ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সবজির দামে বিস্তর ফারাক

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৪ জুন ২০১৬

সবজির দামে বিস্তর ফারাক

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ গত কয়েক বছর ধরে শীত কিংবা গ্রীষ্মকালীন সবজিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন রাজশাহীর পবা ও মোহনপুরের কৃষক। বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে ফসলের মাঠ সবখানেই সবজি আর সবজি। বিশেষ করে লাউ, কুমড়া, পটল, ঝিঙা, বেগুন, করলা, শসা তরাইসহ গ্রীষ্মকালীন সবজিতে এখন ভরপুর দুই উপজেলা। এখানকার সবজি চাহিদা মেটাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাটবাজারের। শহরের হাটবাজারে চলতি রোজার মাসে এসব সবজির দাম আকাশছোঁয়া হলেও মাঠের দর সম্পূর্ণ বিপরীত। ফসলের দাম মধ্যস্বত্বভোগীরা লুটে নিলেও ন্যূনতম দাম পাচ্ছেন না কৃষক। স্থানীয় বাজারের ৪০ টাকা মণ দরের ঢেঁড়স শহরের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি দরে। একইভাবে অন্য সবজির দামেও বিরাট ফারাক লক্ষ্য করা গেছে। সম্প্রতি জেলার মোহনপুর ও পবার বিভিন্ন পাইকারি হাটবাজার ও শহরের বাজারে ঘুরে সবজির দামের বিশাল ফারাকের চিত্র পাওয়া যায়। জেলার পবা উপজেলার নওহাটা বাজার থেকে রাজশাহী নগরীর কাঁচা বাজারের দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার। অথচ নওহাটা বাজারে যে পটল পাওয়া যাচ্ছে ১৪০ টাকা মণ দরে সেই পটল রাজশাহী শহরের বাজারে প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা দরে। নওহাটা বাজারের এক টাকা কেজি দরের ঢেঁড়স শহরের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে। বাজারের এ দামের তারতম্যের জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করেছেন ভোক্তারা। এছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণ না করার ফলও অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন কৃষক। জানা গেছে, রাজশাহী শহরের বাজারে ভোক্তাপর্যায়ে এক কেজি ঢেঁড়সের বর্তমান খুচরা মূল্য কমপক্ষে দশ টাকা, বেগুনের কেজি ৪০ টাকা, আকারভেদে একটি লাউ ২৫ থেকে ৩০ টাকা, শসার কেজি ৩০ টাকা। এগুলো উচ্চমূল্যে ভোক্তাপর্যায়ে বিক্রি হলেও উৎপাদক হিসেবে কৃষক দশ ভাগের একভাগ মূল্যও পাচ্ছে না। নওহাটার কৃষক বিপ্লব হোসেন বলেন, ঢেঁড়স এখন পাইকারি বাজারে ১ টাকা কেজি, আর পটল ৪ টাকা। চিচিঙ্গার কেজি ২ টাকা। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন ও সরবরাহ বেশি থাকায় সবজির দাম পাচ্ছেন না চাষীরা। তবে শহরের বাজারে বিক্রি করে ঠিকই ফায়দা লুটে নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। মোহনপুরের বেগুন চাষী আশরাফুল ইসলাম বলেন, বাজারমূল্য কম থাকায় চাষীদের উৎপাদন খরচও উঠছে না। বর্ষায় বেগুনে ব্যাপক কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। এবার ব্যাপক আবাদ হওয়ায় বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি আমদানি বেগুনের। তিনি বলেন, গতবার এ সময় প্রতিকেজি বেগুনের দাম ছিল ৫০-৬০ টাকা। অথচ এবার বাজারে প্রতিকেজি বেগুনের দাম পাইকারি সর্বোচ্চ ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যদিও শহরের বাজারে এখনও দাম ৪০ টাকা কেজি। পবার কৃষক আফাজ উদ্দিন, লোকমান হোসেন, আব্দুর রব ও শামসুদ্দিন বলেন, কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কঠোর পরিশ্রম করে যে দাম পাচ্ছে তা দিয়ে শ্রমিক খাটানোই দায় হয়ে পড়েছে। আগামীতে এমন দাম থাকলে অনেকেই সবজি চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। চাষী মোবারক আলী বলেন, সার, ওষুধ ও শ্রমিক মজুরি বেশি থাকার পরও সবজি চাষ করেছি। লাভ তো দূরের কথা, খরচ উঠবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত রয়েছি। তবে পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান ও সমশের বলেন, পাইকারি বাজারে সবজির দাম কম হলেও পচে যাওয়ার কারণে খুচরা বিক্রেতারা বেশি দামে ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি করতে বাধ্য হন।
×