ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘ ১৯ ঘণ্টা পর মহাখালীর খাল থেকে শিশু সানজিদার লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৫ জুলাই ২০১৬

দীর্ঘ ১৯ ঘণ্টা পর মহাখালীর খাল থেকে শিশু সানজিদার লাশ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ ১৯ ঘণ্টার অভিযান শেষে উদ্ধার হলো মহাখালীর খালে পড়ে যাওয়া ছয় বছরের কন্যাশিশু সানজিদা আক্তারের মরদেহ। বৃহস্পতিবার সকাল দশটার দিকে লাশ উদ্ধার করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদের ১৯ ঘণ্টার চেষ্টায় সানজিদার লাশ তোলার সময় শত শত মানুষ ভিড় করেন খালের দুই পাড়ে। ছোট্ট মেয়েটার মৃত্যুতে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন বাবা-মাসহ পরিবারের অনেকেই। সানজিদার এমন মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকায়। বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল লাগোয়া পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের পাড়ে খেলতে গিয়ে হঠাৎ পড়ে যায় দুই শিশু সানজিদা আর তামিম। তামিম কোনমতে মাটি খামচে উপরে উঠতে সক্ষম হলেও সানজিদা খালের পানিতে ডুবে যায়। সানজিদার মা রুবি আক্তার বলছিলেন, দুপুর দেড়টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। খালের পানির গভীরতা ১৪ থেকে ১৫ ফুট। সাঁতার না জানায় সানজিদা ডুবে যায়। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমার বড় ছেলেসহ ৮/ ১০ জন পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে খুঁজতে থাকে। সানজিদা সেখানে পড়েছিল, তার কাছেই স্যান্ডেল দুটো খালের পানিতে ভাসছিল। স্থানীয়রা সানজিদাকে উদ্ধার করতে না পেরে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। দুপুর তিনটা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা উদ্ধার অভিযান শুরু করে। সন্ধ্যার পর জেনারেটরের সাহায্যে সার্চ লাইট জ্বালিয়ে রাত বারোটা পর্যন্ত টানা অভিযান চালায়। কিন্তু হদিস মেলেনি সানজিদার। খালের পাড়ে রাস্তা না থাকায় রাত বারোটায় মহাখালী এলাকায় উদ্ধার অভিযান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে খালের পানিতে স্রোত থাকায় ভাটির দিকে অভিযান চলতে থাকে। সকাল ৬টায় আবার অভিযান শুরু হলে সকাল দশটায় সানজিদার মৃতদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা। ডুবুরিরা জানান, সানজিদা সেখানে পড়ে গিয়েছিল সেখান থেকে মাত্র দেড় শ’ গজ ভাটির দিকে একটি ময়লার স্তূপের ভেতরে আটকে ছিল সানজিদার লাশ। স্রোতের টানে সানজিদা নিচের দিকে চলে যায়। এরপর ময়লার স্তূপে ঢুকে পড়ে। কোথাও যখন পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন খালের পানির নিচে থাকা ময়লার স্তূপে লাশ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। সে মোতাবেক ময়লার স্তূপ সরানো হয়। আর ময়লা সরাতে সরাতেই সকাল দশটার দিকে সানজিদার লাশ মেলে। সানজিদার লাশ যখন খালের পাড়ে আনা হয়, তখন দুই পাড়ে শত শত মানুষ ভিড় করেন সানজিদাকে দেখার জন্য। ছোট্ট শিশু সানজিদার পরনে হাফপ্যান্ট ছিল। নোংরা পানিতে শরীরে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। এমন নির্মম মৃত্যু মেনে নিতে পারছিলেন না সেখানে উপস্থিত জনতা। সবার মুখেই আফসোস। তাঁরা অবুঝ শিশুর কষ্টের মৃত্যুতে কাঁদছিল। এ সময় ভিড়ের মধ্যে বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন সানজিদার মা আর তার পিতা শাহ আলমসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। সানজিদার পিতা মহাখালী বাস টার্মিনালের ভ্যানচালক। ছোট ভাই, এক বোন আর বাবা-মার সঙ্গে সানজিদা মহাখালী দক্ষিণপাড়া বস্তিতে মাসিক আড়াই হাজার টাকা ভাড়ায় একটি কক্ষে বসবাস করছিল। সানজিদাকে আগামী জানুয়ারিতে স্কুলে ভর্তি করার পরিকল্পনা ছিল মা-বাবার।
×