ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

কমিটিতে প্রত্যাশিত পদ দেবেন

ক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাদের শান্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন খালেদা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৪ আগস্ট ২০১৬

ক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাদের শান্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন খালেদা

শরীফুল ইসলাম ॥ পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া ক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাদের শান্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যেই তিনি ক’জন নেতার সঙ্গে ‘ওয়ান টু ওয়ান’ কথা বলেছেন। আরও ক’জন নেতার সঙ্গে তিনি আজকালের মধ্যেই কথা বলবেন। এর পর তিনি নির্বাহী কমিটিতে রদবদল করে ক’জন নেতাকে পদোন্নতি দিয়ে প্রত্যাশিত পদে এবং বঞ্চিতদের নির্বাহী কমিটিতে স্থান দেবেন। এজন্য কমিটির আকারও বাড়ানো হচ্ছে। জানা যায়, বিএনপির ৫৯১ সদস্যের নির্বাহী কমিটির পরিধি বাড়ানো ছাড়াও বেশ ক’টি উপ-কমিটি এবং ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি করা হবে দ্রুত সময়ের মধ্যে। এসব কমিটিতে বেশ ক’জন নেতাকে স্থান দেয়া হবে। তবে যারা মিডিয়ার সঙ্গে ক্ষোভের কথা প্রকাশ করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছেন তাদের বিষয়ে খালেদা জিয়া কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। এজন্য একটি প্রস্তাব তৈরি করতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দায়িত্ব দিয়েছেন খালেদা জিয়া। সূত্রমতে, ইতোমধ্যে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে পদোন্নতি না হওয়ায় নিজের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব) হাফিজ। তবে খালেদা জিয়া তাকে সাস্ত¡না দিয়ে বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া তিনি অপর ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও শাহ মোয়াজ্জেমসহ ক’জন নেতার সঙ্গে কথা বলে সান্ত¡না দিয়েছেন এবং অচিরেই আরও ক’জন নেতার সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, এতবড় একটি রাজনৈতিক দলের হাজার হাজার নেতার মধ্যে বাছাই করে নির্বাহী কমিটি গঠন করা সত্যিই কঠিন। তবে ভাল পদ প্রত্যাশী ও পদবঞ্চিত নেতাদের মধ্যে যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে তা এক সময় নিরসন হয়ে যাবে। তবে তাদের দ্রুত হতাশা কাটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কমিটিতে পদের রদবদল ও প্রয়োজনে পদের সংখ্যা বাড়িয়ে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। নিশ্চয়ই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের একটি পথ বের করবেন। বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণার পর প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে যেসব নেতা বিভিন্নভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেনÑ ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সাদেক হোসেন খোকা, শাহ মোয়াজ্জেম, এম মোরশেদ খান, এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য আমানউল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, গোলাম আকবর খন্দকার, মিজানুর রহমান মিনু, মশিউর রহমান, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এহসানুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক জাকারিয়া তাহের সুমন, সদস্য নাজিমউদ্দিন আলম, ডাঃ মাজহারুল ইসলাম দোলন, নাদিম মোস্তফাসহ আরও অনেকে। জাতীয় কাউন্সিলের সাড়ে চার মাস পর ৬ আগস্ট বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অনুমোদিত দলের ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটি, ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কাউন্সিল ও ৫০২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করেন। কমিটি ঘোষণার পরপরই ভাইস চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালু এবং সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে আরও ক’জন নেতা বিএনপি থেকে পদত্যাগ করবেন এমন গুঞ্জন আগেই ছিল। এরই অংশ হিসেবে বিতর্কিত লোকদের স্থায়ী কমিটি ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্থান দেয়ার অভিযোগ তুলে ১০ আগস্ট পদত্যাগ করেন বিএনপির সদ্য ঘোষিত কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ‘ইকোনো কামাল’ হিসেবে পরিচিত জিকিউ গ্রুপের মালিক মাগুরার কাজী সালিমুল হক কামাল। আর নির্বাহী কমিটিতে পদ না পেয়ে সর্বশেষ ১১ আগস্ট রংপুর জেলার সহ-সভাপতি ও বদরগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য পরিতোষ চক্রবর্তী দল থেকে পদত্যাগ করেন। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দলের নতুন কমিটিতে পদবঞ্চিত নেতাদের ধৈয্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, একাধিক পদে একই ব্যক্তি আছে এমন পদের পুনর্বিন্যাস হবে। সেখানে পদবঞ্চিতদের জায়গা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এখানে সবাইকে একসঙ্গে সম্মানজনক পদ দেয়া সম্ভব নয়। অপর এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় যারা মান্নান ভূঁইয়ার পেছনে ঘুরঘুর করেছেন এবং খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে গালিগালাজ করেছেন তাদের অনেকে নতুন কমিটিতে পদ পেয়েছেন। তবে কমিটিতে বাদ পড়া নেতাকর্মীদের ধৈয্য ধরতে হবে। যারা বাদ পড়েছেন সময়ের তাগিদে ষড়যন্ত্রকারীদের বাদ দিয়ে তাদের কমিটিতে স্থান দিতে হবে। জানা যায়, বিএনপির আগের কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে থাকা ক’জন নেতা নতুন কমিটিতে স্থায়ী কমিটির সদস্যপদ প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদ থেকে একজন এবং যুগ্ম-মহাসচিব পদ থেকে একজনকে স্থায়ী কমিটিতে স্থান দেয়া হলেও ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে কাউকে স্থায়ী কমিটিতে পদোন্নতি দেয়া হয়নি। এছাড়া নতুন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ আশা করেছিলেন এক সময় ছাত্রদল করে বিএনপিতে এসে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথ কাঁপানো ক’জন নেতা। কিন্তু কমিটি দেখার পর তারা হতাশ হন। নিজের ক্ষোভ ও হতাশার কথা ভাগাভাগির জন্য তারা ইতোমধ্যেই একে অপরের সঙ্গে কথা বলেছেন। কেউ কেউ দল থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার কথাও পরস্পরকে জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে তাদের মধ্য থেকে ক’জনের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার যোগাযোগ হয়েছে এবং তাদের বিষয়টি দেখা হবে বলেও আশ্বাস দেয়া হয়েছে। তাই তারা এখন খালেদা জিয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি শেষ পর্যন্ত কী করেন। এদিকে বিএনপির পদবঞ্চিত কিছু নেতা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ সিনিয়র নেতাদের ঠিকানায় চিঠি পোস্ট করে বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের অবস্থান জানাচ্ছেন।
×