স্কুলে গেলে বা বাইরে খেলতে গেলে টুনি টুটুলের সব কিছু এলোমেলো করে ফেলে। বাসায় এসে এ অবস্থা দেখে টুটুলের মন বেজায় খারাপ হয়ে যায়। টুটুলের পড়ার টেবিল, ট্যাব, ল্যাপটপ, ভিডিও গেম এমন কি বিছানাপত্রও টুনির ব্যবহার করতে ভালো লাগে। এই নিয়ে টুটুল অনেকবার টুনিকে নিষেধ করেছে। বাবা-মায়ের কাছেও বিচার দিয়েছে। তাতে কোন লাভ হয়নি। টুটুল বাসা থেকে বের হলেই টুনি আপন মনে তার কাজ চালিয়ে যায়।
আগে টুটুল বাসায় এসে টুনিকে এসব নিয়ে জিজ্ঞেস করলে কোন জবাব দিতো না। এখন তার জিনিসপত্র কে এলোমেলো করেছে জানতে চাইলে সোজাসাপ্টা জবাব দেয়,
-ভাইয়া তোমার বেড, চেয়ার, টেবিল থেকে শুরু করে সব কিছু খুশবু ধরে এলোমেলো করে। আমি নিষেধ করলেও ও শোনে না। আমি তোমার কিছু ধরি না। তুমি শুধু শুধু আমাকে দোষ দিচ্ছ। আগে আমি মাঝে মধ্যে ধরতাম...।
এভাবে একের পর এক বলে যায় টুনি। খুশবু হচ্ছে টুটুলদের বাসার কাজের মেয়ে। গত মাসে টুনিদের বাসায় গ্রাম থেকে ঢাকা এসেছে। এসে খুশবু এখনও নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি। খুশবু খুবই কম কথা বলে। তাকে দশ-বারোটি কথা বললে হয়তো একটি কথার জবাব দেয়। মনে হয় সে কথা বলতে পারে না।
টুনির এই অভিযোগ শুনে টুটুল খুশবুকে ডেকে জিজ্ঞেস করে,
-খুশবু তুমি কি আমার জিনিসিপত্র এলোমেলো করে রেখেছো?
খুশবু কোন জবাব দেয় না। সে টুটুলের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
-এই দেখ না ভাইয়া, খুশবু এই কাজ করেছে। তাই ও কোন কথা বলছে না।
টুনির কৌশলে খুশবুকে দোষ দেওয়ার কথা টুটুল বুঝতে পারলো। এবার টুটুল বলে,
-এখন না হয় খুশবু করেছে। খুশবু আমাদের বাসায় আসার আগে এই কাজ কে করতো?
এবার খুশবু মুখ খোলে। সে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য বলে,
-না ভাইয়া, মুই কোন কিছু ধরি নাই। বাসায় কাম শ্যাষ হইলে মুই টিভি দেহি...
খুশবুর মুখ থেকে এই কথা শুনে টুটুল অবাক হয়। খুশবু জিনিজপত্র এলোমেলো করেনি- সে জন্য অবাক হয়নি টুটুল। অবাক হয়েছে খুশবু কথা বলতে পারে ভেবে।
এরপর টুটুল বলে,
-আমি বুঝতে পেরেছি। আমার জিনিসপত্র কে এলোমেলো করে। যে আমার জিনিসপত্র এলোমলো করে আগামীকাল থেকে তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলতে পারবো।
-কিভাবে ধরবে ভাইয়া?
ভীষণ কৌতূহল নিয়ে জানতে চায় টুনি। খুশবু টুনির দিকে এক পলক চেয়ে রইলো।
এরপর টুটুল বললো,
-আমার কাছে একটি যাদুর মেশিন আছে। গতকাল আমার বন্ধু রকি দিয়েছে। ওর বাবা এটা রাশিয়া থেকে এনেছে। এখন থেকে বাইরে গেলে এ মেশিনটি নিয়ে যাবো। বাইরে বসেই আমি দেখতে পারবো বাসায় বসে কে কি করছে। এবং তা ভিডিও করেও রাখতে পারবো।
কথা বলতে বলতে টুটুল তার যাদুর মেশিনটি বের করলো। মেশিনটা দেখে টুনি মুহূর্তেই চোখ কপালো তুললো। এটা তো একটা ঘোড়া। ঘোড়ায় আবার কিভাবে সবকিছু দেখা যাবে?
-সত্যি বলছো তো ভাইয়া?
- হ্যাঁ, দেখা যাবে। খুব ভাব নিয়ে বললো টুটুল।
-আচ্ছা, ভাইয়া এ রকম একটা মেশিন আমাকে এনে দেবে। আমার খেলনাগুলো খুশবু ধরে এলোমেলো করে রাখে।
-না তোমাকে দেওয়া যাবে না। এ যাদুর মেশিন কেবল বড়রা ব্যবহার করতে পারে।
এবার টুনি তার দুই হাত উপরের দিকে তুলে নেচে নেচে বলে,
-ঠিক আছে আমি এখন থেকে আর কোন কিছু এলোমেলো করবো না।
অলঙ্করণ : আইয়ুব আল আমিন
শীর্ষ সংবাদ: