ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

আরশি গাইন

জঙ্গীবাদ মানে জীবন বরবাদ

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৮ জুলাই ২০১৬

জঙ্গীবাদ মানে জীবন বরবাদ

গুলশানের ঘটনার শেষলগ্নে ঘাতক যুবকরা মৃত্যু নিশ্চিত জেনে রেস্টুরেন্টের কর্মচারীদের উদ্দেশে ঘোষণা করে, ‘তোমরা পালাও, আমরা এখন বেহেস্তে যাব।’ এ ঘোষণা প্রমাণ করে যে তারা অসুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী। এখন নির্ণয় করতে হবে কে তাদের এতবড় ক্ষতি করল। তারা কত বড় শক্তিশালী জাদুকর। এ জাদু তারা নিজেদের সন্তানদের ওপর প্রয়োগ করে না কেন? জঙ্গীবাদের প্রকৃত অপরাধী হচ্ছে এর পিছনে থাকা একদল ভয়ঙ্কর হিংস্র শক্তিশালী সুদক্ষ মগজ ধোলাইকারী ট্রেনিং মাস্টার বড় ভাই। কোন ট্রেনিং মাস্টার নিজে টার্গেট কিলিংয়ে অংশগ্রহণ করে না। উঠতি বয়স্ক ট্যালেন্ট যুবকদের তাদের গার্জিয়ানের বিনা অনুমতিতে ভুয়া শহীদ হতে উদ্বুদ্ধ করে অভিযানে পাঠিয়ে তাদের পিতামাতার ঘর সংসার ল-ভ- করে দিয়ে নিজেরা স্ত্রী সন্তান নিয়ে মহাসুখে নিরাপদে দিন যাপন করে। ট্রেনিং মাস্টাররা নিজেদের মিথ্যা নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর প্রদান করে এমন মগজ ধোলাই ট্রেনিং দেয় যাতে যুবকরা জীবিত থেকে কেউ বাড়িতে ফিরে ঘর সংসার করতে সক্ষম না হয়। ট্রেনিংদাতাদের মূল লক্ষ্য- নিজেরা বেঁচে থাকব, যাদের ট্রেনিং দেব তাদের অনিবার্য লাশ বানাব। কারণ জীবিত ফিরে আসলে ট্রেনিংদাতাদের সমূহ বিপদ হবে। কিলিং অভিযানে অংশগ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত এ সব মগজ ধোলাইকারী বড় ভাই ট্রেনিং মাস্টাররা যুবকদের মাথায় জেহাদী আগুন জ্বালিয়ে উত্তপ্ত রেখে লালন করতে থাকে- অভিযানের পর ক্রসফায়ার থেকে যখন সে পালিয়ে বেড়ায় তখন তাদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ রাখে না। কারণ সে যতশীঘ্র সম্ভব ক্রসফায়ার চায়। হায়রে দেশের নাদান যুব সমাজ। নিজেরা লাশ হয়, কিন্তু ট্রেনিং মাস্টারদের ভ-ামী বুঝতে পারে না। এমন কি এক মার এক সন্তানের হাতে চাপাতি দিয়ে তারা নিশ্চিন্তে ঘরে গিয়ে ঘুমায়। কোন ট্রেনিং মাস্টার কোথাও মারা পড়েছে এমন শোনা যায়নি। এমনটা আর চলতে দেয়া যায় না। জঙ্গীবাদে জনসমর্থন থাকুক আর না থাকুক দেশের যুব সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে উদ্ধার করতে হবে, ধর্মের প্রতি কটূক্তি প্রতিহত করতে হবে এবং মগজ ধোলাইকারী ট্রেনিং মাস্টারদের নির্মূল করতে হবে। এর দায়িত্ব নিতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। অধিক বয়স্ক কোন লোককে জঙ্গীবাদে পাওয়া যাবে না। কারণ এতে তাদের ধর্মের অপব্যাখ্যা ও ভ-ামী ধরা পড়ে যাবে। অল্প বয়সী যুবকদের জঙ্গীবাদে দীক্ষিত করা সহজ। যুবক বয়সটা হচ্ছে রোমান্টিক। এ বয়সে পৃথিবীকে তারা রঙিন দেখে। এ বয়সে তাদের বাস্তব জ্ঞানও কম থাকে। তারা হারিয়ে যেতে চায় অনেক অনেক দূরে- নীল আকাশে, আর ফিরে আসতে চায় না। মনে মনে কল্পনার শেষ নেই। এ বয়সে বিড়ম্বনা অনেক। আপন পরিবার পরিজনকেও পর পর মনে হয়। কারো কারো আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে হয়। ঠিক এমনি এক ক্রান্তিকালে ভ- ট্রেনিংদাতারা সৌম্য মূর্তিতে তাদের সম্মুখে হাজির হয়। তাদের শক্ত নেটওয়ার্ক সর্বত্র বিস্তৃত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের কাজ ঠিকই অব্যাহত রয়েছে। যে সব যুবক অধিক সচেতন, তাদের ভ-ামী বুঝতে পেরে তারা ফিরে আসে। আর যারা সহজ সরল মনের অধিকারী, তারা তাদের জালে আটকা পড়ে। আর এ এমন জাল, এমন মগজ ধোলাই- লাশ না হয়ে আর সেখান থেকে ফিরে আসা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। জঙ্গীবাদের অপর নাম আত্মহত্যায় উদ্বুদ্ধ করা। যুবকদের মগজ এমনভাবে ধোলাই করা হয় যে, পিতা মাতা, ভাই বোন, আত্মীয়স্বজনদের প্রতি ভালবাসা ও দরদকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এক বৃদ্ধার এক ছেলে আর কেউ নেই, এক গ্লাস পানি খাওয়াবার কেউ নেই, ঘরে মরে পড়ে থাকলে দেখার কেউ নেই- তাকেও ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ঘর ছাড়তে বাধ্য করা হয়। ট্রেনিং মাস্টারদের মগজ ধোলাই এমন কার্যকর যে সে অনায়াসে ঘর ছেড়ে চলে গিয়ে এসএমএস করে ‘বিদেশে চলে গেলাম, এ ছাড়া কোন উপায় ছিল না। হাশরে দেখা হবে।’ দড়াটানা, যশোর থেকে
×