ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;যোগমায়া মালোর জবানবন্দী

আর্মি ও রাজাকাররা ১৫ মহিলাকে ধর্ষণ করে

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২৩ জুন ২০১৬

আর্মি ও রাজাকাররা ১৫ মহিলাকে ধর্ষণ করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত শরীয়তপুরের সোলায়মান মোল্লা ওরফে সলেমান মৌলভি ও ইদ্রিস আলী সরদারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পঞ্চম সাক্ষী যোগমায়া মালো জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, পাকিস্তানী সৈন্য ও রাজাকাররা ১৫ জন মহিলা ও ২০ পুরুষকে আটক করে। আমিসহ মহিলাদের মাদারীপুর জুটমিলে তিন দিন আটকিয়ে রেখে ধর্ষণ করে। আটক পুরুষদের হত্যা করা হয়েছে। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য আজ বৃহস্পতিবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এ আদেশ প্রদান করেছে। এ সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর (সাবেক জেলা জজ) হষিকেশ সাহা, প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। প্রসিকিউশন পক্ষের সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম যোগমায়া মালো। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৭৫ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম-দক্ষিণ মধ্যপাড়া, থানা-পালং (শরীয়তপুর সদর), জেলা-শরীয়তপুর। ১৯৭১সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি আমার স্বামীর বাড়িতে ঘর সংসার করতাম। ঐ সময় আমার স্বামী পেশায় একজন জেলে ছিল। সে সময় আমার স্বামীর বাড়িতে আমিসহ আমার তিন জা উষা, অঞ্জলী ও বিজয়া বসবাস করতাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় জ্যৈষ্ঠমাসের প্রথম দিকে কোন একদিন দুপুর বেলা মিলিটারি ও রাজাকাররা এসে আমাদের দক্ষিণ মধ্যপাড়া গ্রাম ঘেরাও করে। ঐ সময় আমাদের গ্রামের বেশির ভাগই হিন্দু ছিল। মিলিটারি ও আসামি রাজাকার মোঃ সোলায়মান মোল্লা ও ইদ্রিস আলী সরদারসহ অন্য রাজাকাররা আমাকেসহ ১৫ জন মহিলা ও ২০ জন পুরুষকে ধরে আমাদের বাড়ির উঠানে এনে আটক করে রাখে। তারপর তারা বাড়ির সব ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। সাক্ষী আরও বলেন, বাড়ি পুরিয়ে দেয়ার পর পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা আমাকেসহ আটককৃত পুরুষ ও মহিলাদের আঙ্গারিয়া বাজার লঞ্চঘাটে নিয়ে এসে লঞ্চ যোগে মাদারীপুর জুট মিলে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে পুরুষ ও মাহিলাদের আলাদা আলাদা করে আটক রাখা হয়। আমাদের আটকৃত মাহিলাদের কারও কারও সাথে তাদের বাচ্চা ছিল। আটককৃত মহিলাদের মধ্যে আমার ৪ জা ছাড়াও জ্যোৎস্না, আরতী, অঞ্জু, কমলাও ছিল। অন্য মহিলাদের নাম এখন আমার স্মরণে নাই। আটককৃত পুরুষদের মধ্যে পার্শ্বনাত, মহাদেব, আদারী মোলো ছিল। বাকিদের নাম স্মরণে নেই। পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা আমাদের জুটমিলে তিন দিন আটক রেখে ধর্ষণ করে। এর পর তারা আটককৃত মাহিলাদের লঞ্চ যোগে আঙ্গারিয়া পাঠিয়ে দেয়। তবে আমাদের সাথে আটককৃত পুরুষদের পাঠায় নাই। পরে শুনেছি তাদেরকে হত্যা করেছে। সাক্ষী বলেন, আমরা মহিলারা ছাড়া পেয়ে লঞ্চযোগে আঙ্গারিয়া বাজারে আসার পর তখন বাজারের অবস্থানরত লোকজন আমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমরা তাদের উল্লেখিত ধর্ষণের ঘটনা বলি। এর পর আমরা বাড়িতে এসে আমাদের বাড়িঘর পোড়া অবস্থায় দেখি। তখন আমরা প্রতিবেশী মুসলমান বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেই। এর কয়েকদিন পর আমরা সকলেই ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেই। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর আমরা পুনরায় আমাদের বাড়িতে চলে আসি।
×