ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

২৭৪৫ বিচারকের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট

তুরস্কজুড়ে ব্যাপক ধরপাকড়, আটক ৬ হাজার

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৮ জুলাই ২০১৬

তুরস্কজুড়ে ব্যাপক ধরপাকড়,  আটক ৬ হাজার

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ তুরস্কে এরদোগান সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান নস্যাৎ হওয়ার পর দেশজুড়ে ব্যাপক ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। রবিবারও শত শত এরদোগান সমর্থক রাজপথে অবস্থান করে। শুক্রবার রাতে তুর্কি সেনাবাহিনীর একাংশ এই অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায়। এর পর শুরু হয় ধরপাকড়। রবিবার পর্যন্ত তুরস্কে গণগ্রেফতার অব্যাহত ছিল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে অন্তত ৬ হাজার জনকে গ্রেফতার করেছে এরদোগান সরকার। পাশাপাশি দুই হাজার ৭শ’ ৪৫ জন বিচারকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আটক সেনার মধ্যে ৫০ জন সিনিয়র সদস্য রয়েছেন। রবিবার সকালেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়। বরখাস্ত হওয়া বিচারকরা এরদোগান সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই অভ্যুত্থান ঘটনার পর তুর্কি পার্লামেন্টে মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে একটি প্রস্তাব আনা হতে পারে বলে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান জানিয়েছেন। খবর বিবিসি, এএফপি ও আলজাজিরা অনলাইনের। আটককৃতদের তুরস্কের পশ্চিমাঞ্চলীয় দেনিজলি প্রদেশে রাখা হয়েছে। দেশটির বিচারমন্ত্রী বেকির বোজদাগ বলেছেন, এই গ্রেফতার অব্যাহত থাকবে। আটককৃত সিনিয়র সেনা সদস্যদের মধ্যে জেনারেল এরদাল আজতুক, থার্ড আর্মি কমান্ডার জেনারেল আদেম হুদুতিসহ অন্যান্য সিনিয়র সেনা কর্মকর্তারা রয়েছেন। তুরস্কের সিনিয়র বিচারক আলপারসলান আলতানকে গ্রেফতার করে জেলখানায় রাখা হয়েছে। আর যে আটজন সেনা সদস্য শনিবার গ্রীসে আশ্রয় নিয়েছিলেন অবৈধ অনুপ্রবেধের দায়ে তাদের গ্রীক আদালত তোলা হয়েছে। এদিকে শুক্রবারের এই অভ্যুত্থান চেষ্টার ঘটনাকে সৃষ্টিকর্তার উপহার হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান। রবিবার এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চড়া মূল্য দিতে হবে। এ ঘটনার মাধ্যমে আমরা সেনাবাহিনীর মধ্যে শুদ্ধি অভিযান চালাতে পারব। শুক্রবারের এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ঘটনায় ২৬৫ জন নিহত হন। এদের মধ্যে ১৬১ জন সেনা সদস্য রয়েছেন। এই অভ্যুত্থানের পর ইস্তান্বুলে সমর্থকদের উদ্দেশে বিজয় ভাষণ দেন এরদোগান। অভ্যুত্থানের ফলে তার ১৩ বছরের শাসন রক্তক্ষয়ী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল। অভ্যুত্থানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনে থাকা তুর্কি ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লা গুলেনের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এরদোগান। এ সময় গুলেনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুরস্কে ফেরত পাঠানোর দাবি করেন তিনি। তবে গুলেন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ‘গণতন্ত্র রক্ষায়’ কর্তৃপক্ষের ডাকা সমাবেশগুলোতে ব্যাপক লোক সমাগম হয়েছে। শনিবার বিকেলে বৃহত্তম শহর ইস্তান্বুল ও অন্যান্য শহরে এসব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে কর্তৃপক্ষের ডাকে অভ্যুত্থান পরিকল্পনা প্রতিহত করতেও হাজার হাজার মানুষ তুরস্কের রাজপথে নেমে এসেছিল। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ইস্তান্বুলের সমাবেশে যোগ দেন। এ সময় তাকে চাপমুক্ত লাগছিল। হাস্যময় এরদোগান সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বৃদ্ধাঙ্গুলি উঁচিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা সেনাবাহিনীর একটি ক্ষুদ্র অংশের কাজ। সেনাবাহিনী আমাদের। আর আমি চিফ কমান্ডার। এদিকে তুরস্ক ভ্রমণে নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে একটি সামরিক অভ্যুত্থান নস্যাৎ করার পর শনিবার এ সতর্কতা জারি করা হয়। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর তুরস্কে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর অব্যাহত হুমকি ও তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভ্রমণ এড়িয়ে চলার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সতর্ক করছে। এতে বলা হয়েছে, ‘১৫ জুলাই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ও তৎপরবর্তী অবস্থার প্রেক্ষিতে আমরা মার্কিন নাগরিকদের এ সময়ে তুরস্ক সফরের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার পরামর্শ দিচ্ছি। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কর্মচারীদের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দফতর বলেছে, মার্কিন নাগরিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পরিকল্পনা পর্যালোচনা ও সব সময় সদাসতর্ক থাকার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর লক্ষ্যে পরিণত হচ্ছেন বিদেশী ও মার্কিন পর্যটকরা। শুক্রবার ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর অনিশ্চয়তার কারণে মার্কিন সরকার তুরস্ক থেকে আসা ও যাওয়া সব ধরনের ফ্লাইট বাতিল করে দিয়েছে।
×