ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শঙ্কা কাটিয়ে খেলায় মেতে উঠেছে রিও ॥ দর্শক ভিড়ে প্রাণবন্ত ভেন্যু

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৮ আগস্ট ২০১৬

শঙ্কা কাটিয়ে খেলায় মেতে উঠেছে রিও ॥ দর্শক ভিড়ে প্রাণবন্ত ভেন্যু

বর্ণিল উদ্বোধনীর রং বিলীন হতে না হতেই খেলায় মেতে উঠেছে গোটা রিও ডি জেনিরো। অথচ গেমস শুরুর দুই দিন আগেও শঙ্কায় ছিলেন আয়োজকরা। দর্শক মিলবে তো? একমাত্র কোপা কাভানা বিচ ব্যতীতে বিদেশীদের আনাগোনা কম ছিল শহরের রাস্তাঘাটে। স্বল্প বসনার বিকিনি খ্যাত সুন্দরীদের ভিড় সারা বছরই আকর্ষণীয় করে রাখে আটলান্টিক মহাসাগরের এই সৈকত। এর বাইরে চোখে পড়ার মতো বিদেশীর সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। সঙ্গত কারণে গেমসের দর্শক নিয়ে একটা শঙ্কা ভর করে। কিন্তু না, উদ্বোধনীর দিন থেকেই হঠাৎ পাল্টে গেছে চিত্র। নয়নাভিরাম উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগ করতে মারাকানা স্টেডিয়ামের অর্ধেকই ছিল বিদেশীদের দখলে। ৪১ রকমের খেলার জন্য নির্মিত প্রায় সব ভেন্যুতে আশানুরূপ দর্শক। বিদেশী আর স্থানীয়দের দখলে গ্যালারি। এ যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস। জিকা ভাইরাস, আইএস হামলার হুমকিসহ নানা আতঙ্কে গেমস শুরুর অগেরদিন পর্যন্ত বিদেশী দর্শক-পর্যটকের সমাগম ঘটেনি নির্ধারিত সময়ে। সম্ভবত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্যই বিমানের টিকেট কাটতে দেরি করেন বিদেশীরা। ফলে দর্শক খড়ার আশঙ্কাটা বড় করে দেয় আয়োজকদের সামনে। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা রিও যে পুরোপুরি নিরাপদ প্রমাণ পাওয়া গেল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটায়। হয়ত কিছু ঘটলে উদ্বোধনীরই পরই গা ঢাকা দিতেন বা ফিরে যেতেন খেলা দেশতে আসা বিদেশী দর্শক। কিন্তু সফল উদ্বোধনীর পর ফিরে এসেছে তাদের মধ্যেও স্বস্তি। আর এ কারণে দল বেঁধে সবাই খোশ মেজাজে মেতে উঠেছেন খেলায়। গেমসের ১৬ ভেন্যুর নয়টিই অলিম্পক পার্ক লাগোয়া। সঙ্গত কারণে এখানেই সবচেয়ে বেশি ভিড়। বিক্ষোভ-আন্দোলন বাদ দিয়ে বিদেশীদের সঙ্গে খেলা উপভোগে মেতে উঠেছেন স্থানীয়রাও। সবচেয়ে বেশি দর্শকের সমাগম ছিল গেমসের অন্যতম প্রতিযোগিতা সাঁতারে। এ্যাকুয়াটিক সেন্টারের গ্যালারি বর্ণিল করে তোলা বেশিরভাগ দর্শকের হাতে নিজ নিজ দেশের পতাকা। জাতীয় পতাকা নেড়ে উৎসাহ, অনুপ্রেরণা দিচ্ছিলেন তাদের প্রিয় প্রতিযোগীদের। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও গ্রেট ব্রিটেন থেকে ২০১৬ অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছে সবচেয়ে বড় দল। আর স্বাগতিক ব্রাজিলের প্রতিদ্বন্দ্বীও কম নয়। দক্ষিণ আমেরিকায় প্রথম অলিম্পিক। ফলে এখানকার দেশগুলো থেকেও অংশ নিচ্ছেন বিপুলসংখ্যক ক্রীড়াবিদ। সব মিলিয়ে প্রাণের খোরাক যোগাচ্ছে এই মিলন মেলা। গেমসে রয়েছেন বাংলাদেশের সাত ক্রীড়াবিদ। কিন্তু নেই কোন বাংলাদেশী দর্শক। গেমসে সাত খেলোয়াড়ের ওপর ভর করে ব্রাজিলে এসেছেন কয়েকগুণ ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। যদিও বেশিরভাগই ব্যস্ত খেলা নয়, বিচসহ রিও শহর দর্শনে। