ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জুম ফসল আশানুরূপ হয়নি

থানচিতে তীব্র খাদ্য সঙ্কটের কবলে আদিবাসীরা

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২৮ মে ২০১৬

থানচিতে তীব্র খাদ্য সঙ্কটের কবলে আদিবাসীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান, ২৭ মে ॥ ২৭টি পরিবার নিয়ে আমাদের হৈয়োক খুমী পাড়া, কারো বাসায় খাবার নেই, আমরা বাঁচবো কিভাবে? কথাগুলো বলছিলেন চরম খাদ্য সঙ্কটের কবলে পড়া বান্দরবানের থানচির হৈয়োক খুমী পাড়ার বৃদ্ধ কারকারী হৈয়োক খুমী। গত বছর বিরূপ আবহাওয়ার কারণে জুমের ফসল ভাল না হওয়ায় চলতি বছরের মার্চ থেকে খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে দুর্গম এলাকার আদিবাসীরা। থানচির দুর্গম রেমাক্রী, তিন্দু, ছোট মদক, বড় মদক ও সাঙ্গু রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকায় খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়। খাদ্য সঙ্কটের কারণে তাদের খাদ্য তালিকায় উঠেছে ভাতের বদলে আলুসহ পাহাড়ী খাবার। থানচির রেমাক্রী ইউনিয়নের যোগী চন্দ্র পাড়ার হাতিরাম ত্রিপুরা জানান, বাসায় খাদ্য না থাকায় ছয় সদস্যের পরিবার তিনদিন না খেয়ে ছিলেন। থানচির এসব এলাকায় ত্রিপুরা, ম্রো, মারমা সম্প্রদায়ের বসবাস। জুম পাহাড়ে চাষের মাধ্যমে তারা সারা বছরের ধান সংগ্রহ করে রাখেন। কিন্তু কোন কারণে ভাল ফলন না হলে, ইদুর বন্যা দেখা গেলে তাদের বছরের খাদ্য মজুদ করা সম্ভব হয়না। এর ব্যতিক্রম হয়নি এ বছর। খাদ্য সঙ্কটের কারণে প্রায় প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের চোখে মুখে ক্ষুধার জ্বালা, অনেকে একবেলা ভাত অন্যবেলা আলু, মিষ্টি কুমড়া খেয়ে দিন পার করলেও কয়েকদিন ধরে অনেকের পাতে উঠছে না খাবার। রেমাক্রী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার মাং চং ম্রো জানান, সাঙ্গু রিজার্ভের বেশ কয়েকটি পাড়ার কারো কাছে খাবার নেই, মানুষ খেতে না পেরে অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়াতে পারে। স্থানীয়দের তথ্য মতে, এসব এলাকার ৯৫ শতাংশ মানুষ জুমচাষ নির্ভর, জুমধান ভাল না হওয়ায় খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পরিবার। পরিবারগুলো জঙ্গলী আলু, মিষ্টি কুমড়া আর কলা গাছের ভেতরের অংশ খেয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। ২নং তিন্দু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মং প্রু অং মারমা জানান, দুর্গমতা, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আমার ইউনিয়নের সাতশ’ পরিবার খাদ্য সঙ্কটে ভুগছে, খাদ্যের অভাবে মানুষ মারাও যেতে পারে। এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরীভাবে দুর্গত এলাকার আটশ’ পরিবারের বিপরীতে ১৬ মেঃ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় কম। দুর্গমতার কারণে নৌ পথে ও মানুষ বহন করে এসব খাদ্য পৌঁছাতেই অর্ধেক পরিবহনেই খরচ হয়ে যাবে বলে মনে করছে স্থানীয়রা। থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লা চিং মার্মা বলেন, দ্রুত এসব এলাকায় পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করা উচিত, না হলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
×