ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ার তরুণ ব্যারিস্টার সপরিবারে লন্ডন থেকে সিরিয়ায়

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৫ আগস্ট ২০১৬

বগুড়ার তরুণ ব্যারিস্টার সপরিবারে লন্ডন  থেকে সিরিয়ায়

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ নিখোঁজের তালিকায় এবার বিস্ময় জাগিয়েছে বগুড়ার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করা একেএম তাকিউর রহমান শিফাত। শিক্ষিত পরিবারের এই তরুণ আইনজীবী, স্ত্রী ও শিশু সন্তানসহ দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। ওমরাহ্ করার কথা বলে সপরিবারে দেশ ছাড়ার পর থেকেই তার আর সন্ধান নেই। তার পরিবারের সন্দেহ বিপথগামী হয়ে তিনি সিরিয়া বা তুরস্কে অবস্থান করছেন। এ নিয়ে এখন বগুড়ায় তোলপাড় চলছে। গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন। এক সময়ে তারুণ্যের আধুনিকতা ও গান-বাজনায় অভ্যস্ত তাকিউর হঠাৎ করেই বদলে যান। দাড়ি রেখে ধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়েন বলে জানিয়েছেন তার বাবা। সন্তান নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে চিন্তায় দিন কাটছে তার। ঢাকার কলাবাগান থানায় জিডি করার তেরো মাস পরও ছেলে ও ছেলের বউসহ নাতনির কোন সন্ধান পাননি তিনি। সন্তানের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে ব্যবসায়ী বাবা জিডি করেছিলেন গত বছরের ৯ জুন। বগুড়ার কালীতলা এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল খালেকের ছেলে তাকিউর রহমানের লেখাপড়া ইংরেজী মাধ্যমে। চতুর্থ শ্রেণী থেকে ‘ও’ লেভেল পর্যন্ত পড়াশোনা ভারতের দার্জিলিংয়ের মাউন্ট হারমান এবং কালিংফোর রকভেলি স্কুলে। দেশে ফিরে ২০০৬ সালে ঢাকায় লন্ডন কলেজ অব লিগ্যাল স্টাডিজে ভর্তি হন। এখান থেকে ‘এ’ লেভেল পাস করার পর লন্ডনের ক্যান্টবেরি ইউনিভার্সিটিতে, সেখান থেকে বার এ্যাট ল’ করেন। ২০১১ সালে লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর তাকিউর বিয়ে করেন চট্টগ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ইকবাল হোসেনের মেয়ে রিদিতা রাহেলাকে। নিজের পছন্দ বাবাকে জানানোর পর দুই পরিবারের সম্মতিতেই তাদের বিয়ে হয় বলে জানিয়েছেন তাকিউরের বাবা আব্দুল খালেক। তাকিউর থাকতেন ঢাকার কলাবাগানের ১৪ লেক সার্কাসের ৮/বি ফ্ল্যাটে। স্ত্রী রিদিতা রাহেলাও পর্দানসিন। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান রুমাইশা। দেশ ছাড়ার সময় তার বয়স ছিল ১৮ মাস। পারিবারিক সূত্র জানায়, আধুনিক জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত তাকিউর হঠাৎ করেই বদলে যান। যার শুরুটা ছিল লন্ডন। ছেলের এই বদলে যাওয়াটা বাবা খালেকের চোখে খটকা লাগে। তিনি জানান, ছেলেকে একাধিকবার প্রশ্ন করেও কোন সদুত্তর পাননি। আর ছেলে পরিবার নিয়ে ঢাকায় নিজ পেশায় ব্যস্ত সময় পার করায় কথাও কম হতো। এমনকি ছেলেকে প্রশ্নও করেছিলেনÑ কোন দলে যোগ দিয়েছিল কিনা। গত বছরের এপ্রিলে হঠাৎ করে তাকিউর জানান, তিনি ওমরাহ্ করতে যাবেন। তার শ্বশুর তখন বিদেশে ছিলেন। তিনি জামাইকে পরে যেতে বলেন। বাবা ব্যবসায়ী খালেকও ছেলেকে পরে যেতে বলেন; কিন্তু বাবা ও শ্বশুর কারও কথাই তাকিউর রাখেননি। ৪ এপ্রিল সপরিবারে দেশ ছাড়ার সময় বলেছিলেন ১৫-২০ দিনের মধ্যে ফিরবেন; কিন্তু আর ফেরেননি। প্রথমদিকে মক্কা থেকে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন। পরে ৩-৪ মাসের মধ্যে আরও কয়েকবার বাবা ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে তাকিউরের কথা হয়। ফোনে জানিয়েছেন, তারা সবাই ভাল আছেন। তবে কোথায় রয়েছেনÑ সে বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসা করা হলেও বারবার তা এড়িয়ে গেছেন তাকিউর। তার বাবা জানিয়েছেন, নিখোঁজ হওয়ার পর ২-৩ বার ছেলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছে কিন্তু সৌজন্যমূলক কথা ছাড়া আর কিছু বলেননি। তার শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সর্বশেষ তুরস্ক থেকে কথা হয় বলে ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক জানিয়েছেন। সপরিবারে নিখোঁজ থাকার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ব্যবসায়ী খালেকের বাসায় যাচ্ছেন। চলছে তোলপাড়।
×