ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এখন থেকে জুমার জামাতে সব মসজিদে একই খুতবা

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২২ জুলাই ২০১৬

এখন থেকে জুমার  জামাতে সব মসজিদে একই খুতবা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এখন থেকে প্রতি সপ্তাহের জুমার নামাজের খুতবা জাতীয়ভাবে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। প্রতি জুমার আগে জাতীয় খুতবা কমিটি সারাদেশের মসজিদে খুতবা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে আগামী তিন সপ্তাহের খুতবা দেশের সব মসজিদে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। জাতীয়ভাবে রচনা করা এই খুতবা প্রত্যেক মসজিদেই অনুসরণের আহ্বান জানানো হয়েছে। ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম আফজাল বলেন, বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোতে জাতীয়ভাবে খুতবা রচনা করা হয়। এখন থেকে কোরান-হাদিসের আলোকে জাতীয় মসজিদের খুতবা রচনা করা হবে প্রতিসপ্তাহে। কেউ যাতে জঙ্গীবাদে না জড়ায় এজন্য দেশের মানুষকে জাতীয় খুতবার দিকে মনোযোগ দিতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা হবে। এর আগে দেশে জঙ্গী হামলার প্রেক্ষাপটে সব মসজিদে জাতীয়ভাবে প্রণীত একই খুতবা অনুসরণের আহ্বান জানানো হয় ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে। এর আলোকে গত ১৫ জুলাই শুক্রবার থেকে প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে সব মসজিদে একই খুতবা অনুসরণ করা হয়। জাতীয় খুতবা কমিটির পক্ষ থেকে খুতবা রচনা করে দেশের সব মসজিদে পাঠানো হয়। আজ শুক্রবারও সব মসজিদেই জাতীয়ভাবে রচনা করা একই খুতবা অনুসরণের আহ্বান জানানো হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে। আজকের জুমায় অনুসণের জন্য নতুন খুতবা রচনা করে তা সব মসজিদেই সরবরাহ করা হয়েছে। তবে এভাবে খুতবা রচনা করে তা অনুসরণের আহ্বান জানানোয় বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা করা হচ্ছে। হেফাজত ইসলামসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে এভাবে খুতবা বেঁধে দিয়ে বাধ্যতামূলক করার সমালোচনা করে তা মানতে বাধ্য নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। এছাড়া কিছু রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও এভাবে খুতবা বেঁধে দেয়ার সমালোচনা করা হচ্ছে। এর উত্তরে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছেÑ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে দীর্ঘকাল যাবত জুমার খুতবা প্রণয়ন ও উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। আগেও এ মসজিদের খতিব মরহুম মুফতি সৈয়দ আমীনুল ইহসান (রহ) এবং মরহুম মাওলানা উবায়দুল হক (রহ) নিজেরা খুতবা প্রণয়ন করে উপস্থাপন করতেন। বর্তমানে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের ইমামসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-ওলামা ও খতিবের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে পবিত্র কোরান-সুন্নাহর আলোকে জুমার খুতবা প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। তা নিয়মিতভাবে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে উপস্থাপিত হয়ে আসছে। ফাউন্ডেশনের সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত কর্মকর্তা-কর্মচারী খুতবা প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। এ কমিটিতে শুধু দেওবন্দ, হাটহাজারী ও পটিয়া মাদ্রাসাসহ মিসরের আল আযহার ও মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ আলেম-ওলামাগণ সম্পৃক্ত রয়েছেন। এ খুতবা পবিত্র কোরান-সুন্নাহর আলোকে দেশের প্রচলিত প্রায় সকল খুতবার কিতাবকে সামনে রেখে প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। এখানে কারও ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরা হয়নি এবং এর কোন অবকাশও নেই। দেশের অন্যান্য মসজিদের খতিব ও ইমামরা যাতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের জন্য প্রণীত খুতবা থেকে ধারণা নিয়ে খুতবা উপস্থাপন করতে পারেন এ লক্ষ্যে ফাউন্ডেশন দেশের বিভিন্ন মসজিদে শুধু নমুনা হিসেবে খুতবা প্রেরণ করেছে। ওই খুতবা কারও ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়নি কিংবা কারও জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। সংস্থার পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে Ñইসলাম সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদকে সমর্থন করে না। ইসলামের নাম ব্যবহার করে কেউ যাতে ইসলাম বিধ্বংসী কাজের সঙ্গে জড়িত না হয়, পবিত্র কোরান-সুন্নাহর আলোকে তা জনগণের সামনে তুলে ধরা মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক খতিব, ইমাম ও আলেম-ওলামার দায়িত্ব। তারাই নায়েবে রাসূল (স) হিসেবে মানুষকে হেদায়াতের পথে আহ্বান করবেন; এটাই ইসলামের দাবি। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, খুতবা প্রণয়ন কমিটির কোন খুতবায় যদি ভুল-ভ্রান্তি থেকে থাকে তাহলে তা লিখিতভাবে ফাউন্ডেশনকে অবহিত করার জন্য সবিনয় অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। খুতবার ভুল-ভ্রান্তির বিষয় গণমাধ্যমে প্রকাশ করলে সাধারণ মুসলমানগণ বিভ্রান্ত হতে পারেন। যদি কেউ পবিত্র কোরান-সুন্নাহর আলোকে খুতবা প্রণয়ন করে ফাউন্ডেশনে প্রেরণ করেন তাহলে তা সাদরে গৃহীত হবে এবং তা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে উপস্থাপনসহ দেশব্যাপী বিতরণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাছাড়া আরবী ভাষায় পারদর্শী কোন বিশেষজ্ঞ আলেম খুতবা প্রণয়ন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে আগ্রহী হলে ফাউন্ডেশন তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বাগত জানাবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ ছাড়াও সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ইসলামের মৌলিক বিষয়ের ওপর পবিত্র কোরান-সুন্নাহর আলোকে খুতবা প্রণয়ন করে নিয়মিতভাবে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে উপস্থাপন এবং দেশব্যাপী বিতরণ করা হবে। এ বিষয়ে দেশের সর্বস্তরের শ্রদ্ধেয় আলেম-ওলামাগণের সুপরামর্শ ও সহযোগিতাও প্রত্যাশা করা হয়। সারাদেশে একই খুতবার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক সামীম আফজাল বলেন, যারা জাতীয়ভাবে খুতবা রচনা নিয়ে সমালোচনা করছেন তা মূলত রাজনীতির জন্য করছেন। তিনি বলেন, দেশে প্রায় তিন লাখ মসজিদ আছে। তাদের কাছে খুতবা পৌঁছে দেয়া হবে। আগামী তিন সপ্তাহের খুতবা পাঠানো হয়েছে। পরে বই আকারে মসজিদে মসজিদে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, খুতবায় কোরানের আয়াত থাকে, হাদিস এবং সামসময়িক সমস্যার ব্যাখ্যা কোরান-হাদিসের আলোকে হয়ে থাকে। এখানে কোরান -হাদিসের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের জন্য নতুন খুতবা বেঁধে দেয়া হয়েছে। তা দেশের সব মসজিদেই পাঠিয়ে অনুসরণের আহ্বান জানানো হয়েছে। ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জানান, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদেও এই খুতবা পঠিত হবে। খুতবাটি বাংলাদেশের সকল মসজিদে পাঠের জন্য ইমাম ও খতিবদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আজকের খুতবার বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ কোরান মজীদ ও সুন্নাহর মর্যাদা ও গুরুত্ব।’
×