ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঝিনাইদহে পুরোহিত হত্যা

ঘটনাস্থল পরিদর্শন দুই ভারতীয় কূটনীতিকের ॥ মামলা দায়ের

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৯ জুন ২০১৬

ঘটনাস্থল পরিদর্শন দুই ভারতীয় কূটনীতিকের ॥ মামলা দায়ের

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝিনাইদহ, ৮ জুন ॥ পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী ওরফে নন্দ ঠাকুর হত্যাকা-ের ঘটনাস্থল বুধবার পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনের দুই কূটনীতিক। রাজনৈতিক সচিব রাজেশ উখাই ও প্রথম সচিব (কন্সুলার ও ভিসা) রামাকান্ত গুপ্তা সকালে ঢাকা থেকে বিমানযোগে যশোর আসেন। সেখান থেকে সড়ক পথে ঝিনাইদহের করতিপাড়া গ্রামে নিহত পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীর বাড়িতে যান। এরপর তারা মহিষাভাগাড় বিলের হত্যাকা-ের স্থান পরিদর্শন করেন। শেষে তারা নলডাঙ্গার সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে যান। প্রত্যেক স্থানেই তারা বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। সে সময় তাদের সঙ্গে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন ও সহকারী পুলিশ সুপার গোপিনাথ কানজিল উপস্থিত ছিলেন। ঘটনাস্থলে কূটনীতিকগণ স্থানীয় লোকজনের কাছে হত্যাকা-ের বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এরপর নিহত পুরোহিতের বাড়িতে যান। সেখানে নিহত নন্দ ঠাকুরের বাবা সত্য গোপাল গাঙ্গুলীসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের সমবেদনা জানান। কূটনীতিকরা পরিবারের সদস্যদের আশ্বস্ত করে বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ হত্যাকা-ের বিচার করবে। তবে মিডিয়ার সঙ্গে কোন কথা বলতে রাজি হননি তারা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় ২ ঘণ্টা তারা এলাকায় অবস্থান করেন এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে হত্যাকা-ের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ফিরে যান। সরেজমিন দেখা যায়, নিহত পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীর বাড়িতে এখনও চলছে মাতম। নৃশংস এ হত্যাকা-ে হতবাক সবাই। হত্যাকা-ের ঘটনায় ভারতীয় হাইকমিশনের দুই কূটনীতিকের আসার কথা শুনে এলাকায় শত শত মানুষ জড়ো হয়। উপস্থিত হন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কনক কান্তি দাস, জেলা সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট সুবির কুমার সমাদ্দার, ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। নলডাঙ্গা সিদ্বেশ্বরী মন্দিরের পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি কাজল গাঙ্গুলী, সাধারণ সম্পাদক অরুণ বিশ্বাস ও পুরোহিত রামকৃষ্ণ ব্যানার্জী জানান, এ হত্যাকা-ের ঘটনায় আমরা শঙ্কিত। আমরা পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানাচ্ছি। পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন বলেন, আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীর হত্যাকারী যেই হোক, শীঘ্রই তাদের খুঁজে বের করে গ্রেফতার করা হবে। তিনি এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, খুনীরা কোন প্রকারেই পার পাবে না। ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি হাসান হাফিজুর রহমান জানান, নিহত পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীর বড় ছেলে অরুণ গোপাল গাঙ্গুলী বাদী হয়ে বুধবার দুপুরে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার এজাহারে তিনি কোন আসামির নাম উল্লেখ করেননি। এ ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত শেষে রাতে করতিপাড়া শ্মশানে পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকালে পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী ওরফে নন্দ ঠাকুর বাড়ি থেকে বাইসাইকেলযোগে নলডাঙ্গা সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে পূজা দিতে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে দুর্বৃত্তরা তাকে মহিষাভাগাড় বিলের মধ্যে নিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে। নওগাঁ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নিন্দা ও ক্ষোভ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে জানান, পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী ওরফে নন্দ ঠাকুরকে কুপিয়ে ও গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নওগাঁ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ। বুধবার সকালে সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ে এক জরুরী সভায় এ ক্ষোভ জানানো হয়। সভায় পুরোহিত নন্দ ঠাকুর ও এসপি পতœী মিতুসহ দেশের সকল অনাকাক্সিক্ষত খুনের ঘটনায় জড়িত খুনীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নির্মল কৃষ্ণ সাহার সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেনÑ সহসভাপতি বিশ্বজিৎ সরকার মণি, সাধারণ সম্পাদক বিভাস মজুমদার গোপাল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাধব চন্দ্র কর্মকার, স্বপন কুমার দাস প্রমুখ।
×