ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

আজব হলেও গুজব নয়

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১০ জুন ২০১৬

আজব হলেও গুজব নয়

আফ্রিকার দেশ কেনিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় এক উপকূলবর্তী দ্বীপ লামু। দেশটির সবচেয়ে ছোট্ট দ্বীপ বলা হয় এই লামুকে। আয়তনে ছোট হলেও প্রায় চব্বিশ হাজার মানুষের বসতি লামু দ্বীপে মানুষ ছাড়াও আছে ছয় হাজার গাধা এবং মাত্র দুটো গাড়ি। দ্বীপের মানুষের হাসি আনন্দ থেকে শুরু করে জীবনধারণ পর্যন্ত সবকিছুই নির্ভর করে গাধার উপর। ইতিহাসে গাধাকে যতই ছোট করে দেখানো হোক না কেন, লামুর দ্বীপবাসীর কাছে গাধারা হলো পরিবারের সদস্যদের ন্যায়। আর এজন্যই হয়তো গোটা আফ্রিকার গাধাদের রাজধানী বলা হয় লামু দ্বীপকে। এ এমন এক দ্বীপ যেখানকার রাস্তায় গাড়ির জ্যাম সৃষ্টির বদলে হয় গাধাদের জ্যাম। পুরো দ্বীপের অধিবাসীদের উপার্জন এই গাধার উপর নির্ভর করায় অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় মানুষের চেয়েও গাধারা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দা ১৪ বছর বয়সী শী ফামাওয়ের স্বপ্ন তার নিজের একটি গাধা থাকবে এবং সেই গাধা নিয়ে সে বাৎসরিক গাধার দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে। শী আশা করে যে, তার যদি গাধা থাকত তাহলে সে নিশ্চয়ই প্রতিযোগিতায় প্রথম হতো এবং সেই প্রতিযোগিতা থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে পরিবারের সাহায্য করত। বর্ধন হোভানিসায়ান একজন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা। এর আগেও তিনি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র তৈরি করে আন্তর্জাতিক সুনাম অর্জন করেছেন। সর্বশেষ তিনি যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে ‘এ্যা স্টোরি অব পিপল ইন ওয়্যার এ্যান্ড পিস’ নামের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে বিশটিরও বেশি পুরস্কার অর্জন করেছেন। কিন্তু ওই চলচ্চিত্র তৈরি করতে গিয়ে নিজেকে বড় বেশি দুঃখী মনে হয় তার। সেই থেকেই তিনি চিন্তা করেছিলেন যে পরবর্তী কাজটি হবে অনেকটা হাস্যরসাত্মক। আর সেই হাসির খোড়াক খুঁজতেই তিনি হাজির হলেন গাধার দ্বীপে। ‘শৈশবে আমি ছিলাম স্কুলের সবচেয়ে বাজে ছাত্র। কোন বছরই ভাল গ্রেড নিয়ে পাস করতে পারিনি এবং স্কুলের শিক্ষক আমাকে গাধা নামে ডাকত। তখন থেকেই গাধার প্রতি একটা আকর্ষণ বোধ করতাম আমি। যখন আমি গাধাদের দ্বীপ লামু আবিষ্কার করলাম তখনই আমার মনে হলো এটা আমার দায়িত্ব যে এই এক টুকরো স্বর্ণখণ্ডকে বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়ে দেয়া। গোটা জীবন আমি মহাকাশচারী, চাষা অথবা শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম। এ ধরনের অবিমিশ্রিত স্বপ্নগুলোই শেষমেষ আমাকে ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্রকার বানিয়েছে।’ ‘বর্তমান প্রকল্পে আমি আমার স্বপ্নগুলোকে একত্রিত করতে পেরেছি অনেকটাই। এই ছোট্ট চলচ্চিত্রটি তাই ওই ছোট্ট দ্বীপটি এবং গাধাদের নিয়ে। আমি এখানে মহাবিশ্বের কথা বলব, যতক্ষণ পর্যন্ত হাসতে হাসতে আপনার চোখে পানি চলে না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত হাসানো হবে আপনাকে। আর সেই হাসির দমক থামতেই চোখের সামনে হাজির হবে এক বুদ্ধিদীপ্ত আর রহস্যময় গাধা। বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের দুনিয়ায় এ ধরনের চলচ্চিত্র বানানো খুব একটা সহজ কাজ নয়। কিন্তু তারপরেও আমাদের মনে রাখা উচিত প্রতিদিনকার একটু হাসি আমাদের কীভাবে বাঁচিয়ে রাখে। হয়তো এটা খুবই সাধারণ কোন গাধারই কাজ হবে।’ সাত-সতেরো প্রতিবেদক
×