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দেশ ব্রাজিরের জনসংখ্যা ২০ কোটি। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, বিশাল দেশটিতে রয়েছেন মাত্র এক হাজারের মতো বাংলাদেশী। তাদের বেশিরভাগই দোকানি, পোশাক ব্যবসায়ী। ভাষাগত সমস্যা এখানে প্রবল। আর এ কারণে বাঙালিদের চাকরি করার সুযোগ নেই বললেই চলে। কাজ করতে গেলে পর্তুগীজ ভাষা জানা অত্যাবশ্যকীয়। তা না হলে ফুটপাথের পথচারী। হাতেগুনা বাংলাদেশীদের বেশিরভাগের ঠিকানা ব্রাজিলের দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর সাও পাওলোতে। রিওতেও বসবাস রয়েছে হাতেগুনা কিছু বাঙালী। এতে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, এমন কি এশিয়ার জাপান, কোরিয়া বা মালয়েশিয়ার মত উপচে পড়া বাংলাদেশী দর্শক নেই রিওতে। অলিম্পিক পার্কের আরচারি ভেন্যুতে ৫ আগস্ট কোয়ালিফাইং র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন বাংলাদেশের শ্যামলী রায় প্রায় ফাঁকা গ্যালারিতে। বাংলাদেশ বহরের লোকজনদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়নি। এতে বিষয়টা পরিষ্কার রিও এসেছেন বেশিরভাগই বিলাস ভ্রমণে। যদিও অলিম্পিকে পদকের স্বপ্ন অনেকটাই দুরাশা। ভাগ্যের সহায়তা থাকলে গলফার সিদ্দিকুর রহমান ও একমাত্র শূটার আবদুল্লাহ হেল বাকী কতদূর এগোতে পারেন সেটাই দেখার। তবে পদকের প্রত্যাশা না করাই শ্রেয়। বিশ্বের ২০৬ দেশের ১১ হাজারেরও বেশি ক্রীড়াবিদের অংশগ্রহণে রিও অলিম্পিকে বাংলাদেশ দলটাকে দর্শক বললে মনে হয় ভুল হবে না। যদিও স্বর্ণ পদকের জন্য কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশন। রৌপ্য-তাম্রর জন্যও রয়েছে অর্থ পুরস্কার। যা বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে প্রথম, প্রশংসনীয় উদ্যোগ। যদিও অর্থ মুখ্য নয়। পদকটাই সবচেয়ে বড় বিষয়। যা নগদ অর্থ পুরস্কারের চেয়েও মহামূল্যবান। পদকের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই বাংলাদেশের দর্শকও নেই। বিমানে ১৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সামর্থ্য থাকলেও আগ্রহ নেই খেলা দেখার। আর এটাই স্বাভাবিক। ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ তখনই আগ্রহ দেখাবেন যখন একটা সম্ভাবনা থাকবে। তবে নিশ্চিত পদকের কারণে নিজ দেশের খেলোয়াড়দের লড়াই উপভোগ করতে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়া, জাপান ও চীন থেকে সুদূর ব্রাজিলে উড়ে এসেছেন হাজারো দর্শক। তাদের পদভারে এখন মুখরিত গোটা রিও। খেলায় মেতে উঠেছে ব্রাজিলের এই পর্যটক শহর।
×