ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত স্থাপনায় নাশকতা করলে দশ বছর জেল ১০ কোটি টাকা জরিমানা

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৯ আগস্ট ২০১৬

বিদ্যুত স্থাপনায় নাশকতা করলে দশ বছর জেল ১০ কোটি টাকা জরিমানা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিদ্যুত স্থাপনায় নাশকতা করলে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদ- এবং ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রেখে নতুন বিদ্যুত আইন করার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ট্রেড ইউনিয়নের বিধান রেখে ‘বিদ্যুতআইন-২০১৬’ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া বৈঠকে নতুন কমিটি নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমান বিএনপির রাজনীতিতে আসলে ভাল হবে। অন্তত শিক্ষিত লোকতো আসবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমান বিএনপির রাজনীতিতে এলে ভাল হবে। ষষ্ঠ কাউন্সিল শেষে বিএনপির সদ্য গঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে দুটি পদ খালি থাকা প্রসঙ্গে এক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেছেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিসভার নির্ধারিত এজেন্ডা শেষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আলোচনার সূত্রপাত করেন। তখন মন্ত্রিসভার ওপর এক সদস্য মন্তব্য করেন যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে যে দুটি পদ খালি রাখা হয়েছে সেখানে খালেদা জিয়ার দুই পুত্রবধূকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে তিনি শুনেছেন। মন্ত্রিসভায় উপস্থিত সূত্র জানান, এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জোবায়দা রাজনীতিতে এলে তো ভাল। অন্তত একজন শিক্ষিত মানুষ আসবে। ওর পরিবারের ঐতিহ্যও ভাল। শিক্ষিত মানুষ রাজনীতিতে এলে রাজনীতির জন্য ভালই হবে। সূত্র আরও জানান, এ সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে (জুবায়দা) তো আবার আপনার আত্মীয় হয়। তখন খন্দকার মোশাররফ হোসেন সম্মতি জানিয়ে বলেন, হ্যাঁ ও (জোবায়দা) আমার চাচার শালীর মেয়ে। সে হিসেবে আমার খালাতো বোন। এছাড়া বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ২১ আগস্ট বোমা হামলার আসামি রাখাসহ কমিটির আকার নিয়েও মন্ত্রিসভার কোন কোন সদস্য টিপ্পনি কেটেছেন। মন্ত্রিসভার অনির্ধারিত আলোচনায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় উচ্ছেদ অভিযানের বিষয়ে গণপূর্তমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সূত্র জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বড় সড়কের পাশে প্রয়োজনে বাণিজ্যিক সুবিধা থাকতে পারে। কিন্তু কোন আবাসিক এলাকায় যেন বাণিজ্যিক সুবিধা দেয়া না হয়। সূত্র জানায়, বিদ্যুত আইনের খসড়ার ৬৯ ধারায় বলা হয়েছিল, তারা ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারবে না। এই বিধানটি বাদ দিয়ে আইনটির অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইটি উত্থাপন করা হলে প্রথম প্রতিবাদ জানান, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন ছিল না বলে আইএলওসহ বিভিন্ন স্থানে আমাদের নানা রকমের প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হতে হয়েছে। এক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন বন্ধ করা হলে আবারও নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, এ ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন বন্ধ হলে, বহির্বিশ্বে ভুল বার্তা যাবে। ইউপিজেডের ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে আইএলওসহ বিভিন্ন স্থানে প্রশ্ন করে। এটি করলে প্রতিবন্ধকতা বাড়বে। শাজাহান খান বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ দিতে হবে। পরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন থাকবে। এটি রেখেই আইনটি করতে হবে। তখন বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইউনিয়ন অনেক ঝামেলা করে। তাছাড়া এরা তো শ্রমিক নয়। তাই এদের ট্রেড ইউনিয়ন বন্ধ করা ভাল। প্রধানমন্ত্রী তখন বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন থাকতে হবে। না হলে কোন প্রয়োজনে কার সঙ্গে কথা বলবে। তাদের সঙ্গে কথা বলে সব সমস্যা নিরসন করতে হবে। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্যুত স্থাপনায় অনিষ্ট সাধনের জন্য কেউ বিদ্যুত কেন্দ্র বিদ্যুত উপকেন্দ্র, বিদ্যুত লাইন, খুঁটি বা অন্য যন্ত্রপাতি নাশকতার মাধ্যমে ভেঙ্গে ফেললে বা ধ্বংস করলে অনধিক সাত থেকে দশ বছরের কারাদ- এবং ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদ-ে দ-িত হবেন। এর আগে বিদ্যুত কেন্দ্রে নাশকতার ঘটনাগুলো এ আইনের আওতায় আসবে কি না সে বিষয়ে আইনে কিছু বলা হয়নি জানিয়ে শফিউল বলেন, আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ইংরেজীতে করা আইনগুলোকে বাংলায় করার বিধান রয়েছে। সেই আলোকে ১৯১০ সালের বিদ্যুত আইনকে হালনাগাদ করে নতুন এ আইন করা হচ্ছে। ১৯১০ সালে বিদ্যুত যে অবস্থায় ছিল ২০১৬ সালে এসে সেই অবস্থায় নেই। মূল আইনকে ভিত্তি ধরেই এ আইন করা হয়েছে। আগের আইনের কলেবর বাড়ানো হয়েছে। কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে, কিছু বিষয় বাদও দেয়া হয়েছে। নতুন আইনে প্রধান বিদ্যুত পরিদর্শকের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে শফিউল বলেন, বিদ্যুত সংযোগ দেয়া-নেয়ার বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত করতে এই পদ সৃষ্টি করা হবে। সারাদেশের বিদ্যুত ব্যবস্থা সমন্বিত আকারে পরিচালনায় সরকার ইনডিপেনডেন্ট সিস্টেম অপারেটর (আইএসও) প্রতিষ্ঠা করবে। সারাদেশের বিদ্যুত ব্যবস্থা এর আওতায় আসবে। এ অপারেটর বিদ্যুত সঞ্চালন প্রবাহ তদারকি, শিডিউলিং ও লোড সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করবে। বিদ্যুত চুরি চিহ্নিত করা, বিদ্যুত চুরি প্রতিরোধ ও অপচয় বন্ধে বিভিন্ন এজেন্সির সমন্বয়ে সরকার বিদ্যুত গোয়েন্দা সেলও গঠন করতে পারবে এ আইন পাস হলে। খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোন ব্যক্তি বিদ্যুত উৎপাদন, সঞ্চালন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভূমির সঙ্গে সংযুক্ত (আর্থিং) করতে পারবে না। অবৈধভাবে কেউ বিদ্যুত ব্যবহার করলে তিনি বিদ্যুত চুরি করেছেন বলে গণ্য হবে জানিয়ে শফিউল বলেন, এজন্য অনধিক তিন বছর কারাদ- অথবা চুরি করা বিদ্যুতের মূল্যের দ্বিগুণ অথবা ৫০ হাজার টাকা (যা পরিমাণে বেশি হয়) জরিমানা করা হবে। আগের আইনে এ অপরাধের সাজা ছিল এক থেকে তিন বছরের জেল এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা। শিল্প বা বাণিজ্যিক কাজে অবৈধভাবে বিদু্যুত ব্যবহারের শাস্তি দ্বিগুণ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নতুন আইনে এই অপরাধের জন্য পাঁচ বছরের কারাদ- বা চুরি করা বিদ্যুতের মূল্যের দ্বিগুণ বা এক লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। পুরনো আইনে বিদ্যুত লাইন চুরির জন্য পাঁচ বছরের জেল ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। তা বাড়িয়ে দুই থেকে পাঁচ বছরের কারাদ- বা ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব রাখা হয়েছে খসড়ায়। বিদ্যুতের অনুচিত ব্যবহারের জন্য অনধিক তিন বছর জেল অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ- দেয়া যাবে নতুন আইন পাস হলে। শফিউল বলেন, নিজের বৈধ মিটার থেকে লিখিত অনুমোদন ছাড়া কাউকে বিদ্যুত সংযোগ দিলে নতুন আইনে তাকে অনধিক দুই বছর সাজা বা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদ- বা উভয় দ- দেয়া যাবে। যিনি ওই অবৈধ সংযোগ নেবেন, তিনিও ওই শাস্তির আওতায় পড়বেন। এ অপরাধের জন্য আগের আইনে তিন বছরের জেল এবং ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যেত।
×