ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আনুষ্ঠানিক বিদায় বললেন সাঁতারের মহানায়ক ফেলপস

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৫ আগস্ট ২০১৬

আনুষ্ঠানিক বিদায় বললেন সাঁতারের মহানায়ক ফেলপস

বিদায় সাঁতারের অবিসংবাদিত সম্রাট মাইকল ফেলপসের। তবে একটা আক্ষেপ রয়ে গেল। আর সেটা ১০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ের সোনার মেডেল হাতছাড়া। যদিও শেষটা তার সোনার পদক গলায় ঝুলিয়ে। ৪ল্প১০০ মিটার মিডলের জয়টা হয়ে গেল ইতিহাসের অংশ। ক্যারিয়ারের এটাই তার শেষ সোনার পদক, নিজের শেষ অলিম্পিকে রিলের এ জয়ে রিওতে তার সোনার পদকের সংখ্যা পাঁচ। আর একটি সিলভার। এ্যাথেন্স থেকে রিও, পাঁচ অলিম্পিকের ২৩ সোনা। এমন সমৃদ্ধ যার ভা-ার তিনিই তো মহানায়ক। সাঁতারের সম্রাট তাকে ছাড়া আর কাউকে বলার সুযোগ রাখেননি। ব্রাজিল সময় গতকাল মধ্যরাতে রিলের সোনার পদক গলায় ঝুলানোর আগে রিও এ্যাকুয়টিক সেন্টারে তখনও আমেরিকানদের উৎসবের রেশ কাটেনি। নাম ধরে চিৎকার আর মুহুর্মুহু করতালি চলছেই। হাত নেড়ে ভক্তদের ভালবাসা, অভিনন্দনের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন মাইকেল ফেলপস। কিন্তু মনে হচ্ছিল হাসির মধ্যে যেন লুকিয়ে আছে একটা যন্ত্রণা। আর সেটা যে সিঙ্গাপুরের ২১ বছর বয়সী যুবকের কাছে ১০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে পদক হাত ছাড়া তাতে কোন সন্দেহ নেই। যদিও মিডিয়ার কাছে বিষয়টা হাল্কাভাবে প্রকাশের চেষ্টা করলেন, নিজের অনুভূতি প্রকাশের মধ্যেই সেটা পরিষ্কার। ফেলপস বলছিলেন, আমি যেভাবে ক্যারিয়ারের শেষটা চেয়েছিলাম সেভাবেই শেষ করতে পেরেছি। যোসেফের কাছে হারটা সত্যিকার অর্থে কিছুটা কষ্টের। কিন্তু তারপরও আমি সফল। রিওতে পাঁচটি সোনার মেডেল আমার মতো আরও কেউ জিতেনি। আমাকে মানুষ সর্বকালের সেরা যে উপাধি দিয়েছে, সেটা আরেকবার প্রমাণ করে দিলাম রিও অলিম্পিকে। বয়স বেড়েছে, আর কত। আমি চাই নতুন কেউ আমার মতো উঠে আসুক। প্রশ্নের উত্তরে ফেলস বেশ জোর দিয়ে বলছিলেন, একটি সোনা হাত ছাড়া হয়েছে তাতে কী? কিংবদন্তিরাও যে হারের মুখ দেখেন এটা নতুন কোন ঘটনা নয়। আমি তো রক্ত মাংসে গড়া মানুষ। জাদুকর নই, যে নামব আর মন্ত্র বলে সব জিতে নেব। জীবন চলার পথে কোথাও না কোথাও ধাক্কা খেতে হয়। আমিও খেয়েছি। এটা কোন বিষয় নয়। খেলাধুলায় হার জিত থাকবেই। সারা জীবন তো আর কেউ এক তরফা রাজত্ব করতে পারে না। যোশেফ স্কুলিং আমার দারুণ এক ভক্ত। আমেরিকায় ওর সঙ্গে আমার মুখোমুখি কথাও হয়েছে। দারুণ প্রতিভাবান। ওর যে মেধা, দক্ষতা তাতে অনেক বড় সাঁতারু কাতারে চলে আসবে দ্রুতই। আগামী চার বছরে নিজেকে আরও পরিণত করে দেখবেন পরবর্তী টোকিও অলিম্পিকে সে বিশ্বকে চমকে দেবে। ফেলপসকে নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই আলোচনার ঢেউ। কোথায় থামবেন তিনি? ‘দ্য গ্রেটেস্টে শো আর্থ’-এর বড় মঞ্চেটা আরও কতটা স্ফীত করে তুলবেন সোনার ঝাঁপিতে? এমনই সব প্রশ্ন এবং সীমাহীন জল্পনার বাস্তব রূপটাই দেখিয়ে দিলেন ফেলপস ক্যারিয়ারের শেষ সোনার পদকটি কুড়িয়ে নিয়ে। যদিও এক গ-া সোনার পদক গলায় ঝোলানোর পর মনে করা হচ্ছিল শুক্রবার রাতের ১০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ের সোনাটাও পুলে নামার আগেই ফেলপসের নামেই লেখা হয়ে রয়েছে। জলে নামার পর অবশ্য ক্রমশই স্পষ্ট হতে শুরু করল অন্য এক ছবি। যে ছবিতে অন্য এক দ্যুতি। ২১ বছরের কোন এক অখ্যাত যোসেফ স্কুলিং তিনিই কিনা হয়ে পড়লেন এই রাতের ইন্দ্রপতনের নায়ক। যা ভাবতেই পারেননি তাবৎ বিশ্বের সাঁতারপ্রেমী মানুষ। জল্পনা-কল্পনার ঢেউ থামিয়ে দিল ফেলপসের ছক্কা সোনা ঠেকিয়ে স্কুলিং। রিও গেমসে সাঁতারের ছয় ইভেন্টে জলে নেমে মোট পাঁচি স্বর্ণপদক। চলতি রিও গেমসে একটি সোনার পদক জিততে ব্যর্থ হলেও সে দিরে রুপাসহ ফেলপসের অলিম্পিক পদক সংখ্যা বাড়িয়ে আটাশে তুলে নিয়ে গেল গতকালের রিলেসহ। চার বছর পর টোকিও অলিম্পিকের পুলেও কী দেখা যাবে? এই প্রশ্ন উঠতেই আমেরিকার কিংবদন্তি অবশ্য সাফ জানিয়ে দিলেন, একেবারেই না। ফেলসের কথায়, আজই পদকের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলে দিচ্ছি এ বিষয়ে আমাকে আর প্রশ্ন না করাই শ্রেয়। আমি আর পুলে নামছি না বিশ্ববাসীকে সেটাই জানিয়ে দিলাম ক্যারিয়ারের এটাই আমার শেষ পদকের মঞ্চে দাঁড়ানে। অনেক হয়েছে। আগামী চার বছর আর টানতে পারব না। ২৪ বছর সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাটিয়ে দেয়ার পর আমি সন্তুষ্ট, যেভাবে শেষ করতে চেয়েছিলাম সেভাবে পেরেছি। আমার অবসের সিদ্ধান্ত একেবারেই চূড়ান্ত। এবার নিকোল (বান্ধবী) ও বুমারের (পুত্র) সঙ্গে অনেকটা সময় কাটাতে চাইছি। টোকিওয় থাকব, সাঁতারের পুলে নয়। একজন দর্শক হিসেবে। প্রসঙ্গত, গত লন্ডন অলিম্পিক শেষে অবসর ঘোষণা করেছিলেন ফেলপস। অবসর সময় কাটছিল ভিডিও গেমস দেখে, আর গলফ কোর্সে সময় কাটিয়ে, বার্গার খেয়ে, স্টেডিয়ামে বসে আমেরিকান ফুটবল দেখে। তার অবসর জীবন ভালই কাটিছিল। শুধু একটা কাঁটাই তাকে যন্ত্রণা দিচ্ছিল। একটা জিনিসই তিনি ভুলতে পারছিলেন না। লন্ডন অলিম্পিকে নিজের স্প্যাশাল ইভেন্ট ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে সোনার মেডেল হাত ছাড়া হওয়ার রাত। প্রতিদিনই ভাবতেন যে ইভেন্টে তিনি অপ্রতিরোধ্য, কী করে তাকে টেক্কা দিয়ে গেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাঁতারু