ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী সেলিমকে ধরতে ফের ছবি প্রকাশ, পুরস্কার ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৮ আগস্ট ২০১৬

জঙ্গী সেলিমকে ধরতে ফের ছবি প্রকাশ, পুরস্কার ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জঙ্গী সেলিম ওরফে ইকবাল ওরফে মামুন ওরফে হাদী-২ কে পেতে মরিয়া ঢাকা মহানগর পুলিশ। তাকে ধরিয়ে দিতে বুধবার দ্বিতীয় দফায় ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। গত ১৯ মে প্রথম দফায় সেলিমসহ ছয় জঙ্গীকে ধরিয়ে দিতে ১৮ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে ডিএমপি। সেলিমকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। সেলিম ব্লগার ড. অভিজিত রায়, প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন, ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, নাজিম উদ্দিন সামাদ ও সর্বশেষ কলাবাগানে জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু তনয় হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশ জানায়। বুধবার ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, পুরস্কার ঘোষিত জঙ্গী সেলিম নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। বর্তমানে সে আনসার আল ইসলামের হয়ে কাজ করছে। পুরস্কার ঘোষিত জঙ্গী সম্পর্কিত তথ্য ডিএমপির অফিসিয়াল ফেজবুক পেজ (ভধপবনড়ড়শ.পড়স/ ফসঢ়ফযধশধ/), ০১৭১৩৩৭৩১৯৪, ০১৭১৩৩৭৩১৯৮, ০১৭১৩৩৭৩২০৬ এবং ঐবষষড় ঈঞ: মোবাইল এ্যাপসের মাধ্যমে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। ইতোপূর্বে চলতি বছরের ১৯ মে ডিএমপি শরীফ, সেলিম, সিফাত, রাজু, সিহাব ও সাজ্জাদ নামের ছয় জঙ্গীর ছবি প্রকাশ করে ১৮ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে। প্রকাশিত ছয় জনের মধ্যে শরীফ ও সেলিমকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ করে ১০ লাখ আর বাকি চারজনকে ধরিয়ে দিতে ২ লাখ করে ৮ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, পুরস্কার ঘোষিত ছয় জঙ্গীর মধ্যে শিহাব গ্রেফতার হয়ে পরবর্তীতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদ-ে দ-িত করেন। কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর সবোর্চ্চ শাস্তির দাবিতে ওইদিনই শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের সৃষ্টি হয়। সেই মঞ্চে যোগ দেন মুক্তমনা, প্রগতিশীল লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পক্ষের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। যুদ্ধাপরাধীদের বিপক্ষে এত মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ঘটনা ইতিহাসে বিরল। এরপর থেকেই জঙ্গীদের হাতে একের পর এক ব্লগার, মুক্তমনা মানুষ, প্রগতিশীল লেখক ও প্রকাশক খুন হতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক প্রকৌশলী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে (৩৭) ঢাকার পল্লবী থানাধীন পলাশনগরের নিজ বাড়ির সামনেই ছুরিকাঘাতে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। ওই বছরের ৯ মে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা ও ব্লগার আরিফ রায়হান দ্বীপকে দিনের বেলায় আবাসিক হল থেকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে বুয়েটেরই আরেক ছাত্র মেজবাহউদ্দিন। গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় রাত নয়টার দিকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে লেখক, মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক প্রকৌশলী ড. অভিজিত রায়কে হত্যা করে। বাধা দিতে গিয়ে আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। গত বছরের ৩০ মার্চ দিনের বেলায় রাজধানীর রমনা মডেল থানাধীন হাতিরঝিল বেগুনবাড়িতে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গত বছরের ১২ মে সকালে সিলেটের সুবিদবাজারে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে মোটরসাইকেলযোগে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে ও জবাই করে হত্যা করা হয়। গত বছরের ৭ আগস্ট দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর খিলগাঁও থানাধীন পূর্ব গোড়ানে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্লগার নীলাদ্রি চ্যাটার্জী নিলয়কে। সর্বশেষ গত বছরের ৩১ অক্টোবর বিকেল সাড়ে পাঁচটায় রাজধানীর শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফীন দীপনকে (৪০) নিজ অফিসে গলা কেটে হত্যা করা হয়। একই দিন দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ে হামলায় আহত হন প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল (৫০), লেখক এবং ব্লগার প্রকৌশলী তারেক রহিম (৪২) ও রন দীপম বসু (৪০)। সর্বশেষ চলতি বছরের ৬ এপ্রিল রাত নয়টার দিকে রাজধানীর সূত্রাপুর থানাধীন একরামপুর মোড়ে ব্লগার, বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদের সিলেট জেলা শাখার তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, সিলেটে গণজাগরণ আন্দোলনের সংগঠক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ষষ্ঠ ব্যাচের সান্ধ্যকালীন সেশনের শিক্ষার্থী নাজিম উদ্দিন সামাদকে দুইটি মোটরসাইকেলে করে আসা চারজন চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।
×