ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তিনির্ভর দেশ গড়ার স্বপ্ন বিতার্কিকদের

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ১৪ আগস্ট ২০১৬

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তিনির্ভর দেশ গড়ার স্বপ্ন বিতার্কিকদের

শ্রাবণ আকাশে ঘন কালো মেঘ। চারপাশে মৃদু শীতল হাওয়া বইছে। মাঝে মাঝে ঝিরঝির বৃষ্টি আবার ভারি বৃষ্টি। দুপুর গড়িয়ে বিকেলের শুরু। চারপাশে শূন্যতা চিরচেনা শোরগোলের। সময়টা যে ঘড়ির কাঁটায় বিকেল ৪টা । সবার যখন ক্লাস শেষে রুমে একটু বিশ্রাম নেয়ার প্রয়াস। ঠিক সে সময়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর পথচলা লুকোচুরি বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে। গন্তব্যস্থল শহীদুল্লাহ কলা ভবনে। বৃষ্টিকে সঙ্গী করেই পৌঁছাল তারা। সেখানে দেখা মিলে একঝাঁক উদ্যমী আর বুদ্ধিদীপ্ত তরুণ-তরুণীর। সবাই ব্যস্ত যুক্তির আল্পনায় প্রগতির মহাকাল আঁকার। বলছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক সংগঠন গ্রুপ অব লিবারেল ডিবেটরস গোল্ড বাংলাদেশের বিতার্কিকদের কথা। সংগঠনটি এক দশক ধরে আগলে রেখেছে তার প্রশস্ত বুক আর উন্মুক্ত দুয়ার। যেখানে বিচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত তরুণ-তরুণীর। যারা প্রতিনিয়ত বির্তক শিল্প চর্চার সঙ্গে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ বাদে বিতর্কের মঞ্চে বিচারকসহ বিতার্কিকদের আরোহণ। শুরু হয় সুগভীর বিশ্লেষণ আর যৌক্তিক তথ্য উপস্থাপনে বিতর্ক অধিবেশন। শব্দযুদ্ধের অধিবেশন শেষে কথা হয় বৃষ্টিকে আলিঙ্গন করে বিতর্কে অংশ নেয়া সৈকত আবদুর রহিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, নিজেকে একজন বিশ্বমানের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এ বিতর্ক আর সংগঠনকে আপন করে চলা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম বর্ষ থেকে যুক্ত এ বিতর্ক সংগঠনটির সঙ্গে। তিনি যুক্ত করলেন, নিজের মেধা মনন আর চেতনার পরিধিকে সম্দ্ধৃ করতে এ বিতর্ক চর্চা। সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তানিয়াহ্ মাহমুদা তিন্নি। এবার কথা হয় তার সঙ্গে বিতর্ক আর সংগঠন সম্পর্কে। তিনি বলেন, প্রায় এক যুগের কাছাকাছি আজ সংগঠনটি। শুরুতে গোল্ড নামে পথচলা হলেও স্বপ্নটা আরও বড় হয় সংগঠকদের। স্বতন্ত্র একটি জাতীয় বিতর্ক সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে পরবর্তীতে ‘গোল্ড বাংলাদেশ’ নামকরণ। আজ সময়ের পরিক্রমায় গোল্ড বাংলাদেশ পরিণত। তিন্নি আরও বলেন, বিতর্ক শুধু শিল্প নয়, সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনও। যুক্তি তর্কের মাধ্যমে সত্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলন বিতর্ক। অগ্রজদের দেখানো পথেই যুক্তিবাদী, দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিক তরুণ প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মামুন আঃ কাইউম বর্তমানে সংগঠনটির মডারেটরের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলছিলেন, গোল্ড বাংলাদেশ মুক্তবুদ্ধি চর্চায় যুক্তির মাধ্যমে নিজে শাণিত হচ্ছে সঙ্গে অন্যকেও শাণিত করছে। শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ও তরুণ সমাজকে আলোকিত করতে সংগঠনটি কাজ করে। বিতার্কিক সংগঠক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. রবিউল ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবন থেকে অধ্যাপনা জীবন পর্যন্ত যুক্ত আছেন একজন একনিষ্ঠ শুভাকাঙ্খী হিসেবে। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, বিতর্ক শুধু শিল্প বা আন্দোলন নয়। বিতর্ক সমাজ বদলের হাতিয়ার। সমাজ সংস্কারের অন্যতম নিয়ামক। শুধু সংগঠনগুলো নয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সকল বিভাগে বিতর্ক চর্চার পরিবেশ তৈরি করা হোক। তবেই এ সমাজ, জাতি হবে যুক্তিনির্ভর ও মেধাবৃত্তিক। সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ৫০ জন। সংগঠনটি বিতর্ক চর্চার আন্দোলনকে সমুন্নত রাখতে নিয়মিত আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়, আন্তঃহল, আন্তঃক্লাব বিতর্ক, পহেলা বৈশাখ ছাত্র-শিক্ষক রম্য বিতর্ক, নতুন বিতার্কিকদের জন্য ডিবেটরস্ হ্যান্ট ও কর্মশালা, ভাষা ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, ক্যারিয়ার নিয়ে পরামর্শসভা, পরিবেশ সচেতনতা, সুশাসন ও জলবায়ু পরিবর্তন, ইভটিজিং ও মাদকবিরোধী বিষয়ক বিতর্ক ও আলোচনা সভা, লিঙ্গবৈষম্য রোধসহ বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সংগঠনটি। বিতার্কিকদের প্রত্যাশা আগামীর দেশ, সমাজ ও জাতি হবে যুক্তিনির্ভর সাম্যের ও সত্যের। আলী ইউনুস হৃদয়
×