অনলাইন ডেস্ক॥ গত ১৫ জুলাই তুরস্কের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানচেষ্টায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কারণ ওই ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানচেষ্টার পর থেকেই তুরস্কের এরদোয়ান সরকার উদারবাদি গণতন্ত্র থেকে আরো সরে এসেছেন এবং আরো কর্তৃত্ববাদি রুপ ধারণ করছেন। এতে পশ্চিমা বিশ্ব এবং তাদের মানবাধিকার ও মুক্ত গণতন্ত্রের চাহিদা পুরন করা থেকেও সরে আসছেন এরদোয়ান। যার ফলে তুরস্ক এবং রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হবে।
ওই ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানচেষ্টার পর থেকেই ঘটনাটিকে একটি অজুহাত হিসেবে খাড়া করে তুরস্কের এরদোয়ান সরকার নিজের কর্তৃত্ববাদি ক্ষমতার ভিত আরো শক্তিশালি করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই দেশটিতে তিন মাসের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। মানবাধিকার বিষয়ক ইউরোপীয় কনভেনশনটিও সাময়িকের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। আর সেনাবাহিনী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে লাখ খানেক লোককে অপসারণ করা হয়েছে।
ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসি এর গবেষক আন্না বোরসেভস্কায়া বলেন, তুরস্কের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানচেষ্টার ফলে এরদোয়ান ও পুতিনের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে। কারণ এর ফলে তুরস্ক পশ্চিমা বিশ্ব এবং তাদের মানবাধিকারের চাহিদা ও মুক্ত গণতন্ত্র কায়েমের প্রকল্প থেকে সরে আসবে। পরিণতিতে পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে বাধ্য হবেন এরদোয়ান।
এরদোয়ান ইতিমধ্যেই রশিয়ার প্রতি ঝুকতে শুরু করেছেন। এর প্রমাণ সম্প্রতি তিনি তুরস্কের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানচেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের ওপর গত নভেম্বরে রাশিয়ার একটি যুদ্ধ বিমান ভুপাতিত করার দায়ও চাপিয়ে দিয়েছেন। নভেম্বরের ওই ঘটনার পর দুই দেশের সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি ঘটেছিল। এমনকি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ঘটনাটিকে “পরিকল্পিত উস্কানি” হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। এরদোয়ান এবার ওই ঘটনার দায় গত ১৫ জুলাইয়ের ব্যর্থ্য সেনা অভ্যুত্থানচেষ্টাকারীদের ওপর চাপিয়ে দিলেন।
একদিকে এরদোয়ান সরকার অভ্যুত্থানচেষ্টাকারীদের ওপর তুরস্কের সব ব্যর্থ নীতি এবং আভ্যন্তরীণ সামাজিক সমস্যার দায় চাপিয়ে দেওয়ার কৌশল নিয়েছেন। অন্যদিকে পুতিনও এই সুযোগে তুরস্কের পররাষ্ট্র নীতি বিশেষকরে সিরিয়ায় তুরস্কের নীতির ওপর প্রভাব বিস্তার এবং এর গতি প্রকৃতি নির্ধারণের চেষ্টা করবেন।
আন্না বোরসেভস্কায়া আরো জানান, নিজ ঘরের সমস্যা সামাল দিতে গিয়ে এরদোয়ান সরকারের হাতে আর সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সহায়তা করার মতো অতিরিক্ত শক্তি বা সম্পদ কোনোটাই অবশিষ্ট থাকবে না।
আর সম্ভবত ১৫ জুলাইয়ের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানচেষ্টার পর তুরস্ক সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকারের বিরোধীতামূলক পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণের সক্ষমতা হরিয়েছে। এর ফলে সিরিয়ার যে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো তুরস্কের সহায়তায় নিজেদের কার্যক্রম চালাতো তারাও নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়া ও সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকারের ক্ষমতা এবং প্রতিপত্তিও বাড়বে।
কিন্তু পুতিন সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন তুরস্কের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ন্যাটো জোটের সদস্য দেশের ভেতর আরো অস্থিতিশীলতা এবং বিবাদ সৃষ্টি হওয়া থেকে। কারণ উত্তোরত্তর আরো অস্থিতিশীল হয়ে ওঠা মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান ভ্যানগার্ড ছিল তুরস্ক। সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: