ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাইডবেঞ্চেই শেষ সুয়ারেজের কোপা

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১১ জুন ২০১৬

সাইডবেঞ্চেই শেষ সুয়ারেজের কোপা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এর চেয়ে দুর্ভাগ্য বুঝি আর হয় না। নিজেকে আমূলে বদলে ফেলা লুইস সুয়ারেজ এবার শতবর্ষী কোপা আসরে এসেছিলেন নিজ দেশ উরুগুয়েকে সাফল্যে ভাসাতে। কিন্তু ঘাতক ইনজুরির কারণে তার সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল। চোটের কারণে টানা দুই ম্যাচ বসে থাকলেন সাইডবেঞ্চে। তার দল উরুগুয়েও হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। ফলে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে আসরের সর্বোচ্চ ১৫ বারের চ্যাম্পিয়নদের। শুক্রবার ভেনিজুয়েলার কাছে দলের হার কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না সুয়ারেজ। মাঠে নামতে না পারার আক্ষেপে ডাগআউটে বসে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন উরুগুয়ের এই তারকা স্ট্রাইকার। কিন্তু ফিট না হওয়ায় কোচ অস্কার তাবারেজ বার্সিলোনা তারকাকে মাঠে নামাননি। ফলে অতৃপ্তি সঙ্গী করে শূন্য হাতেই কোপা মিশন শেষ হয়েছে গেল মৌসুমে ইউরোপিয়ান ফুটবলে সর্বোচ্চ গোল করা সুয়ারেজের। ক্লাবের হয়ে দুর্দান্ত ফর্ম নিয়ে কোপা আমেরিকা খেলতে এসেছিলেন সুয়ারেজ। কিন্তু ক্লাবের হয়ে খেলতে গিয়ে পাওয়া চোটের কারণেই কোপায় আর খেলা হলো না ক্ষ্যাপাটে এ তারকার। ফলে গ্রুপপর্বেই নিশ্চিত হয়েছে ২০১১ সালের চ্যাম্পিয়নদের বিদায়। নিজেদের ম্যাচে হেরে গেলেও উরুগুয়ের ক্ষীণ আশা ছিল। কিন্তু দিনের অন্য ম্যাচে মেক্সিকো ২-০ গোলে জ্যামাইকাকে হারালে নিশ্চিত হয়, এই গ্রুপ থেকে শেষ আটে যাচ্ছে মেক্সিকো ও ভেনিজুয়েলা। ভেনিজুয়েলার কাছে যখন হারের দিকে এগোচ্ছিল উরুগুয়ে তখন দলটির মধ্যে শুরু হয়ে যায় বিশৃঙ্খলা। দ্বিতীয়ার্ধে ডাগআউটে রীতিমতো এলোমেলো হয় যায় দলটি। আচমকাই ডাগআউটে সুয়ারেজকে গা গরম করতে দেখা যায়। মাঠে নামার জন্য তাঁকে অস্থির দেখাচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সুয়ারেজ আর নামতে পারেননি। দর্শক হয়েই দেখেন দলের বিদায়। মুখ বুজে তা সহ্য করার মানুষ সুয়ারেজ নন। বার্সিলোনা তারকা দলের এক স্টাফকে রীতিমতো গালাগাল করেন। মাঠে নামতে না পেরে রাগে-ক্ষোভে ডাগআউটের দেয়ালে ঘুষি মেরে নিজের হাত নিজেই আহত করেন বার্সা তারকা। অবাক করা সেই কা-টা মনে আছে? এই হাত দিয়েই নিজেদের জালে ঢুকতে থাকা বল ইচ্ছা করে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সুয়ারেজ। ঘানার বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালের ওই ম্যাচে গোলটি হলেই বিদায় নিত উরুগুয়ে। কিন্তু নিজ লালকার্ড দেখে বিদায় নিলেও পেনাল্টিতে গোল করতে পারেনি ঘানা। পরে খেলা অতিরিক্ত সময় পেরিয়ে টাইব্রেকারে গড়ালে সেখানে উরুগুয়ে ৪-২ গোলে জিতে সেমিফাইনালে নাম লেখায়। দলের প্রতি এমনই ভালবাসা সুয়ারেজের। সেই তাকেই কিনা সাইডবেঞ্চে বসে দলের করুণ বিদায় দেখতে হলো। দেশের জন্য কিছু করতে না পারার বেদনায় ম্যাচ শেষে চোখের পানিও ফেলতে দেখা গেছে সুয়ারেজকে অথচ আমূলে নিজেকে বদলে ফেলেছেন সুয়ারেজ। উরুগুইয়ের তারকা এই স্ট্রাইকারের ক্যারিয়ারই হুমকিতে পড়েছিল ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে কামড় কা-ের পর। ন্যক্কারজনক ওই ঘটনার পর ক্লাব ও জাতীয় দলে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন ২৯ বছর বয়সী এ তারকা। তবে নিষেধাজ্ঞায় থাকার সময় যেন সব পাপ ধুয়েমুছে পরিষ্কার করেছেন। এর প্রমাণ নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী সময়ে তার পারফরমেন্স। বার্সিলোনার হয়ে নজরকাড়া ধারাবাহিক পারফরমেন্স প্রদর্শন করেছেন সদ্য শেষ হওয়া ২০১৫-১৬ মৌসুমে। বার্সিলোনার ডাবল শিরোপা জয়ে রেখেছেন সবচেয়ে বড় অবদান। শুধু তাই নয়, এবার তিনি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ও লিওনেল মেসির দীর্ঘদিনের দাপট ঘুচিয়ে সেরা গোলদাতার পুরস্কার পিচিটি ট্রফি জয় নিশ্চিত করেছেন। এমন সাফল্য নিয়েই উরুগুয়ের হয়ে খেলতে এসেছিলেন কোপা আমেরিকায়। কিন্তু ঘাতক ইনজুরির কারণে একরাশ হতাশা আর অপ্রপ্তি নিয়েই ফিরতে হচ্ছে সুয়ারেজকে।
×