ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ রক্ষা হলো না নূর আলমের

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৪ মে ২০১৬

শেষ রক্ষা হলো না নূর আলমের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পেটে সোনা বহন করা চরম ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও এতটুকু ভয়ভীতি কাজ করেনি তার মাঝে। টাকার লোভে বার বার নূর আলম এমন ঝুঁকি নিতেন। বার বার শুল্ক গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিলেও মঙ্গলবার ধরা খেলেন। অতি প্রত্যুষে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে যখন চ্যালেঞ্জ করা হয়-তখন ঘটে যায় বিপত্তি। নাটকীয় কৌশলে ১শ’ গ্রাম ওজনের ৬টি স্বর্ণের বার প্রসব করলেন নূর আলম (৩২)। এ নিয়ে বিমানবন্দরে দেখা দেয় তোলপাড়। সোনা জব্দ করার পরও তার হুঙ্কার থামেনি। দেখে নেয়ার হুমকি দেন বার কয়েক। তা দেখে বিস্মিত শুল্ক কর্তারা। জানা যায়, খুলনার এ যুবক সোমবার রাত সাড়ে ১২টায় মালয়েশিয়া থেকে দেশে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। নূর আলমের বাবার নাম মোঃ জাকির খান, পাসপোর্ট নং ইই ০৭৫০৭৫০। তিনি মালয়েশিয়া থেকে রাত সাড়ে ১২টায় শাহজালালে ওডি-১৬২ যোগে অবতরণ করেন। বেল্ট নং-৬ থেকে ব্যাগ নিয়ে আনমনে বের হচ্ছিলেন নূর আলম। তিনি টের পাননি, বেরসিক শুল্ক গোয়েন্দার দল তাকে নজরদারি করছে। শনাক্ত হওয়ার পর স্বাভাবিক হাওয়ার চেষ্টা। প্রতিবাদ করেন জিজ্ঞাসাবাদে। হুমকিও দেন কঠিন ভঙ্গিতে। কিন্তু তাতে কি আর দমে শুল্ক গোয়েন্দা সদস্যরা? এ সময় তার পাসপোর্ট নিয়ে চেক করে দেখা যায়, তিনি বহুবার বিদেশ সফর করেছেন। পেশার সঙ্গে এই ভ্রমণ বেমানান। গত পাঁচ মাসে তিনি ছয়বার বিদেশ গিয়েছেন। নূর আলমকে কাস্টমস হলে হাঁটানো হলো। ব্যর্থতায় এক্স-রে, অপারেশন বুঝানো হলো গোয়েন্দা হস্তক্ষেপ সম্পর্কে। বলা হলো, পেটের ভেতরে লুকিয়ে রাখা স্বর্ণ রাষ্ট্রের সম্পদ। তাতেও তিনি নত হননি। চলে বাগ্বিত-া। দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টার চেষ্টার পর তিনি বুঝলেন, এদের থেকে রক্ষা নেই। এ পর্যায়ে সোনা বের করার কৌশল প্রয়োগ। তাকে ৪ গ্লাস পানি পান করানো হয়। তারপর ১নং বেল্টের কাছে টয়লেটে নেয়া হলো নূর আলমকে। সঙ্গে গোয়েন্দা দুইজন। একেক করে তিনটি প্যাকেটে ৬টি সেনার বার বের করে আনলেন। নিজেই হাতে করে আনলেন। টেবিলে রেখে বললেন, এই নিন আপনার রাষ্ট্রীয় সম্পদ। ততক্ষণে শরীর মহাশয়ের অবস্থা বেগতিক দেখে শুয়ে পড়লেন তিনি। সোনা প্রসব করায় অসুস্থ এই মানুষটাকে সুস্থ করা হলো জুস ও দুধ খাইয়ে। কিছুটা আরাম বোধ করায় নিজেই স্বীকার করেন, ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে রেক্টামে বিশেষভাবে লুকিয়ে রেখেছিলেন এই স্বর্ণ। এ সময় তার ব্যাগ তল্লাশি করে পাওয়া গেল আরও ১০০ গ্রাম ওজনের সোনার চেন। মোট স্বর্ণ ৭০০ গ্রাম, যার বাজারমূল্য ৩০ লাখ টাকা। এছাড়া তার কাছ থেকে ১০০০ এমএল যৌন উত্তেজক জেলও উদ্ধার করা হয়। শেষ পর্যন্ত তাকে যেতে হলো থানা হাজতে। মঙ্গলবার সকালে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের জানালেন সোনা প্রসবের এমন বিচিত্র কাহিনী।
×