ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গত মধ্যরাত থেকে কার্যকর ;###;ধাপে ধাপে দাম কমবে;###;এটা প্রথম ধাপ

জ্বালানির দাম কমল

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৫ এপ্রিল ২০১৬

জ্বালানির দাম কমল

টাফ রিপোর্টার ॥ পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী অকটেন, পেট্রোল, ডিজেল ও কেরোসিন এ চারটি জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর করল সরকার। রবিবার সন্ধ্যায় জ্বালানি বিভাগের এক গেজেটে লিটারপ্রতি অকটেন ও পেট্রোল ১০ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিন ৩ টাকা করে কমানোর সিদ্ধান্ত জানানো হয়। গত রাত ১২টা থেকে নতুন এই দর কার্যকর হয়েছে। রবিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের প্রস্তাব অনুমোদন করেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন দাম কমানোর সুফল সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রস্তাবে পেট্রোল এবং অকটেনে ২১ টাকা করে এবং ডিজেলে ৬ টাকা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে একবারে দাম না কমিয়ে ধাপে ধাপে দাম কমানোর বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় সম্মত হয়েছে। এর ধারাবাহিকতা হিসেবে প্রথমধাপের দাম কমানো হলো। ভবিষ্যতে এই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) লাভ রেখে আবারও দাম কমানো হবে। জ্বালানি বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এখন থেকে প্রতিলিটার অকটেন ৯৯ টাকার স্থলে এখন থেকে ৮৯ টাকা, পেট্রোল ৯৬ টাকার স্থলে ৮৬ টাকা এবং ডিজেল ৬৮ টাকার স্থলে ৬৫ টাকা নির্ধারণ হয়েছে। জ্বালানি বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বিপিসি এখনও প্রতিলিটার অকটেন বিক্রি করে সব ধরনের কর ছাড়াই লাভ করবে ৭ টাকা ৩৭ পয়সা। একইভাবে প্রতিলিটার পেট্রোলে ৭ টাকা ১৭ পয়সা এবং ডিজেলে ৪ টাকা ১৯ পয়সা লাভ হবে। জারি করা প্রজ্ঞাপন হিসেবে সামগ্রিক বিবেচনায় করসহ প্রতিলিটার জ্বালানি তেল বিক্রি করে এখনও সরকারের লাভ হবে ২০ টাকার মতো। যদিও মাত্র ২০ দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপিত পাওয়ারপয়েন্টের সঙ্গে জারি করা গেজেটে ব্যাপক অমিল রয়েছে। এমনকি জ্বালানি তেলের দাম কমানোর জন্য যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল সেখানে দেখানো হয় সব ধরনের কর পরিশোধ করে বিপিসি অকটেন কিনছে প্রতিলিটার ৭৫ টাকা ৫৪ পয়সাতে, পেট্রোল ৭১ টাকা ৫১ পয়সাতে এবং ডিজেল ৪৮ টাকা ৮২ পয়সাতে। আন্তর্জাতিক বাজার স্থিতিশীল থাকলেও মাত্র ২০ দিনের ব্যবধানে জারি করা গেজেটে বিপিসির বাড়তি ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের গেজেটে প্রতিলিটার তেল বিক্রি থেকে ১০ পয়সা হারে কেটে রেখে বিপিসির জ্বালানি তেল উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে গ্রাহকের টাকায় সরকার একইভাবে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল এবং বিদ্যুত উন্নয়ন তহবিল গঠন করেছে। যদিও পরবর্তীতে গ্যাস উন্নয়ন তহবিলকে সম্প্রসারিত করে জ্বালানি খাত উন্নয়ন তহবিল করা হয়েছে। নতুন তহবিলে গ্রাহকের টাকায় নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, দেশে সর্বশেষ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয় ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ১২০ থেকে ১২৫ মার্কিন ডলারে ওঠানামা করছিল। তখন দেশে দাম বাড়িয়ে প্রতিলিটার অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রোল ৯৬, ডিজেল ও কেরোসিন ৬৮ এবং ফার্নেস অয়েল ৬০ টাকা করা হয়। সম্প্রতি এর মধ্যে ফার্নেস অয়েলের দাম কমানো হয়। দাতা সংস্থা এবং দেশের ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরেই সরকারকে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের জন্য চাপ দিয়ে আসছিল। এর ফলে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হবে বলে আশা করছিল তারা। জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে মুজেরী জনকণ্ঠকে বলেন, তেলের দাম কমানোর সঙ্গে এর সুফলও প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। আমাদের দেশের সংস্কৃতি হচ্ছে জ্বালানির দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে পণ্য এবং পরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া। কিন্তু কমলে আর কেউ কমাতে চায় না। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম কমায় পরিবহন ভাড়া এবং পণ্যের উৎপাদন খরচ কম হবে। এখন জনগণ যাতে সেই সুবিধা পায় সরকারকে তার ব্যবস্থা করতে হবে। নয়তো সরাসরি পেট্রোল-অকটেনের মতো জ্বালানি ব্যবহার করে এদের সংখ্যা সীমিত। এদের লাভ ছাড়া আর কারও সুবিধা হবে না। ইতোমধ্যে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জ্বালানি তেলের দাম কমলে বাসভাড়া সমন্বয়ের কথা জানিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম এক টাকা কমলে কিলোমিটার প্রতি বাসভাড়া এক পয়সা কমবে। যদিও ডিজেলের দাম মাত্র লিটারপ্রতি ৩ টাকা কমায় বাস ভাড়া আদৌ কমানো হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, এইভাবে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর ফলে সাধারণ মানুষ সুবিধা পাবেন বলে মনে হয় না। সরাসরি জ্বালানি তেল ব্যবহার করেন এরা ছাড়া এই সুবিধা আর কেউ পাবেন না। তিনি বলেন, আমরা সরকারেকে বলেছিলাম তেলের দামের বাড়তি অর্থ বিদ্যুতে ভর্তুকি দিয়ে বিদ্যুতের দাম কমাতে। এতে সব বিদ্যুত ব্যবহারকারী সুবিধা পেতেন। তখন জ্বালানির দাম কমানোর সুফল নিয়ে কাউকে চিন্তা করতে হতো না।
×