ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শুধুই খেলায় মন রাখছেন মিসবাহ

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ১৩ জুলাই ২০১৬

শুধুই খেলায় মন রাখছেন মিসবাহ

প্রিন্স মাতুব্বর ॥ বৃহস্পতিবার লর্ডস টেস্ট দিয়ে শুরু হচ্ছে পাকিস্তানের ইংল্যান্ড সফরের ময়দানী লড়াই। যেখানে সব ছাপিয়ে আলোচনায় মোহাম্মদ আমির। কারণ এখানেই ২০১০ সালে স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে পাঁচ বছরের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন পাকিস্তানী পেসার। ঘরে-বাইরে সবার দৃষ্টি তাঁর ওপর। আছে আলোচনা-সমালোচনা, সে সবে কান না দিয়ে মাঠের খেলায় মন রাখতে চান দলটির টেস্ট অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক। সিরিজে ব্যাটসম্যানদের জন্য চ্যালেঞ্জটা বড় বলেই মনে করেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। তিনি বলেন, ‘নিকট অতীতে এটাই হতে যাচ্ছে আমাদের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সিরিজ। ইংল্যান্ডের মাটিতে ভাল করা এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়ার চেয়েও কঠিন। এখানে ক্রিকেটারদের সেরা-স্কিল প্রদর্শন করতে হয়। আন্তর্জাতিক মান থেকে এতটুকু পিছিয়ে থাকলে আপানাকে ডুবতে হবে। ব্যাটসম্যানদের কাজটা আরও বেশি কঠিন। কারণ ইংলিশ কন্ডিশন এশিয়ার চেয়ে পুরোপুরি ভিন্ন। স্বাগতিক পেসারদের বিপক্ষে তাঁদের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে। তাই ভাল করার প্রথম দায়িত্ব ব্যাটসম্যানদের, তাদের বোর্ডে পর্যাপ্ত রান জমা করতে হবে। তাহলেই সুযোগ তৈরি হবে। কারণ আমাদের হাতে বিশ্বমানের পেসার রয়েছে।’ আমিরকে নিয়ে আলোচনায় না গেলেও তুরুপের তাস এই পেসার ভাল করবেন বলে আশাবাদী অধিনায়ক। এ প্রসঙ্গে মিসবাহ বলেন, ‘ওর (আমিরের) জীবনে যাই হোক না কেন, সে প্রত্যাবর্তনের জন্যই খেলে যাচ্ছে, এবং সেটা ভালভাবেই করছে। এত ধকল কাটিয়ে ফেরার পর (ওয়ানডে-টি২০) কি দুর্দান্ত বোলিংটাই না করে যাচ্ছে। এমন বোলিং করা একজনের গ্যালারির আওয়াজ (নেতিবাচক মন্তব্য বোঝাতে) শোনার দরকার নেই। বল হাতেই সে এসব নিয়ন্ত্রণ করবে। ভাল ফর্ম আমিরকে অবশ্যই একদিন বিশ্ব সেরার আসনে বসাবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) আইসিসির সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরই তাকে দলে নিয়েছে। তাছাড়া ক্রিকেট অনুরাগীরা আমিরকে আবার মাঠে দেখতে চায়। টি২০, একদিনের বা চারদিনের যে কেন ফরম্যাটেই আমির ভাল বল করতে পারে। তার বোলিংয়ে গতি, সুইং, লাইন-লেন্থ সবই ভাল। তারচেয়ে বড় কথা সে এখন অনেক অভিজ্ঞ। ২০১০ সালে সে অনেক কিছুই বুঝে ওঠেনি।’ মিসবাহ যতই খেলায় মন দেয়ার কথা বলুন ২৪ বছরের আমিরকে নিয়ে আলোচনা চলছেই। সাবেক ইংল্যান্ড স্পিনার গ্রায়েম সোয়ান বলেন ‘আমির খেলাটির নৈতিকতা গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। ২০১০ এর দুর্নীতির জন্য আমিরকে আজীবন নিষিদ্ধ করা উচিত ছিল। খেলাটাকে রক্ষা করতে চাইলে, তরুণদের উৎসাহিত করতে চাইলে, কোন দুর্নীতিগ্রস্ত খেলোয়াড়ের এখানে জায়গা হতে পারে না।’ তিনি অনেকটা দুঃখের সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমির যা করেছে তাতে অবশ্যই তাকে ক্রিকেট থেকে আজীবন নিষিদ্ধ করা উচিত ছিল।’ ইংল্যান্ডের অধিনায়ক কুক বলেছেন, লর্ডসে আমির দর্শকের ক্ষোভের মুখে পড়তে পারেন। মিসবাহর বক্তব্য, ‘প্রত্যেকে তার মতামত দিতে পারে। কিন্তু সে (আমির) ফেরায় তাকে আমরা সবাই সমর্থন দিচ্ছি। এসব বিষয় নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই।’ আমির অবশ্য পাশে পাচ্ছেন ওয়াসিম আকরামকে। সাবেক এই গ্রেট পাকিস্তানী পেসার বলেন, ‘ইংল্যান্ড সিরিজ সামনে রেখে আমিরকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। হওয়াটাই স্বাভাবিক। ওর প্রতি আমার উপদেশ, বাইরের বিষয় নিয়ে কোনরকম মাথা না ঘামিয়ে কেবল সেরাটা দিয়ে বোলিং করে যেতে হবে। জানি কাজটা কঠিন তবে, পাকিস্তান বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দেয়ার সামর্থ্য ওর রয়েছে।’ এবার বল হাতে আমিরই পাকিস্তানের সেরা অস্ত্র হবে বলেও মনে করেন জীবন্ত কিংবদন্তি। আমির নিজেও সাদা পোশাকের প্রত্যাবর্তনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে চান, ‘যদি সত্যি বলি, এভাবে ফেরার কথা কখনও ভাবতে পারিনি। পাকিস্তানের হয়ে আবার টেস্ট খেলতে পারব বলে নিজেকে অসম্ভব ভাগ্যবান মনে করছি। সাদা পোশাকের ক্রিকেট নিয়ে আমি শিহরিত। সেই লর্ডস দিয়ে ফিরতে পারছি বলে শিহরণটা আরও বেশি। অপরিণত বয়সে (১৮ বছর) করা এক মারাত্মক ভুলে এখানেই আমার ক্যারিয়ার থেমে গিয়েছিল। হয়ত কাকতালীয়, কিন্তু ২০১০ সালে যেখানে থামতে হয়েছিল সেখান থেকে শুরু করতে পারাটা হবে আশীর্বাদ। স্পষ্ট মনে করতে পারি, ওই সিরিজে কিছু কাজ বাকি ছিল, এবার সেটা শেষ করতে চাই। আমরা একমাত্র লক্ষ্য সিরিজের সেরা বোলার হওয়া, পাকিস্তানকে জয়ী হতে সাহায্য করা এবং চমৎকার স্মৃতি নিয়ে শুরু করা। যা আমাকে নতুন পথের দিশা দেখাবে।’ জেল-জরিমানা-সংশোধন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে-টি২০তে ফেরেন আমির। তাকে দলে নেয়া নিয়ে শেষ মুহূর্তেও নাটক কম হয়নি। কার্যত দলের খেলোয়াড় এবং ম্যানেজমেন্ট দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছিল। প্রত্যাবর্তনের পর সেই আমির জানিয়েছেন, তার জীবনে এখন দুটিই লক্ষ্য, প্রথমত মাঠে উইকেট শিকার করে পাকিস্তানকে জেতানো এবং পুনরায় ভক্ত হৃদয়ে জায়গা করে নেয়া। অধিনায়ক মিসবাহও থাকছেন আলোচনায়। বয়স ৪২-এর দোড়গোড়ায়। তিনিই বর্তমানে খেলে যাওয়া বয়স্ক টেস্ট ক্রিকেটার। অথচ এতটুকো সঙ্কোচ নেই, নেই বিতর্কও। ফর্ম-ফিটনেসের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নেতৃত্বে-ব্যাটিংয়ে এখনও বাইশ গজ মাতিয়ে চলেছেন মিসবাহ-উল হক।
×