ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ শাহজাহান

জাপানী সহায়তা চুক্তি ও আমাদের প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৩১ জুলাই ২০১৬

জাপানী সহায়তা চুক্তি ও আমাদের প্রত্যাশা

গত ডিসেম্বরে ৩৬তম ঋণ প্যাকেজের আওতায় বাংলাদেশকে ছয় প্রকল্পে ৮ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা দিতে চুক্তি করে জাপান। সেটাই ছিল এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় জাপানী ঋণ। তবে কয়েকদিন আগে, বিদ্যুত, যোগাযোগ ও দুর্যোগ প্রশমনসহ বিভিন্ন খাতের ছয় প্রকল্পে বাংলাদেশকে সহজ শর্তে ১২ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করে জাপান। এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা জাইকা ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মধ্যে এ বিষয়ে চুক্তি সই হয়। জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে অনুষ্ঠানে বলেন, টাকার অঙ্কে বাংলাদেশের জন্য এটিই সবচেয়ে বড় জাপানী ঋণ। এই চুক্তি অনুযায়ী, জাপানের ৩৭তম লোন প্যাকেজের আওতায় ওই অর্থ পাবে বাংলাদেশ। ঋণের জন্য বার্ষিক সুদের হার হবে মাত্র ০.০১ শতাংশ। ঋণ শোধ করতে হবে ৪০ বছরে। ঋণ চুক্তিতে রেয়াতকাল ধরা হয়েছে ১০ বছর; অর্থাৎ চুক্তির প্রথম দশ বছর পর থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে। মেয়াদকাল প্রয়োজনে আরও ১০ বছর বাড়ানো যাবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। সে হিসাবে ৫০ বছরে এ ঋণ পরিশোধের সুযোগ থাকছে। ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প, যমুনা রেলব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প, আন্তঃসীমান্ত সড়ক যোগাযোগ উন্নয়ন প্রকল্প, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র, এনার্জি ইফিসিয়েন্সি এ্যান্ড কনজারভেশন প্রোমোশন ফাইন্যান্সিং প্রজেক্ট, ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টে এই অর্থ ব্যয় হবে। বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আজম এবং জাপানের পক্ষে জাইকার বাংলাদেশ প্রধান মিকিউ হাটায়েডা চুক্তিতে সই করেন। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘আমাদের সরকার পশ্চিমা নীতি থেকে সরে প্রাচ্য নীতি গ্রহণ করে। তার ফল আজকের রেকর্ড জাপানী সহায়তা চুক্তি। আমরা শুধু পশ্চিম কিংবা প্রাচ্যে নয়, পৃথিবীর সব দিকেই তাকাচ্ছি। উত্তর দক্ষিণেও বন্ধু খুঁজছে সরকার।’ বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ‘চেনা বাংলাদেশ অচেনা হয়ে যাচ্ছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এ পরিবর্তন ইতিবাচক ও উন্নয়নের।’ অন্যদিকে, গুলশানের ক্যাফেতে জঙ্গী হামলায় জাপানী নাগরিকদের প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা- জাইকা। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশের প্রধান উন্নয়ন সহযোগী এ সংস্থার প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকা বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান অব্যাহত রাখার বিষয়েও আমরা দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ।’ জাইকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পাশাপাশি যেসব স্থানে তাদের প্রকল্প চলছে, সেখানে নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে বন্দুকধারীরা হামলা চালিয়ে যে ১৭ বিদেশীসহ ২০ জনকে হত্যা করে তাদের মধ্যে নয়জন ইতালির নাগরিক। বিজ্ঞপ্তিতে হলি আর্টিজান বেকারিতে সাত জাপানী নাগরিক নিহত হওয়ার পাশাপাশি আরেকজন আহত হন জানিয়ে বলা হয়েছে, তারা আটজনেই জাইকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য জরিপ কাজে নিযুক্ত ছিলেন। জাইকার সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগিতা প্রকল্পে ৪৭৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে জাপান। সর্বশেষ ঢাকার বহু প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে জাইকার সঙ্গে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ সরকার। জাইকার অর্থায়নে রাজধানী ঢাকায় ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার মেট্রোরেল রুট-৬ প্রকল্পে জাইকা সহায়তা দিচ্ছে ১৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কক্সবাজারের মহেশখালীতে মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকার যে প্রকল্প নেয়া হয়েছে তার মধ্যে জাইকা দেবে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মাণাধীন পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণেও অর্থ দিচ্ছে সংস্থাটি। জাপানী রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এদেশের সঙ্গে জাপানের আবেগের সম্পর্ক রয়েছে। এদেশের উন্নয়নে জাপানের নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতার পাশাপাশি অনেক জাপানী ব্যবসায়ী ও গ্রুপকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এদেশে জাপানী বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলছে। শীঘ্রই এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হবে।’ দুই বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের কাছ থেকে ঋণ সহায়তার যে প্রতিশ্রুতি এসেছিল সে চুক্তি তারই ফসল বলে জানান তিনি। জাইকার আবাসিক প্রতিনিধি মিকিও হাতায়েদা জানান, জাপান সরকার এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ঋণ হিসেবে ১ লাখ কোটি জাপানী ইয়েন, অনুদান হিসেবে ৬০ হাজার কোটি ইয়েন এবং কারিগরি সহায়তা হিসেবে ৬ হাজার ৫০০ কোটি ইয়েন দিয়েছে। অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আজম বলেন, ‘জাপান সরকার যেসব প্রকল্পে সহযোগিতা দিচ্ছে তার সবগুলোই মেগা প্রকল্প। ‘এ প্রকল্পগুলো শেষ হলে বাংলাদেশ লক্ষ্য পূরণে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’ সূত্র : বিডিনিউজ
×