ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

২৫ ঝুঁকিপূর্ণ স্কুলে পাঠদান

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৮ আগস্ট ২০১৬

২৫ ঝুঁকিপূর্ণ স্কুলে পাঠদান

সংবাদদাতা, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর, ১৭ আগস্ট ॥ রায়পুরে ঝুঁকিপূর্ণ ২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় অনেকটা বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ এসব স্কুলভবনে পাঠদান চালানো হচ্ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম। অন্যদিকে বিদ্যালয়ের ভবনগুলো জরাজীর্ণ হওয়ায় কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। এ নিয়ে চরম আতঙ্কে রয়েছেন বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক, অভিভাবক ও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলেও কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা। উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় ১২০টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ও এর অবকাঠামো। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব কেরোয়া, নাপিতেরচর, চরপালোয়ান, পূর্ব চরবংশী শেখদুল্লাহ ও পূর্ব চরবংশী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন। এসব ভবন ব্যবহারের অনুপোযোগী হওয়ায় অনেকটা আতঙ্কের মধ্য দিয়েই এখানে পরিচালিত হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ে সরেজমিন দেখা গেছে, জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ভবনগুলোর ছাদ, ভিম ও দেয়াল থেকে খসে পড়েছে পলেস্তারা। বেরিয়ে এসেছে ছাদ ও ভিমে মরীচিকা ধরা রড। সামান্য বৃষ্টিতেই ভবনের ছাদ থেকে চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়ে শ্রেণীকক্ষে। সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব কেরোয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাদের কংক্রিট খসে পড়ে কয়েক শিশু শিক্ষার্থী আহত হয় বলে জানান স্থানীয় এলাকাবাসী। চরপলোয়ান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী ও দক্ষিণ-পূর্ব কেরোয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুর আলম জানান, বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ এসব ভবনে পাঠদান করতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে রায়পুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ফাতেমা ফেরদৌসী জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলোর তালিকা তৈরি করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ এলে বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ ও সংস্কার কাজ করা হবে। নিকলীতে পাঠদান ব্যাহত নিজস্ব সংবাদদাতা কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, জেলার হাওড় অধ্যুষিত নিকলী উপজেলার দামপাড়া কামালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। স্কুলভবনের ছাদ ধসে পড়ে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে ছাত্রছাত্রীসহ অভিভাবক মহল। এছাড়া বৃষ্টি নামলেই ভবনের ছাদ চুইয়ে চুইয়ে ক্লাসরুমে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় জরাজীর্ণ ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরা পাঠদান গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে। বিদ্যালয়ের চার রুমের ভবনের একটিতে অফিস কক্ষ আর তিনটিতে পাঠদান কার্যক্রম চালানো হয়। বিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কোনরকমে সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে স্থানীয় এলাকাবাসীর উদ্যোগে দামপাড়া কামালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ওই ভবনের ছাদের প্লাস্টার ভেঙ্গে পড়েছে। এ ব্যাপারে স্কুল কমিটির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েও কোন কাজ হয়নি। বর্তমানে বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ অনেকটা বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এরশাদ আলী জানান, বিদ্যালয়ে মোট ২০৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিক্ষার্থী ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করতে এসে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারছে না। তাদের মনে সবসময় এক ধরনের ভয়-আশঙ্কা বিরাজ করে। পলাশবাড়ীতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, পলাশবাড়ী উপজেলার পূর্ব কুমারগাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টির জরাজীর্ণ ভবনে চলছে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান। যে কোন মুহূর্তে বিদ্যালয়টির ভবন ধসে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সরেজমিন দেখা গেছে, ১৯৭৮ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। ১৯৯৪ সালে বিদ্যালয়টির তিনটি শ্রেণীকক্ষ ও একটি অফিস কক্ষ নিয়ে বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণ করা হয়, যা এখন শিক্ষার্থীদের জীবনে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিভাবকরা জানান, একটু বৃষ্টি হলেই শ্রেণী কক্ষগুলোর ছাদ চুইয়ে চুইয়ে কক্ষের ভেতর পানি জমে। অথচ বৃষ্টির পানির মধ্যেই ছাত্রছাত্রীদের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কাজ করতে হচ্ছে। অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বিষয়টি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হলেও কোন সুফল পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক রোকেয়া খাতুন জানান, বৃষ্টি এলে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ রাখা হয়। পড়ে ছাত্রছাত্রীদের অফিস কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে বৃষ্টির সময়ে এ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া বিঘ্নিত হয়।
×