ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পর্দা উঠছে শতবর্ষী কোপা আমেরিকার

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৩ জুন ২০১৬

পর্দা উঠছে শতবর্ষী কোপা আমেরিকার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অপেক্ষার পালা শেষ। শুরু হওয়ার অপেক্ষায় বিশেষ শতবর্ষী কোপা আমেরিকা ফুটবল। বাংলাদেশ সময় শনিবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র ও কলম্বিয়ার মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠছে এবারের ৪৫তম আসরের। ১৯১৬ সালে প্রথম যাত্রা শুরু হয় দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের এই আসরের। ২০১৫ সালে চিলিতে ৪৪তম আসর বসলেও এক বছরের ব্যবধানে আবারও বসতে যাচ্ছে কোপা যজ্ঞ। কারণ ১০০ বছর পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখা। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, শতবর্ষী বিশেষ এই আসরটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার বাইরে। এই আসরের স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র। আর এর মধ্য দিয়ে কোপার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাইরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আসরটি। এবারের আসর নানা কারণে আলোচিত শুরু হওয়ার আগেই। এবার দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ অর্থাৎ ২৩ বছরের শিরোপা খরা কাটানোর মিশনে নামছে আর্জেন্টিনা। দলটির অধিনায়ক ও সেরা তারকা লিওনেল মেসি এমন প্রত্যয়ের কথাই জানিয়েছেন। তবে ক্রীড়ামোদীরা বঞ্চিত হচ্ছেন নেইমারের খেলা দেখা থেকে। তার ক্লাব বার্সিলোনার আপত্তির কারণে সেলেসাওরা তাদের সেরা তারকাকে ছাড়াই শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশনে নামছে। একে তো নেইমার নেই, তার ওপর চোটের কারণে একঝাঁক তারকা ফুটবলার পাচ্ছেন না ব্রাজিল কোচ কার্লোস দুঙ্গা। এ কারণে আসরে রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সাফল্য নিয়ে সংশয় জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য নেইমার না থাকলেও অংশগ্রহণকারী অন্য দলগুলো তাদের সেরা তারকাদের নিয়েই ময়দানী লড়াইয়ে নামছে। সেই ১৯৯৩ সালে কোপা আমেরিকা জয়ের আর কোন আন্তর্জাতিক শিরোপা জিততে পারেনি আর্জেন্টিনা। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ ও ২০১৫ সালে কোপা আমেরিকায় তীরে এসে তরী ডোবে দিয়াগো ম্যারাডোনার দেশের। দুইবারই ফাইনালে হারের বেদনায় পুড়তে হয় দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। টানা দুটি বড় আসরের ফাইনালে হারই শুধু নয়, আর্জেন্টিনা গত প্রায় দুই যুগ ধরে কোন ট্রফি জিততে পারেনি। এসব হতাশা ভোলার আরও একটি উপলক্ষ পাচ্ছে লিওনেল মেসির দল। শতবর্ষী কোপা আমেরিকায় চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে কিছুটা হলেও দুঃখ লাগঘ হবে। আর এটি সম্ভব বলে মনে করছেন দলটির অধিনায়ক মেসি। গত বছর চিলিতে অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকার ফাইনালে স্বাগতিকদের কাছে পেনাল্টিতে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হয় আর্জেন্টিনা। ফলে ২০১৪ সালে ব্রাজিলের মাটিতে জার্মানির কাছে বিশ্বকাপ ফাইনাল হারের পর ১২ মাসের মধ্যে আরও একটি ট্রফি হাতছাড়া করতে হয় দলটিকে। দক্ষিণ আমেরিকার শক্তিশালী দলটি কোপা আমেরিকার শেষ চারবারের মধ্যে তিনবারই ফাইনাল খেলেছে। তবে প্রতিবারই তাদের রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে আসরটিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আলবেসেলিস্তারা। বার বার বেদনায় ভারাক্রান্ত হলেও এবার সম্ভব বলে বিশ্বাস করছেন মেসি। এবারের আসর জিতে তারা গত ২৩ বছরের শিরোপার অপেক্ষা ঘোচাবেন। এ প্রসঙ্গে মেসি বলেন, কোপা জয়ের জন্য আমরা নিজেদের সেরাটাই খেলব। কারণ এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আসর। আর্জেন্টাইন অধিনায়ক আরও বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে আর্জেন্টিনা কোন শিরোপা জয় করতে পারেনি। আর এই দলটিই গত বিশ্বকাপের ফাইনাল ও কোপা আসরের ফাইনাল খেলেছিল। আমি মনে করি এবারের আসরের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল আমরা। বর্তমান ফিফা সেরা ফুটবলার বলেন, এটা কোপা আমেরিকার বিশেষ আসর। আর যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশেষ একটি দেশে এবারের আসর বসছে। যেখানে অসাধারণ কিছু স্টেডিয়াম আছে। আর সেখানে ফুটবলের প্রচুর দর্শকও আছে। নিজেদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার এটা দারুণ একটি সুযোগ। সবশেষ ২০০৭ সালে দক্ষিণ আমেরিকার বিশ্বকাপ হিসেবে পরিচিত কোপা আমেরিকা ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল। এরপর গত দুই আসরে সেমিফাইনালেও উঠতে ব্যর্থ হয়েছে পেলের দেশ। এবার তাই বিশেষ আসরে শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশন আটবারের কোপা আমেরিকা জয়ীদের। তবে প্রতিবার শিরোপা জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে কোপা আমেরিকা মঞ্চে আসা সেলেসাওরা এবার সমান প্রত্যয় নিয়ে আসতে পারেনি। কারণ দলের সুপারস্টার এবং অন্যতম নির্ভরযোগ্য ফরোয়ার্ড নেইমার নেই দলে। পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে ইনজুরি। তবু নিজেদের যোগ্যতা ও সামর্থ্য প্রমাণের লড়াই এবার সাম্বা ছন্দের দেশটির। ১৯৯৭-২০০৭ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পাঁচ কোপা ফুটবল আসরে চারবারই শিরোপা জিতেছে ব্রাজিল। সেলেসাওরা সেই স্বর্ণসাফল্য এবার ফিরিয়ে আনতে পারে কি না সেটাই দেখার বিষয়।
×