ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

জাকারিয়া স্বপন

২৬ বিলিয়ন ডলারের লিঙ্কডইন এবং আমাদের প্রেক্ষাপট

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২০ জুন ২০১৬

২৬ বিলিয়ন ডলারের লিঙ্কডইন এবং আমাদের প্রেক্ষাপট

গত সপ্তাহে মাইক্রোসফট পুরো বিশ্বে বোমা ফাটানোর মতো একটি সংবাদ তৈরি করেছে। তারা ২৬.২ বিলিয়ন ডলার ক্যাশ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম লিঙ্কডইন কিনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সংবাদটি আগে থেকে খুব একটা টের পাওয়া যায়নি। খুব গোপনীয়তা বজায় রেখেই কাজটি করা হয়েছে। এটা শুধুমাত্র হাইটেক শিল্পকে নয়, পুরো বিশ্বের বিজনেস কমিউনিটিকে নাড়া দিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী মাইক্রোসফট প্রতি শেয়ারে লিঙ্কডইনকে ১৯৬ মার্কিন ডলার পরিশোধ করবে। অধিগ্রহণের পরও লিঙ্কডইনের বর্তমান প্রধান নির্বাহী স্বপদে বহাল থাকবেন। তবে এখন থেকে তিনি মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলার কাছে রিপোর্ট করবেন। তবে লিঙ্কডইন তার নিজের ‘স্বতন্ত্র ব্র্যান্ড, সংস্কৃতি ও স্বাধীনতা বজায় রাখবে।’ চুক্তিটি এ বছরই সম্পূর্ণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অধিগ্রহণের পরপরই শেয়ার মার্কেটে লিঙ্কডইনের শেয়ার মূল্য অন্তত ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। নাদেলা সোমবার এক ই-মেইল বার্তায় মাইক্রোসফট কর্মীদের এ অধিগ্রহণের খবর জানান। অন্যদিকে লিঙ্কডইন প্রধান নির্বাহী জেফ উইনারও তার কর্মীদের এ চুক্তির খবর ই-মেইলে জানান। নাদেলা তার ই-মেইল বার্তায় লেখেন, ‘এই চুক্তিটি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ প্রফেশনাল ক্লাউডকে বিশ্বের সেরা প্রফেশনাল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করল। লিঙ্কডইন টিমের যে একটি অসাধারণ ও পরিণত ব্যবসা আছে সে সম্পর্কে আমি সম্পূর্ণ পরিষ্কার। বিশ্বব্যাপী ৪৩৩ মিলিয়ন পেশাদার এ্যাকাউন্ট নিয়ে একটি চিত্তাকর্ষক নেটওয়ার্ক এটি।’ লিঙ্কডইন নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার যোগাযোগ মাধ্যম। কিন্তু মাইক্রোসফটের সঙ্গে তাদের ভবিষ্যত কেমন হতে পারে তা নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি এমন একটি বিশাল ঘটনার চারপাশটা একটু দেখে নেয়া যেতে পারে। ১. বিল গেটস গতকাল বলেছেন, এটা খুবই ভাল একটি ট্রানজেকশন। লিঙ্কডইন (মাইক্রোসফটের জন্য) অনেক কিছু নিয়ে আসছে। ২০১৪ সালের পর থেকে যদিও বিল গেটস মাইক্রোসফটের নিত্যদিনের কাজকর্ম থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন, তবে তিনি বিভিন্ন স্ট্র্যাটিজিক বিষয়ে সাজেশন দিয়ে থাকেন। যেমন কিছুদিন আগেই ‘সø্যাক’ নামের একটি চ্যাট স্টার্টআপ ৮ বিলিয়ন ডলার দিয়ে কেনার পরিকল্পনা বাতিল করে দেন বিল। তিনি মনে করেন, স্কাইপ দিয়ে একই কাজ করতে পারা উচিত। ২. তবে লিঙ্কডইনের প্রধান নির্বাহী জেফ ওয়েনার তার কর্মীদের উদ্দেশে খুবই আবেগতাড়িত বক্তৃতা দেন। পুরো বিষয়টি তাদের কর্মীরাও জানত না। এটা মূলত সম্পাদনা করেন সিইও জেফ ওয়েনার এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান রিড হফম্যান। প্রাথমিকভাবে ই-মেইলে বিষয়টি কর্মীদের জানানোর পর তিনি কর্মীদের সঙ্গে অল-হ্যান্ডস মিটিংয়ে মিলিত হন। