ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মতবিনিময় সভা

জঙ্গীদের শেকড় দেশের মাটি থেকে উপড়ে ফেলা হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৮ জুলাই ২০১৬

জঙ্গীদের শেকড় দেশের মাটি থেকে উপড়ে ফেলা হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের মাটিতে জঙ্গী কার্যক্রম কোনভাবেই বরদাশত করা হবে না। যে কোন মূল্যে জঙ্গীদের শেকড় উপড়ে ফেলা হবে। মনে রাখতে হবে জঙ্গীবাদ আইনশৃঙ্খলাজনিত কোন সমস্যা নয়, এটি সামাজিক ও নাগরিক সমস্যা। তাই জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে ১৬ কোটি মানুষের চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। জঙ্গীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দেশে একটি অঘোষিত নাগরিক ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ তথ্য দিচ্ছে, সে তথ্য যাচাই-বাছাই করে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বিএনপি-জামায়াত চক্র পরোক্ষভাবে জঙ্গীদের সমর্থন দিচ্ছে। তাদের এক নেতা নিহত ৯ জঙ্গীর পরিচয় নিয়ে সন্দেহপ্রকাশ করেছেন। ফলে স্পষ্টত বিএনপি-জমায়াত চক্র জঙ্গীদের সমর্থন না দিলে তাদের আরও আগেই ধ্বংস করা সম্ভব হতো। বুধবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ বেতার আয়োজিত ‘জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে জনসচেতনতা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগত নাগরিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এতে বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক একেএম নেছার উদ্দিন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. আতিকুল ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোঃ আফজাল, দৈনিক সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার ও একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু। দেশের ১৬ কোটি মানুষকে চোখ-কান খোলা রাখার আহ্বান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, জঙ্গী দমনে দেশের ১৬ কোটি মানুষের সহযোগিতা চাই। সারাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবিরোধী কমিটি হবে, এই কমিটি ও প্রশাসনকে সহযোগিতা করুন। জঙ্গীদের দোসর, জঙ্গী উৎপাদনের কারখানা, মদদদাতাÑ সর্বোপরি তাদের সবাইকে চিহ্নিত করা হবে। সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। বিএনপি-জামায়াত চক্র পরোক্ষভাবে জঙ্গীদের সমর্থন দিচ্ছে এমন মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা জঙ্গী, সন্ত্রাস ও অন্যায় যুদ্ধের মোকাবেলা করছি। যদি আজকে বিএনপি-জমায়াত চক্র জঙ্গীদের এভাবে সমর্থন না দিত তবে অনেক আগেই জঙ্গীদের ধ্বংস করা সম্ভব হতো। গণতন্ত্রের সঠিক চর্চাহীনতার কারণেই দেশে জঙ্গীবাদ বাড়ছে কিনাÑএক নাগরিকের এ প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, জঙ্গীদমন গণতন্ত্র দমন নয়। গণতন্ত্র ও জঙ্গীবাদ একসঙ্গে যায় না। গণতন্ত্র বাঁচানোর জন্যই জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। দেশটাকে বাঁচানোর জন্য গণতন্ত্র রক্ষার জন্য জঙ্গী-সন্ত্রাস দমন করছি। গণতন্ত্রের যত মাপকাঠি আছে, বর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকারে তা বিদ্যমান। তিনি বলেন, গত ৭ বছরে করা দেশের একটি আইনও মানবতাবিরোধী নয়। বরং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসেছে। মুখ দেখে নয়, চুরির দায়ে তারেক রহমানের সাজা হয়েছে। এতিমের টাকা চুরির অপরাধে খালেদা জিয়ার বিচার চলছে। এখানে ব্যক্তি মুখ্য নয়। মনে রাখতে হবে, ইসলাম ও জঙ্গীবাদ একসঙ্গে যায় না। তেমনি গণতন্ত্র ও জঙ্গীবাদ একসঙ্গে যায় না। সুতরাং সাপ মারতে হবে, সাপের ডিমও ধ্বংস করতে হবে এবং মা সাপকেও ধ্বংস করে দিতে হবে। রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পেলে পুলিশ সেখানে হানা দেয়, অপারেশনে নিহত হয় ৯ জঙ্গী। এ ঘটনায় দেশের সর্বসাধারণ যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাধুবাদ জানাচ্ছে, সেখানে নিহত ৯ জঙ্গীর পরিচয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ্। এ প্রসঙ্গ টেনে কড়া সমালোচনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবেই কিন্তু তাদের জঙ্গীদের সমর্থন দেয়া হয়। এর আগে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে তারা কিন্তু একই রকম প্রশ্ন তুলেছিল। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের নিয়েও। অথচ ৪৫ বছর পরে আমরা বিচার করছি। ওরা মানুষ হত্যা করছে, ওরা আপনাদের হত্যা করছে। অথচ একটি দল পরোক্ষভাবে তাদের পক্ষেই অবস্থান নিচ্ছে। নাগরিকদের করা অপর প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নিরাপত্তা রক্ষায় দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরোপুরি সক্ষম। শুধু প্রয়োজন জনগণের সহযোগিতা। এ সময় জঙ্গীদের শেকড় উপড়ে ফেলা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, দেশের মাটিতে জঙ্গী কার্যক্রম কোনভাবেই বরদাশত করা হবে না। পুলিশ জীবনবাজি রেখে সফল ও নিখুঁত অভিযান পরিচালনা করছে। জনগণের নিরাপত্তায় জঙ্গীবাদের শেকড় উপড়ে ফেলার জন্য যা যা করা প্রয়োজন সব করতে আমরা বদ্ধপরিকর। জঙ্গীবাদকে সামাজিক ও নাগরিক সমস্যা উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আজকের যে সমস্যা তা আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা নয়Ñসামাজিক ও নাগরিক সমস্যা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা। তবে দেশের মনুষ জঙ্গীবাদ গ্রহণ করেনি। প্রধানমন্ত্রীর ডাকে একটি অঘোষিত নাগরিক ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। এরই আলামত শত শত মানুষ কল্যাণপুরে অভিযানে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন। মানুষ তথ্য দিচ্ছে, সে তথ্য যাচাই বাছাই করে আমরা ব্লক রেইড করছি। এ ঐক্যের মাধ্যমে সমাজ ও দেশে থেকে ধর্ম ব্যবসায়ী ও অসাধুদের উৎখাত করা হবে। অতর্কিত হামলা মোকাবেলায় উন্নত দেশের আধুনিক প্রযুক্তি আর বিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে যে সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ এরচয়েও বেশি সফল বলে দাবি করেন ডিএমপি কমিশনার। টকশোর সমালোচনা করে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, পুলিশ জীবনবাজি রেখে জীবন উৎসর্গ করে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। আর পুলিশের পেশাদারিত্বকে হাইলাইট না করে একটি মহল সমালোচনা করছে। এ সমালোচনার কারণে সন্ত্রাসী ও জঙ্গীরা উৎসাহিত হবে।
×