ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাবিরার আত্মহত্যা

প্রেমিক নির্ঝর ও ভাই প্রত্যয় কারাগারে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৬ মে ২০১৬

প্রেমিক নির্ঝর ও ভাই প্রত্যয় কারাগারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এবং ভিডিও পোস্ট করে আত্মহত্যাকারী মডেল সাবিরার প্রেমিকের ভাইকেও আটক করেছে পুলিশ। ওই ভাইয়ের বিরুদ্ধে নিহত মডেলকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ রয়েছে। দুই ভাইকে বুধবার আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতে আসামিরা কোন প্রকার জবানবন্দী দেয়নি। পরে আদালত দুই ভাইকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। গত ২৪ মে ভোর পাঁচটায় রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর হাউজিংয়ের ১২ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাট থেকে মডেল সাবিরার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারকালে সাবিরার লাশ ওই ভাড়া ফ্ল্যাটের বেড রুমের ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় ঝুলছিল। বেডরুম থেকে সুইসাইড নোট ও সাড়ে নয় মিনিটের একটি ভিডিও উদ্ধার হয়। আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে পোস্ট করা সুইসাইডাল নোটে সাবিরা মৃত্যুর জন্য তার প্রেমিক নির্ঝর সিনহা রওনককে দায়ী করে। পুলিশ জানায়, উদ্ধারকৃত ভিডিওতে বিছানায় শুয়ে একটি ছুরি হাতে নিয়ে নিজের পেট ও গলা কেটে সাবিরাকে আত্মহত্যা করতে দেখা গেছে। তাতে ব্যর্থ হয়। এরপর সাবিরা আত্মহত্যা করেন। আর ফেসবুকে সাবিরা লিখেন, আমাকে ব্যবহার করবে, এরপর সরে যাবে, এটা তো হতে পারে না। বিয়ের কথা বললে তোমার পরিবার অসুস্থ হয়ে যায়। আর মেলামেশার কথা বললে সব ঠিক হয়ে যায়। নির্ঝরকে ট্যাগ করে সবশেষে সাবিরা লিখেন, আমার মৃত্যুর জন্য সে (নির্ঝর) দায়ী। যদি আমি মারা যাই, তাহলে এর দায় তার (নির্ঝর)। নিহত সাবিরা বিভিন্ন বিজ্ঞাপন চিত্রের মডেল হিসেবে কাজ করত। তার বাবার নাম মনির হোসেন। তিনি দুবাই প্রবাসী। মা ঢাকার শ্যামলীতে বসবাস করেন। গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লার হাজীগঞ্জে। পিতামাতার একমাত্র মেয়ে। সাবিরা ঢাকার ইংরেজী মাধ্যমের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্ট্যান্ডার্ড টেনে পড়াশুনা করত। এ ঘটনায় সাবিরার মা দিলশাদ কাজি বাদী হয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা এবং নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে রূপনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ মঙ্গলবারই সাবিরার প্রেমিক নির্ঝর সিনহা রওনককে আটক করে। রূপনগর থানার ওসি সৈয়দ শহীদ আলম জানান, বুধবার ভোরে আসামি নির্ঝরের ভাই প্রত্যয় সিনহাকে ঢাকার বাড্ডার সাঁতারকুলের নিজ ফ্ল্যাট থেকে আটক করা হয়েছে। প্রত্যয়ের বিরুদ্ধে নিহত সাবিরাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। আসামিদের ঢাকার সিএমএম আদালতে সোপর্দ করা হয়েছিল। আদালতে আসামিরা কোন প্রকার জবানবন্দী দেয়নি। আসামিদের কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। নির্ঝরের হার্টে রিং পরানো থাকায় তাকে দ্বিতীয় মেয়াদে রিমান্ডের আবেদন করা হয়নি। তবে প্রয়োজন হলে তা করা হবে। তিনি আরও জানান, প্রায় তিন বছর ধরে প্রেম করছিল নির্ঝর ও নিহত সাবিরা। তাদের মধ্যে সব ধরনের সম্পর্কই গড়ে উঠেছিল। প্রায় ছয় মাস আগে নির্ঝর ও সাবিরা রূপনগরের ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন। সেখানে তারা স্বামী-স্ত্রীর মতোই বসবাস করছিলেন। যদিও তাদের বিয়ে হয়নি। নির্ঝর সিনহা পেশায় একজন ফটোগ্রাফার। রিফ্লেকশন নামে তার একটি ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ওই যুবকের সঙ্গে প্রেমের জের ধরেই মডেলিংয়ে আসা এবং আত্মহননের ঘটনাটি ঘটে। প্রাথমিক তদন্তে সাবিরার আত্মহত্যার পেছনে নির্ঝরের প্ররোচনা রয়েছে বলে তথ্য মিলেছে। এদিকে ময়নাতদন্ত করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস জানান, সাবিরা আত্মহত্যা করেছে। পরীক্ষার জন্য কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বুধবার দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে সাবিরার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সাবিরার মামা মর্তুজা কাদির মিঠু জানান, সাবিরাকে নারায়ণগঞ্জ জেলার হাজীগঞ্জের নানার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হচ্ছে। তিনি সাবিরা হত্যার সুবিচার দাবি করেন। বিশেষ করে যে ছেলের জন্য সাবিরা আত্মহত্যা করেছে, সেই ছেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
×