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা তাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে সিইও-এর মুখ থেকেই শুনতে চাইছিল। কথা বলতে গিয়ে তার গলা বেশ ধরে এসেছিল এবং তিনি সেটা স্বীকার করে বলেন, আমি যদি বক্তৃতা দিতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে উঠি দয়া করে সেটাকে ভুল বুঝবেন না। এটা কোনরকম দুঃখবোধ থেকে আসছে না। এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে, এখানে কোন খারাপ কিছু রয়েছে। এটা আসছে তোমাদের প্রতি গভীর অনুভূতি থেকে, তোমাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে। তোমরা জানো আমি এই প্রতিষ্ঠানকে ভালবাসি এবং কতটা তোমাদের ভালবাসি। আমরা যা তৈরি করেছি এবং করতে থাকব তার জন্য তোমাদের ধন্যবাদ। ৩. একজন সিইও তার প্রতিষ্ঠানকে যতই ভালবাসেন না কেন বাস্তবতা হলো, তাকে কোন না কোন ডিলে যেতেই হয়। সেলসফোর্স.কম নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানও লিঙ্কডইনকে কিনতে চেয়েছিল। সেলসফোর্স.কম নিজেও সফল একটি প্রতিষ্ঠান। তারা মাইক্রোসফটের কাছে হেরে যায়। ঠিক কত ডলারে তারা অফার করেছিল তা জানা যায়নি। তবে এখানে বলে রাখা যেতে পারে যে, সেলসফোর্সের মার্কেটক্যাপ হলো প্রায় ৫৬ বিলিয়ন ডলার। সেক্ষেত্রে মাইক্রোসফট সেলসফোর্সের মূল প্রতিষ্ঠানের দামের প্রায় অর্ধেক দামে লিঙ্কডইনকে কিনেছে। মাইক্রোসফটের কাছে ১০৮ বিলিয়ন ডলার ক্যাশ রয়েছে। তাই তাদের সঙ্গে কারও পেরে ওঠা খুব কঠিন ছিল। ৪. এটা ছিল বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কেনাবেচার ডিল। আসলেই কি লিঙ্কডইনের মূল্য ২৬ বিলিয়ন ডলার? কী আছে লিঙ্কডইনের, যার জন্য এত বিশাল অঙ্কের ক্যাশ দিতে হলো? যারা নিয়মিত লিঙ্কডইন ব্যবহার করেন তারা হয়ত ভাবছেন এটা তো হতেই পারে! কিন্তু যারা এই টুলসটি ব্যবহার করেন না তাদের কাছে তো এটা শুধুই একটি সফটওয়্যার, যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো চাকরির সংবাদটি পেয়ে থাকে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মতো যোগ্য লোককে নিয়োগ দিতে পারে। খুব সত্যি করে বললে বলতে হয়, লিঙ্কডইন যেমন একটি দারুণ প্রতিষ্ঠান নয়, মাইক্রোসফটও নয়। লিঙ্কডইন মূলত চাকরি পেতে সাহায্য করে এবং প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য লোক পেতে সাহায্য করে। কেউ যদি খেয়াল করেন তাহলে বুঝতে পারবেন মাইক্রোসফটের মূল সাফল্য আসে সেই পিসির জন্য সফটওয়্যার বিক্রি থেকে। পরবর্তীতে মাইক্রোসফট আরও অনেক ধরনের ব্যবসা করার চেষ্টা করেছিল। এমনটি সাম্প্রতিক নোকিয়া কিনে মোবাইলে আসার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোথাও তেমন সাফল্য আসেনি। যেমন ২০০৭ সালের আগস্টে ৬.২ বিলিয়ন ডলার দিয়ে কিনেছিল বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান একোয়ানটিভ। কিন্তু ২০১২ সালের জুলাই মাসেই পুরো ডিল রাইট-অফ করে দেয়। টাকাটা জলে গেল। আবার ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৭.২ বিলিয়ন ডলার দিয়ে নোকিয়ার মোবাইল ইউনিট কিনে নেয় মাইক্রোসফট। কিন্তু ২০১৫ সালের জুলাইতে এসে পুরো ডিলকে রাইট-অফ করতে হয়। আবারও টাকা জলে গেল। ২০১১ সালের মে মাসে ৮.৫ বিলিয়ন ডলার দিয়ে স্কাইপ কিনে নেয় মাইক্রোসফট। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ নিশ্চিত নয়, এই স্কাইপ তাদের জন্য ঠিক কী ভ্যালু নিয়ে এসেছে এবং ২০০৮ সালে ৪৪.