রহিম শেখ ॥ রোদ-বৃষ্টি, যানজট উপেক্ষা করেই ঈদের কেনাকাটার যুদ্ধে শামিল হচ্ছেন ক্রেতা। ক্রেতার এই বাড়তি চাপ দেখে বিক্রেতারাও খুশি। বেচাকেনা নিয়ে খুব বেশি সন্তুষ্ট না হলেও সামনের দিনগুলো নিয়ে আশাবাদী তারা। বিক্রি বাড়াতে লটারি, বিশেষ ছাড় কিংবা ফ্রি উপহার দিয়ে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছেন দোকানিরা। পোশাক থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক্স, ফার্নিচার এমনকি বিউটি পার্লারেও চলছে বিশেষ ছাড় ও নগদ মূল্যছাড়। কেউ দিচ্ছেন একটা কিনলে একটা ফ্রি। দেয়া হচ্ছে লাকি কুপন, স্ক্র্যাচ কার্ড যাতে পুরস্কার হিসেবে থাকছে সোনা, হীরা, গাড়ি, ফ্ল্যাট, টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেলসহ অসংখ্য পুরস্কার। বিক্রেতারা বলছেন, মূল্যছাড় কিংবা ফ্রি কিছু থাকলেই ক্রেতা নির্দিষ্ট মার্কেট ও পণ্যের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, এটা-ওটা ফ্রি ও লটারি দিয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছেন বিক্রেতা। যা এক ধরনের প্রতারণার শামিল।
রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ও ফ্যাশন হাউস ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা আকর্ষণে প্রায় সব বড় শপিংমলে নানা অফার দিয়ে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। আছে স্পেশাল অফার। মূল্য ছাড়ের ঘোষণাও আছে চটকদার ব্যানার-ফেস্টুনে। দোকানে দোকানে লটারির টিকেট আর মার্কেটের প্রধান ফটকে রাখা আছে টিকেটের ফয়েল ফেলার নজরকাড়া বাক্স। মার্কেটগুলোতে মাইকিং করে চালানো হচ্ছে প্রচার। মার্কেটভেদে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকার পণ্য কিনলে ১টি অথবা সর্বোচ্চ ১০টি কুপন দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া ২০ হাজার টাকার পণ্য কিনলে ২ হাজার টাকা ছাড় থেকে শুরু করে আরও কত কি? আর এতে পুরস্কার হিসেবে রয়েছে গাড়ি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেল, ল্যাপটপ, এলইডি টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন, মোবাইল সেট, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, স্ট্যান্ড ফ্যান, সোনা ও হীরার গহনা এমনকি ফ্ল্যাটসহ নানা ধরনের পুরস্কার। নগরীর যে সব মার্কেটে ঈদ বিক্রয় উৎসবের এসব অফার দেয়া হচ্ছে বসুন্ধরা সিটি মার্কেট তার মধ্যে উল্লেযোগ্য। ‘প্রতি ৫০০ টাকার পণ্যের কেনাকাটা ‘গরমা গরম ইনস্ট্যান্ট গিফট’ এমন সেøাগানে ৪ জুন থেকে স্ক্র্যাচ কার্ড দিচ্ছেন বিক্রেতারা। এমন আয়োজন চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত। পণ্য কেনার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিদিন শতশত পুরস্কার দিচ্ছেন আয়োজকরা। বিক্রেতারা জানালেন, প্রথম পুরস্কার বিজয়ী ক্রেতাকে ১৫০০ সিসির ব্রান্ড নিউ টয়োটা কার দেয়া হবে। পুরস্কার হিসেবে আরও আছে ডায়মন্ড সেট, সোনার রিং, হীরার গহনা, থাইল্যান্ডে ৩ দিন ২ রাতের এয়ার ট্রিপসহ ট্যুর প্যাকেজ, ১০০ সিসির টিভিএস স্কুটার, ল্যাপটপ, এলইডি টিভি, মাইক্রোওভেন, মোটরবাইক ও হাতঘড়ি।
এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিংমলখ্যাত যমুনা ফিউচার পার্ক শপিংমলে মাত্র ‘৫০০ টাকার কেনাকাটা করে জিতে নিন কোটি টাকার পুরস্কার’ সেøাগানে ক্রেতাদের দেয়া হচ্ছে ১টি কুপন। শপিংমলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কুপনের এ অফার চলবে চ৭াদরাত পর্যন্ত। একজন ক্রেতা একটি দোকান থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টি কুপন নিতে পারবেন। পুরস্কার হিসেবে থাকছে গাড়ি, মোটরসাইকেল, ডায়মন্ডের গহনা সেট, সোনার