ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লুইসভিলে ফিরলেন নিষ্প্রাণ আলী

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ৭ জুন ২০১৬

লুইসভিলে ফিরলেন নিষ্প্রাণ আলী

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সোমবার আরিজোনা অঙ্গরাজ্য থেকে মোহাম্মদ আলীর মৃতদেহ তার জন্মস্থান কেন্টাকির লুইসভিলে নেয়া হয়েছে। প্রাণহীন কিংবদন্তি বক্সারের জন্য একটি বিশেষ বিমান (প্রাইভেট) ব্যবহার করা হয়। লুইসভিলের মেয়র গ্রেগ ফিসেকার এক টুইট বার্তায় উল্লেখ করেন, ‘আলী তার বাড়িতে ফিরেছে।’ দীর্ঘ তিন দশক পারকিনসন রোগে ভোগা ৭৪ বছর বয়সী বক্সার শনিবার ভোরে আরিজোনার (যুক্তরাষ্ট্র) ফিনিক্স হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। কেবল ক্রীড়াঙ্গন নয়, বক্সিং মহানায়কের মৃত্যুতে গোটা বিশ্বই শোকবিহ্বল। শুক্রবার জন্মশহর লুইসভিলের বাড়িতে তার দাফন ও শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে। উন্মুক্ত ওই শেষকৃত্যে আলীর পরিবারের পক্ষ থেকে বিশ্ববাসীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দাফনে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, অভিনেতা বিনি ক্রিস্টাল এবং সাংবাদিক ব্রায়ন্ট গাম্বেলের মতো বিখ্যাতরা উপস্থিত হবেন। রবিবার লুইসভিলের এক প্রার্থনা অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন আলীর ছোটা ভাই রহমান আলী। স্থানীয় ডেট্রয়েটের মসজিদে এরই মধ্যে তিনবার গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বক্সিং, ক্রীড়াঙ্গনসহ বিশ্বের বিখ্যাত সব তারকা প্রয়াত আলীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। শোকবার্তা দেয়ার তালিকায় রয়েছেন শক্তিধর দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ অনেকে। অন্তিম সময়ে আলীর চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করা আব্রাহাম লিয়েবারম্যান জানিয়েছেন, শেষ এক বছর এই কিংবদন্তি শারীরিকভাবে অত্যন্ত কঠিন সময় পার করছিলেন। গুরুতর সঙ্কটের একপর্যায়ে সেপটিক শকে তার মৃত্যু হয়। মেয়র ফিসেকার আরও বলেন, ‘আলী ছিলেন সারা বিশ্বের নাগরিক। কিন্তু এখানে জন্ম হওয়ায় আমরা লুইসভিলের মানুষ অনেক বেশি গর্বিত। তিনি কেবল বক্সারই ছিলেন না, ছিলেন বিশ্বমানবতার জ্বলন্ত উদাহরণ। আমি তাই বিশ্ববাসীকে এই শেষকৃত্যে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’ ১৯৪২ সালের ১৭ জুন কেন্টাকির লুইসভিলে আলীর জন্ম। বেড়ে ওঠা, বিশ্ব কাঁপানো প্রস্তুতি, ক্যাসিয়াস ক্লে থেকে বক্সার, দ্য গ্রেটেস্ট হয়ে ওঠাÑ জীবনের বড় একটা সময় কেটেছে এখানেই। মোহাম্মদ আলির আগের নাম ছিল ক্যাসিয়াস ক্লে। এই নামেই তিনি বক্সার হয়ে ওঠেন। ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে এই নামেই সোনা জিতেছিলেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর ১৯৬৪ সালে সনি লিস্টনকে হারিয়ে মাত্র ২২ বছর বয়সে প্রথমবারের মতো বক্সিংয়ের বিশ্বসেরার মুকুট পরে। ৬১টি পেশাদার লড়াইয়ের ৫৬টিতেই জিতেছেন বিরল প্রজাতির এই বক্সার। যেখানে ৩৭ বারই প্রতিপক্ষকে সরাসরি নক-আউট করেনÑ এমন রেকর্ড ইতিহাসে আর কারও নেই। ১৯৭৪ সালে মধ্য আফ্রিকার জায়ারের কিনশাসাতে জর্জ ফোরম্যানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক লড়াই ‘র‌্যাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ নামে পরিচিত। এছাড়া তার বিখ্যাত লড়াইয়ের মধ্যে রয়েছে ১৯৭১Ñএ জেব ফ্রেজিয়ারের সঙ্গে ‘ফাইট অব দ্য সেঞ্চুরি’, থ্রিলা ইন ম্যানিলা’। ১৯৬৪ সালে পুরো বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে সর্বকালের সেরা এই বক্সার ইসলাম গ্রহণ করেন। নিজের বাবা-মার দেয়া নাম ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে পরিবর্তন করে ‘মোহাম্মদ আলী’ রাখেন। মার্সেলাস নামটিকে দাসের প্রতিশব্দ বলে উল্লেখ করেন তিনি। আফ্রিকান-আমেরিকান মুসলিমদের ‘নেশন অব ইসলাম’-এর সঙ্গে আলীর যোগাযোগের শুরু ১৯৬১ সাল থেকে। এই আন্দোলনের অন্যতম নেতা ম্যালকম এক্স তার আধ্যাত্মিক গুরু হয়ে ওঠেন। এমনকি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য নিজেকে ‘ক্যাসিয়াস এক্স’ বলেও উল্লেখ করতেন। তখন ক্যাসিয়াস ক্লে নামটাই অবশ্য গণমাধ্যমে বেশি প্রচারিত হচ্ছিল। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ক্যাসিয়াস ক্লে একটা দাসের নাম। আমি এটা বেছে নেইনি এবং চাইও না। আমার নাম মোহাম্মদ আলী, আমি একজন মানুষ। আমি চাই মানুষ আমাকে মানুষ বলেই বিবেচনা করুন।’ আলী নামে ডাকুন। ১৯৭৫ সালে তিনি মূলধারার অর্থাৎ সুন্নি ইসলাম গ্রহণ করেন। অসাধারণ ব্যক্তিত্বের জন্য হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালীদের একজন। স্পোর্টস ইলাস্ট্রেট তাকে ‘শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াবিদের’ খেতাবে ভূষিত করে। ২০০৫Ñএ আমেরিকার সর্বোচ্চ সিভিলিয়ান অনার ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম’।
×