ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

মীর কাশেম আলীর আপীলের পূর্ণাঙ্গ রায় শীঘ্রই

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৮ মে ২০১৬

মীর কাশেম আলীর আপীলের পূর্ণাঙ্গ রায় শীঘ্রই

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বদর বাহিনীর কমান্ডার, চট্টগ্রামের বাঙালী খান, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর আপীলের পূর্ণাঙ্গ রায় শীঘ্রই প্রকাশ হতে পারে বলে আশা করছেন রাষ্ট্রপক্ষ। অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমরা আশা করছি অতি শীঘ্রই মীর কাশেম আলীর আপীলের পূর্ণাঙ্গ রায় বের হবে। হয়ত বা জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউর রায় প্রকাশের পর হতে পারে। এর আগে গত ৮ মার্চ আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপীল বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেছিলেন। বেঞ্চের অন্যান্য সদস্য বিচারপতি ছিলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান। তারও আগে ২০১৪ সালের ২ নবেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মীর কাশেম আলীকে মৃত্যুদ-াদেশ দেন। আপীলের রায়ে যে তিনটিতে ট্রাইব্যুনালে দ- পেয়েছিলেন, তার মধ্যে ৪, ৬, ১২ অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছেন আপীল বিভাগ। আর ২, ৩, ৭, ৯, ১০, ১১, ১৪ নং অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দ- বহাল রেখেছেন আপীল বিভাগ। আপীল আদালত ১২ নম্বর অভিযোগ থেকে মীর কাশেমকে খালাস দিয়েছেন, যেখানে তাকে মৃত্যুদ- দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। ৪ ও ৬ নম্বর অভিযোগে সাত বছর করে সাজার রায় থেকেও এই জামায়াত নেতা খালাস পেয়েছেন। আপীল নাকচ করে ১১ নম্বর অভিযোগে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজনকে হত্যার দায়ে মীর কাশেমের সর্বোচ্চ সাজার রায়ই বহাল রাখা হয়েছে। একই সিদ্ধান্ত হয়েছে ২, ৩, ৭, ৯, ১০ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-ের সাজার ক্ষেত্রেও। এখন নিয়ম অনুযায়ী, সুপ্রীমকোর্ট এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর তা ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। সেটি হাতে পেলে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই মৃত্যু পরোয়ানা ফাঁসির আসামিকে পড়ে শোনাবে কারা কর্তৃপক্ষ। পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবে আসামিপক্ষ। তবে রিভিউ যে আপীলের সমকক্ষ হবে না, তা যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ‘রিভিউ’ খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায়েই স্পষ্ট করা হয়েছে। রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি হয়ে গেলে এবং তাতে মৃত্যুদ- বহাল থাকলে আসামিকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ দেয়া হবে। তিনি স্বজনদের সঙ্গে দেখাও করতে পারবেন। ২০১৪ সালের ২ নবেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম। মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে ১১তম ও ১২তম অভিযোগে মৃত্যুদ- ঘোষণা করা হয়েছে। অভিযোগ দুইয়ে ২০ বছর, অভিযোগ-৩, ৪, ৬, ৭, ৯ ও ১০ প্রত্যেকটিতে সাত বছর করে। অভিযোগ-১৪ তে ১০ বছর, এই নিয়ে মোট ৭২ বছর। এবং এক, পাঁচ, আট ও ১৩ তে তাকে খালাস দেয় ট্রাইব্যুনালের রায়ে। সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত আটটি অভিযোগে অপহরণ ও আটকে রেখে নির্যাতনের দায়ে মীর কাশেমকে সব মিলিয়ে ৭২ বছরের কারাদ- দেয়া হয়েছে। ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পর এটি ছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাদশ রায়। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন গ্রেফতার করার পর ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে মীর কাশেমকে কারাগারে পাঠানো হয়। সে থেকে তিনি কারাগারেই অবস্থান করছেন। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ২০১৩ সালের ১৬ মে মীর কাশেমের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। একই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মীর কাশেমের যুদ্ধাপরাধের বিচার। এরপর মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয় এবং সেখানেই ১৮ নবেম্বর প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমনের সূচনা বক্তব্যের (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) মধ্য দিয়ে শুরু হয়। ২০১৩ সালের ১১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ নুরুল ইসলামসহ মোট ২৪ জন। এরপর ২১ ও ২২ এপ্রিল মীর কাশেম আলীর পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন তার ছোট বোন মমতাজ নুরুদ্দিনসহ তিনজন। সাক্ষ্য-জেরা এবং দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ২০১৪ সালের ৪ মে মাসে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২ নবেম্বর মীর কাশেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-াদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৩০ নবেম্বর মীর কাশেম আলী আপীল করেন। ২০১৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় আপীল মামলাটির শুনানি। ওইদিন এবং পরদিন ১০ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালের রায় এবং সাক্ষীদের অভিযোগভিত্তিক সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন শেষে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন মীর কাশেমের আইনজীবী এস এম শাহজাহান। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন তিনি। আর রাষ্ট্রপক্ষে এ্যাটর্নি জেনারেল শুরু করেন সোমবার (২৩ ফেব্রুয়ারি)। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক শেষ করার পর পুনরায় আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন আইনী পয়েন্টে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এর মধ্য দিয়ে মীর কাশেমের মামলার আপীল শুনানি শেষ হলো। এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ৮ মার্চ দিন ধার্য করে আদেশ দেন আপীল বিভাগ।
×