গহনা, এয়ারকন্ডিশন, এলইডি টিভি, ল্যাপটপ, রেফ্রিজারেটরসহ শতশত পুরস্কার। যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবসায়ীরা জানালেন, ঈদের কেনাকাটার সঙ্গে ক্রেতাকে বাড়তি আনন্দ দেয় ঈদ বিক্রয় উৎসবের লটারি। এখানে যা লেখা হয় পুরস্কারের মাধ্যমে তাই দেয়া হয়। এদিকে কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি শপিং কমপ্লেক্স, ফরচুন শপিংমল, ইস্টার্ণ প্লাস, ইস্টার্ণ মল্লিকা, রাপা প্লাজাসহ রাজধানীর কয়েকটি মার্কেটেও এমন প্রচার চলছে। এছাড়া রাজধানীর অদূরে উত্তরার আমির কমপ্লেক্স, ট্রপিক্যাল আলাউদ্দিন টাওয়ার ও উত্তরা টাওয়ারে কেনাকাটা করলে ক্রেতারা পাচ্ছেন ঈদে ফ্যান্টাসি কিংডমে যাওয়ার ডিসকাউন্ট কুপন। রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি অন্যান্য জেলাতেও চলছে এমনসব পুরস্কারের অফার। রাজধানীর বড় বড় শপিংমলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছোট ছোট মার্কেট ও ফ্যাশন হাউসে দেয়া হচ্ছে বিশেষ ছাড় বা মূল্যছাড়। বিভিন্ন পোশাক ক্রয়ের ওপর ১০ থেকে ৩০ শতাংশ বিশেষ ছাড় দিচ্ছে নামী-দামী বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস। এছাড়াও পোশাক ক্রয়ে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘বিকাশ’ ব্যবহারে ১০ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, সিটি ব্যাংকের ডেবিট কার্ড ব্যবহার করলে মিলছে ১০ শতাংশ মূলছাড়। সিটি ব্যাংকের কার্ডে রয়েছে ১৫ শতাংশ ক্যাশ ব্যাকের সুযোগ। এছাড়াও কয়েকটি বিপণিবিতান ক্রয়ের ওপর দিচ্ছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়।
সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতারাও এমন সব অফার লুফে নিচ্ছেন। লটারিতে নিজের নাম এবং মোবাইল নম্বর লিখে কুপনের বাকি অংশ বাক্সে ফেলছেন। শনিবার সকালে বসুন্ধরা সিটির তৃতীয় তলায় কথা হয় আমিনুল ইসলাম ও তামান্না জেনিফার দম্পতি সঙ্গে। আমিনুল জানান, ঈদে পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করেছি। ছোটদের পোশাক তুলনামূলক দাম এবার একটু বেশি। তবে প্রায় প্রতিটি পণ্যে বিক্রেতা স্ক্র্যাচ কার্ড দিচ্ছেন। কিন্তু কোনটিতেই কিছু পেলাম না। প্রায় ৩০টি কার্ড ঘষে দেখলাম লেখা ‘ধন্যবাদ আবার আসবেন’। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এটা-ওটা ফ্রি ও লটারি দিয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছেন বিক্রেতা। এদিন রাজধানীর মিপুরের শেওড়াপাড়া থেকে বসুন্ধরা সিটিতে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন গৃহিণী আদিবা ইসলাম। তিনি জানান, পরিবারের সবার জন্যই ড্রেস কিনেছি। কিন্তু দাম গতবারের তুলনায় একটু বেশি। তিনিও অভিযোগ করে বলেন, ফ্রি দেয়ার নামে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছেন বিক্রেতা। তবে শুধু পোশাক নয়, ফার্নিচার, ইলেকট্রনিক্স, জুতার দোকান এমনকি পার্লারেও দেয়া হচ্ছে নানা অফার। ঈদ উপলক্ষে অটবি, হাতিল, আকতার, পারটেক্স, ব্রাদার্সসহ প্রায় সব ফার্নিচার শোরুমে ৫ থেকে ২০ শতাংশ মূল্যছাড় দেয়া হচ্ছে। সিঙ্গার তাদের প্রত্যেকটি শোরুমের সব পণ্যের স্ক্রাচ কার্ডের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে। আরও থাকছে বিশেষ উপহার। এ ছাড়াও অবিশ্বাস্য অফারে ওয়ালটন, মার্সেল, সনি র্যাংগস, স্যামসাং টিভি, ফ্রিজ, এয়ারকুলার, ডিভিডি প্লেয়ার, ক্যামেরা, সাউন্ড বক্স, ওয়াশিং মেশিন, কিচেন এ্যাপ্লায়েন্স ও মাইক্রো ওভেন বিক্রি করছে। এছাড়া বিভিন্ন সোনা ও হীরার শো-রুম ছাড়া বিউটি পার্লারে ফেসিয়াল ও হেয়ার কাটের ওপর ছাড় দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