৬ বিলিয়ন ডলারে ইয়াহুকে কিনতে গিয়েছিল মাইক্রোসফট। কিন্তু সেটা ঠিক কাজ করেনি। সেই ইয়াহুর বর্তমান বাজারদর ৩ বিলিয়ন ডলার। মাইক্রোসফট যদি অত ডলার দিয়ে কিনত তাহলে ইয়াহুকেও রাইট-অফ করতে হতো। কিন্তু বর্তমান সিইও নাদেলা মাইক্রোসফটকে ক্লাউডভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে চাইছেন। সেক্ষেত্রে মাইক্রোসফটের জন্য এটা খুবই ভাল একটি পদক্ষেপ। ৫. মাইক্রোসফটের জন্য ২৬ বিলিয়ন ডলার দেয়ার পেছনে আরেকটি কারণ হলো লিঙ্কডইনের ৪৩ কোটি গ্রাহকের তথ্য, যার ভেতর প্রায় ১০ কোটি মানুষ মাসে একবার হলেও লিঙ্কডইন ব্যবহার করে থাকেন। পাশাপাশি তাদের শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ স্মার্টফোন থেকে সাইটটি ব্যবহার করে থাকেন। এই বিরাট সংখ্যক মানুষের তথ্য কেনার জন্য মাইক্রোসফট গ্রাহক প্রতি দিয়েছে ২৫৫ ডলার (বাংলাদেশী টাকায় ২০ হাজারের বেশি)। ৬. মাইক্রোসফট লিঙ্কডইনকে কিনে নেয়ায় ক্ষমতার কিছুটা ভারসাম্য হয়েছে। যদি ফেসবুক এটাকে কিনে নিত তাহলে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হতো। বর্তমানে ফেসবুকের কাছে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফটো শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইনস্ট্রাগ্রাম। ফেসবুক এটাকে কিনলে বিশ্বের প্রফেশনালদের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্মটিও চলে যেত তাদের দখলে। এখন এটাকে নিয়ে মাইক্রোসফট যা ইচ্ছে করুক, ফেসবুক তো আর হাত বাড়াতে পারছে না। ৭. গুগল অবশ্য এই প্রতিষ্ঠানটিকে কিনতে পারত। গুগল অনেকদিন ধরেই নিজেদের একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম গুগলপ্ল্যাস তৈরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এটা তেমন একটা ট্রাকশন পায়নি। ফলে গুগলের জন্য এটা একটা ভাল সুযোগ ছিল। বাংলাদেশের জন্য কী? প্রযুক্তি খাতে এমন কেনাবেচা প্রায়ই হয়। এটা নতুন কিছু নয়। টাকার পরিমাণ একটু বেশি; কিন্তু এর চেয়েও পাগলামি তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি। পৃথিবীর ময়দানে এমন খেলা খেললে বাংলাদেশের তাতে কী? বাংলাদেশে মাইক্রোসফটের নিজস্ব অফিস রয়েছে এবং বাংলাদেশে লিঙ্কডইনের বেশ ভাল একটি ব্যবহারকারী রয়েছে। এ জন্য কি নতুন কোন আবহ বহন করে? মোটেও না। বাংলাদেশে লিঙ্কডইন ততটা জনপ্রিয় নয়; এবং লিঙ্কডইনের মতো একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বাজারকে পাত্তা দেয় না। এমনকি মাইক্রোসফটও বাংলাদেশকে পাত্তা দেয় না। প্রায় এক যুগের মতো সময় হলো মাইক্রোসফট বাংলাদেশে রয়েছে। কিন্তু তারা ছোট একটি সেলস অফিস করা ছাড়া আর কিছুই করেনি এই দেশে। যদিও মাইক্রোসফট যখন বাংলাদেশে অফিস খুলেছিল তখন এই দেশের মানুষের আগ্রহের সীমা ছিল না। তারও আগে বাংলাদেশে ছিল আইবিএম। বাংলাদেশে আইবিএমের কর্মকর্তার নিজেদের ভিন গ্রহের মানুষ মনে করতেন। তারা ভাবতেন, গলা থেকে টাই খুলে গেলে তো তারা মানুষ হয়ে গেলেন; তাই সদাসর্বদা স্যুট-টাই পরিহিত সেই মানুষগুলো বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশে কিছু করেননি। মাইক্রোসফটও করেনি। যদিও আমরা বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নিজের কাপড়টা পর্যন্ত খুলে দিতে প্রস্তুত কিন্তু তাতে লাভ হয়নি কিছুই। বরং এই দেশটা তাদের একটা বাজার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু তার পরেও এই প্রজন্মের হাইটেক প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন মার্জারে বাংলাদেশে ছোট একটি প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশে এখন অনেক মানুষ বিশ্বাস করেন এই দেশে স্টার্টআপ হতে পারে, এই দেশে গুগল, ফেসবুক কিংবা লিঙ্কডইনের মতো প্রতিষ্ঠান তৈরি হতে পারে। লিঙ্কডইনের এই বিশাল সাফল্য বাংলাদেশের অনেকের মনেই আশার আলো জাগিয়ে তুলতে পারে। অনেক বক্তৃতা এবং সভা-সমাবেশে এর উদাহরণ আসতে পারে। একটি কোম্পানি বানাতে পারলেই তো ২৬ বিলিয়ন ডলার- তাহলে তো আমাদের সফটওয়্যার খাত থেকে বিলিয়ন ডলার আয়ের পথটা আরও সহজ হয়ে গেল। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে এমন প্রতিষ্ঠান তৈরি হতে পারত। বাংলাদেশে এখন সবকিছু আছে- টাকা, বাজার এবং প্রযুক্তি। শুধু প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করার মতো জনবল এবং নেতৃত্ব নেই। বাংলাদেশ খুব সুন্দর একটি সময় পার করছে। এমন তরুণ জনসংখ্যায় ভরপুর একটি দেশে, যা খুশি তাই করা যেত। এই দেশের মানুষের যে ক্ষমতা এবং প্রতিভা তা দিয়ে বিশাল কিছু করা সম্ভব ছিল। এই সুযোগ বাংলাদেশ আর কখনই পাবে না। চীন এবং ভারত তাদের তরুণ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে দেশকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। আমরা সেটাকে কাজে লাগাতে পারছি না। এর মূল কারণ হলো শিক্ষা। বাংলাদেশের শিক্ষার মান ভয়াবহ রকমের পেছনে পড়ে গেছে। আমরা মানের থেকে সংখ্যায় জোর দিয়ে ফেলেছি। তাই মানসম্পন্ন জনবল তৈরি হচ্ছে না। এমনকি আমরা বিদেশেও পাঠাচ্ছি অদক্ষ শ্রমিক। এই জনবল যদি সুশিক্ষিত হতো তাহলে এদের সামনে আর কোন দেশ/জাতি দাঁড়াতে পারত কি না আমার সন্দেহ রয়েছে। লেখাপড়া এবং শিক্ষা নিয়ে দুটি বিষয় আমার মাথায় ঘুরপাক খায়। আমরা হয়ত সত্যিই ভাল মানসম্পন্ন লেখাপড়া এবং পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারছি না (আমাদের ক্ষমতা নেই); নয়ত বাইরের কোন শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই জনগোষ্ঠীকে অর্ধশিক্ষিত করে রাখার একটি বিশাল পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই দেশের একটি জেনারেশনকে যদি ভুলভাল শিখিয়ে পাস করিয়ে দেয়া যায়, তাহলে আর কারও কিছু করতে হবে না। নিজেরাই নিজেদের সঙ্গে মারামারি করে মরবে এবং বিশ্বে একটি অদক্ষ জনবল হিসেবে টিকে থাকবে; পাশাপাশি ভিন দেশের বাজার হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কেন জানি মনে হয় আমরা সেইদিকেই ধাবিত হচ্ছি। নইলে শিক্ষা এবং পরীক্ষা ব্যবস্থার এমন বারোটা বাজালাম কেন? যারা আমাদের ছেলেমেয়েগুলোকে এখনও মিথ্যা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন যে, তারা এই দেশে অর্ধশিক্ষিত জনবল নিয়েই গুগল, ফেসবুক, লিঙ্কডইন তৈরি করে ফেলতে পারে তাদের জন্য এবং সবার জন্য খুব কঠিন একটি কথা বলে রাখি- এই মিথ্যা স্বপ্ন দিয়ে হতাশা বরং বাড়বে। তখন আশাভঙ্গের চরম হতাশা এসে ভর করবে। এই দেশে লিঙ্কডইনের মতো প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হলে প্রথমেই লাগবে আন্তর্জাতিকমানের শিক্ষা এবং অসংখ্য বুদ্ধিমান কঠোর পরিশ্রমী মানুষ। এই দেশে শিক্ষার ভিত যেভাবে ভেঙ্গে পড়েছে তারপর আর এমন কথা বলার অর্থ হলো, সেই মানুষটি আসল বিষয়টি না জেনেই চাপাবাজি করছে। এই দেশে যদি সত্যিই তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কিছু করতে হয় তাহলে প্রথমেই ঠিক করতে হবে শিক্ষা ব্যবস্থা। সেটা যেদিন ঠিক হয়ে যাবে তার পরের দিন থেকে আমরা বাকি স্বপ্নগুলো দেখতে শুরু করতে পারি। ততদিন শুধু একটাই চাওয়া- লেখাপড়ার মানটুকু ফিরে আসুক। প্রাইমারী স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত, সর্বত্র। এর কোন বিকল্প ছিল না, এখনও নেই। ১৮ জুন ২০১৬, ব্যাঙ্কক থেকে লেখক : তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ুং@ঢ়ৎরুড়.পড়স
×