ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বিস্তর টেস্ট হচ্ছে না, বাংলাদেশের পাশে ভারতও

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১১ জুলাই ২০১৬

দ্বিস্তর টেস্ট হচ্ছে না, বাংলাদেশের পাশে ভারতও

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এ যাত্রায় তাহলে বেঁচেই যাচ্ছে বাংলাদেশ। ক্রিকেটের কোন বিষয়ে ভারতের ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) যদি বিপক্ষে থাকে, তাহলে কী সেই বিষয়টিতে ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসিও কিছু করতে পারে? পারে না। দ্বিস্তর টেস্ট নিয়ে বোধ হয় তাই হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পাশেই আছে ভারত। দ্বিস্তর টেস্ট নিয়ে বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে ভারতও। আর তাতে বোঝাই যাচ্ছে, ভারতের বিরোধিতা হওয়ায় দ্বিস্তর টেস্ট আপাতত হচ্ছে না। তাতে বাংলাদেশ যে সহযোগী দেশগুলোর বিপক্ষে টেস্ট খেলার সম্ভাবনায় ছিল, তা থেকে মুক্তি মিলে যাচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেটের মহারথী দলগুলোর বিপক্ষেই যতটা সম্ভব টেস্ট খেলে যাবে বাংলাদেশ। গত রবিবার স্কটল্যান্ডে আইসিসির সভা হয়। সভা শেষে দেশে ফিরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছিলেন, আইসিসির সভায় নাকি কেবল বাংলাদেশই বিতর্কিত দ্বিস্তর টেস্ট নীতির বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, ক্রিকেটের সবচেয়ে শক্তিধর বোর্ড ভারতও এর বিরোধিতা করেছে। ভারতীয় গণমাধ্যমেই উঠে আসছে এমন কথা। আইসিসির সভায় বাংলাদেশ নাকি মোটেই একঘরে হয়নি, পাশে পেয়েছিল ভারতকেও। ভারতের সর্বাধিক প্রচারিত ও অন্যতম প্রভাবশালী ইংরেজী দৈনিক পত্রিকা দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে তারা দাবি করছে আইসিসির সভায় বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) সমর্থন জানিয়েছিল দ্বিস্তর টেস্ট ক্রিকেট সিস্টেমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থানকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিসিসিআই উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা সবসময়ই ক্রিকেটের বিশ্বায়ন ও উন্নতির পক্ষে। কিন্তু দ্বিস্তর টেস্ট নীতি অনেক উঠতি দেশের জন্য সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে। এজন্যই আমরা আইসিসির সভায় এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলাম।’ ধারণা করা যাচ্ছে, বিসিসিআইয়ের আপত্তির কারণেই এবারের সভায় দ্বিস্তর টেস্ট নীতির বিষয়ে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি আইসিসি। এছাড়া টাইমস অব ইন্ডিয়ার দাবি, বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়াও এশিয়ার অন্য দুই দেশ পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কাও আইসিসির সভায় নিজেদের আপত্তির কথা ব্যক্ত করেছিল। যা বোঝা যাচ্ছে, অন্য যারাই দ্বিস্তর টেস্ট ক্রিকেটের বিরোধিতা করুক, ভারত এর সঙ্গে থাকায় দ্বিস্তর টেস্ট হবে না। তবে দ্বিস্তর টেস্ট নীতির ভাগ্য এখনও দোদুল্যমান। শেষ পর্যন্ত কি এর ভবিষ্যত, তা হয়ত জানা যাবে সেপ্টেম্বরের শুরুতে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য আইসিসির নির্বাহী কমিটির ওয়ার্কশপে, যেখানে এ প্রস্তাবনার পক্ষে-বিপক্ষে একটি ভোটাভুটি হওয়ার কথা। নিয়ম অনুযায়ী, আইসিসির পূর্ণ সদস্য দশটি দেশের বোর্ড অংশ নেবে ভোটে। যদি কোন প্রস্তাবনার পক্ষে অন্তত ৮ ভোট পড়ে, কেবলমাত্র তবেই গৃহীত হবে সে প্রস্তাবনাটি। বোঝাই যাচ্ছে, এশিয়ার চার দেশ এর বিপক্ষে থাকবে। ১০ দেশের মধ্যে দ্বিস্তর টেস্টের বিপক্ষে ৪ (বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা) নিশ্চিত ভোট পড়তে যাচ্ছে। তাহলে তো দ্বিস্তর টেস্ট হওয়ারই কথা না। বাংলাদেশ ও ভারতের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে গেল। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাও যে এর বিপক্ষে আছে, তা যত দিন যাচ্ছে; আর খোলাসা হচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেটে কোন নিয়মের পরিবর্তন চায় না পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি), তা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন পিসিবির চেয়ারম্যান শাহরিয়ার খান। শ্রীলঙ্কাও দ্বিস্তর টেস্টের বিপক্ষে রয়েছে। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট বোর্ডও তা বুঝিয়ে দিয়েছে। শ্রীলঙ্কা বোর্ডের প্রধান কর্তা সামাথিপালা দ্বিস্তর ক্রিকেট নিয়ে বলেছেন, ‘শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দ্বিস্তর টেস্ট ক্রিকেটকে সমর্থন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা এসএলসির (শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড) ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর হবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আপনি যদি পূর্ণ সদস্য হন, তাহলে সেখানে দুটি স্তর থাকতে পারে না। এর একটা কারণ, ক্রিকেটের অর্থনীতির স্থায়ীত্ব ধরে রাখা। যদি ভারত আট নম্বরে নেমে যায়, কি হবে?’ দ্বিস্তর ক্রিকেট হচ্ছে টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ সাত দল প্রথম স্তরে টেস্ট ম্যাচ খেলবে। বাকি তিন দলের সঙ্গে আরও দুটি যোগ হয়ে মোট পাঁচ দল খেলবে দ্বিতীয় স্তরের টেস্ট। দ্বিপক্ষীয় ম্যাচের ফলের ওপর ভিত্তি করে দুই স্তরেই উত্তরণ এবং অবনমনের ব্যবস্থাও রয়েছে। র‌্যাঙ্কিংয়ে ৭ এ অবস্থান করছে শ্রীলঙ্কা। যে কোন মুহূর্তে এ র‌্যাঙ্কিংয়ের পতন ঘটতেও পারে। আটে অবস্থান করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবস্থা আরও করুণ। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও বোধদয় হচ্ছে। তারাও এর বিপক্ষেই আছে। তবে সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হতে পারে, বাংলাদেশের পাশে আছে ভারত। যে জন্য আইসিসির দ্বিস্তর টেস্ট ধারণাই যে ঝুলে যাবে, তা আর না বোঝার কোন কারণ নেই।
×