ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মন্দির মঠ গির্জার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৯ জুন ২০১৬

মন্দির মঠ গির্জার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশের ধর্মীয় উপাসনালয় ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষায়িত সকল টিম। সম্প্রতি দেশে বিভিন্ন ধর্মের উপাসনালয়ের বেশ কয়েকজন পুরোহিত ও ধর্মযাজককে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের এক ধর্মগুরুকে ধর্মপ্রচারে নিষেধ করে হুমকি দেয়া হয়েছে। ধর্মপ্রচার করলে তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হবে বলে হুমকিদাতাদের পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে। শনিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্মকমিশনার আব্দুল বাতেন ধর্মীয় উপাসনালয়ের নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা জানান। তিনি বলেন, রামকৃষ্ণ মিশনের এক ধর্মগুরুকে হত্যার হুমকির বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুন সন্ধ্যায় আইএসের নামে চিঠি পাঠিয়ে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের এক গুরুকে ধর্মপ্রচার থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। হুমকিপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশ একটি ইসলামী রাষ্ট্র, এখানে ধর্মপ্রচার করা যাবে না। ধর্মপ্রচার থেকে বিরত না থাকলে তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আগামী ২০ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে হত্যা করা হবে বলে ওই পত্রে হুমকি দেয়া হয়েছে। ডিবির এই কর্মকর্তা বলছেন, ইতোমধ্যেই হুমকি দিয়ে পাঠানো সেই চিঠির পর্যালোচনা চলছে। একটি প্যাডের পাতায় লিখে হুমকি দেয়া হয়েছে। এভাবে হুমকি দিয়ে কোন জঙ্গীগোষ্ঠীর কাউকে হত্যা করার নজির নেই। তারপরও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। কারণ হুমকির বিষয়টি সর্ম্পকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যদিও তিনি এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। হুমকির বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করা হচ্ছে। অভিযানের বিষয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি সপ্তাহব্যাপী সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান চলে। এছাড়া অনেক জঙ্গী গ্রেফতারও হয়েছে। তাদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পাওয়া গেছে। এজন্য সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে সব ধর্মের উপাসনালয় এবং এসব উপাসনালয়ের সঙ্গে জড়িতদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সারাদেশেই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তবে বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখা হয়েছে রাজধানীর উপাসনালয়গুলো। সাঁড়াশি অভিযান যথেষ্ট সফল হয়েছে। জঙ্গীবাদ এবং এর বিস্তারসহ নানা বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া গেছে। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, বিদেশী, ব্লগার, প্রকাশক, পুলিশ ও পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যা এবং ধর্মীয় উপাসনালয়ের সঙ্গে জড়িতসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হত্যার হুমকির প্রেক্ষিতে সারাদেশেই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারিও বেড়েছে। বিশেষ করে গুলশান কূটনৈতিক পাড়া, নাটোর জেলার খ্রীস্টান পল্লী, মন্দির, বৌদ্ধদের মঠসহ বিভিন্ন উপাসনালয় ঘিরে সর্তক নজরদারি চলছে। সেই সঙ্গে বহু উপাসনালয়ে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সড়ক, মহাসড়কে নিয়মিত চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চলছে। ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পথগুলোতে বসছে তল্লাশি চৌকি। স্থান বিবেচনা করে অনেক উঁচু ভবনের ছাদে ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। অনেক স্থাপনার প্রবেশ পথে আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর বসেছে। বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রয়েছে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, জাতীয় জাদুঘর, ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, সচিবালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। নিরাপত্তার পাশাপাশি টার্গেট কিলিং ঠেকাতে কৌশলী অভিযানের পাশাপাশি উগ্র মৌলবাদী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নজরদারি চলছে।
×