ ফাইনালের আগেই। ব্রাজিল সময় বৃহস্পতিবার রাতের এই ব্যর্থতা হয় তো তিনি ভুলবেন না কোনদিন। হ্যাঁ, নিজেই সেটা বললেন, বয়স বেড়েছে। সময় ফুরিয়ে গেছে। কাজেই আর নয়। রিওই আমার শেষ অলিম্পিক হয়ে গেল। আগামী টোকিও অলিম্পিকে থাকতে চান দর্শক কাতারে। দুঃখে রক্ত গোলাপ হয়ে উঠা চোখ দুটো ছলছল করছিল। এই বুঝি গড়িয়ে পড়ল পানি। হার-জিতের মধ্যে অতীতে কখনও গ্যাটলিনকে এত হতাশ হতে দেখা যায়নি। বলে রাখা দরকার নিষিদ্ধ ডোপ গ্রহণের দায়ে তাকে কিন্তু দুই দফায় চার বছরের মতো ট্র্যাকের বাইরে থাকতে হয়েছিল। তখন সময় কাটাতেন ফুটবল খেলে। পাশাপাশি ফেরার অনুশীলনও চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ২০০৪ এ্যাথেন্স অলিম্পিকে ১০০ মিটারে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন রেকর্ড গড়ে। বেজিং অলিম্পিকে তার সেই রেকর্ড ভেঙ্গে দেন বোল্ট। ২০০ মিটারে পেয়েছিলেন ব্রোঞ্জ। নিষেধাজ্ঞার বেড়জাল থেকে বেরিয়ে ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে এসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে পেয়েছিলেন ব্রোঞ্জ। আর রিওতে একধাপ এগিয়ে ১০০ মিটারে জেতেন রৌপ্য। ১০০ মিটারে তার সেরা টাইমিং ৯ দশমিক ৭৪ সেকেন্ড, সেটা ২০১৫ দোহা বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে। সেখানেই ২০০ মিটারে সময় নিয়েছিলেন ১৯ দশমিক ৫৭ সেকেন্ড। ক্যারিয়ারের মোট পাঁচ স্বর্ণপদকের মধ্যে এ্যাথেন্সের সঙ্গে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে দুটি ও ওয়ার্ল্ড ইনডোর চ্যাম্পিয়নশিপে দুটি। অলিম্পিক, বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ মিলে তার রৌপ্যের সংখ্যা সাত। এমন সমৃদ্ধ পদকের ভা-ার যার তাকে কিনা রিওতে বিদায় নিতে হলো পদকের লড়াইয়ের আগেবাগে। তবে ডোপ টেস্টে পজেটিভ হওয়ায় লম্ব একটা সময় ট্র্যাকের বাইরে না থাকলে পদকের ঝুলিটা আরও বড় করতে পারতেন গ্যাটিলিন। ইতিহাসে যোগ করতে পারতেন অনেক কিছু। সেটা না হলেও অর্জিত সাফল্যকে ঈর্ষণীয় বললে ভুল হবে না। যদিও সবকিছুকে ছাপিয়ে বিশ্ব এ্যাথলেটিক্সে তিনি একজন ডোপ পাপী, এটাও বলবে লোকে। ডোপে সর্বনাশ না করলে যুক্তরাষ্ট্রের ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের ইতিহাসে অবিসংবাদিত সম্রাট হিসেবে স্থান করে নিতে পারতেন এই কৃষ্ণতারকা। ৩৪ বছর বয়সী গ্যাটলিনের জন্ম ১৯৮২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নিই ইয়র্কের ব্রুকলিনে। উচ্চতা ৬ ফুট এক ইঞ্চি, ওজন ৭৯ কেজি। নিউ ইয়র্কে জন্মগ্রহণ করলেও টেক্সসে তার বর্তমান ঠিকানা। সেখানেই শুরু তার এ্যাথলেটিক্সের ক্যারিয়ার। ঘরোয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নজর কেড়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র্রের আন্তর্জাতিক দলে।
×