লে ক্লস। আঠারো সোনার পদক জিতেও চ্যাম্পিয়নের অঙ্কে যা আঘাত করত। সেই আঘাতই তাকে ফিরিয়ে আনল রিও অলিম্পিকে। আর আবার তিনি প্রমাণ করে দিলেন সাঁতারের পুলে একচ্ছত্র সম্রাট কে? প্রশ্নের উত্তরও দিয়ে দিলেন এই গ্রহের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদের নাম মাইকেল ফেলপস। রিওতেও সাঁতারের শীর্ষ আসনটায় বসে ফেলপস বলছিলেন, নিজেকে এক নম্বরে দেখতে পারার অনুভূতি নতুন করে জনানোর আর কোন অবকাশ নেই। একই কথা বার বার বলতে আমার ভাল লাগে না। ] ফেলপসের অলিম্পক পদক সংখ্যা দাঁড়াল ২৮। এরমধ্যে সোন ২৩টি। রিওর পুলে পাঁচ সোনার পদক হচ্ছে ৪ল্প১০০ মিটার রিলে, ২০০ মিটার বাটারফ্লাই, ২০০ মিটার ইনডিভিজ্যুাল মিডলে, ৪ল্প২০০ মিটার ফ্রি স্টাইল, ৪ল্প১০০ মিটার মিডলে রিলে। আর ১০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে রৌপ্য। সুবিন্যস্ত এই ইতিহাস আগামীতে কে গড়বে বা ভাঙবে? এই প্রশ্ন্ই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে, ফেলপসের আনুষ্ঠানিক অবসরের পর। ফেলপসের অলিম্পিক পদক ২০০৪ এথেন্স অলিম্পিক ইভেন্ট পদক ১০০ মিটার বাটারফ্লাই স্বর্ণ ২০০ মিটার বাটারফ্লাই স্বর্ণ ২০০ মিটার মিডলে স্বর্ণ ৪০০ মিটার মিডলে স্বর্ণ ৪দ্ধ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইল স্বর্ণ ৪দ্ধ১০০ মিটার মিডলে স্বর্ণ ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইল ব্রোঞ্জ ৪দ্ধ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল ব্রোঞ্জ ২০০৮ বেজিং অলিম্পিক ইভেন্ট পদক ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইল স্বর্ণ ১০০ মিটার বাটারফ্লাই স্বর্ণ ২০০ মিটার বাটারফ্লাই স্বর্ণ ২০০ মিটার মিডলে স্বর্ণ ৪০০ মিটার মিডলে স্বর্ণ ৪দ্ধ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল স্বর্ণ ৪দ্ধ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইল স্বর্ণ ৪দ্ধ১০০ মিটার মিডলে স্বর্ণ ২০১২ লন্ডন অলিম্পিক ইভেন্ট পদক ১০০ মিটার বাটারফ্লাই স্বর্ণ ২০০ মিটার মিডলে স্বর্ণ ৪দ্ধ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইল স্বর্ণ ৪দ্ধ১০০ মিটার মিডলে স্বর্ণ ২০০ মিটার বাটারফ্লাই রৌপ্য ৪দ্ধ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল রৌপ্য ২০১৬ রিও অলিম্পিক ইভেন্ট পদক ২০০ মিটার বাটারফ্লাই স্বর্ণ ২০০ মিটার মিডলে স্বর্ণ ৪দ্ধ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল স্বর্ণ ৪দ্ধ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইল স্বর্ণ ৪দ্ধ১০০ মিটার মিডলে স্বর্ণ ১০০ মিটার বাটারফ্লাই রৌপ্য ** স্বর্ণ ২৩, রৌপ্য ৩ ও ব্রোঞ্জপদক ২টি মোট অলিম্পিক পদক ২৮।
×