ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক কোচ- রেলের চেহারাই পাল্টে যাবে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক কোচ- রেলের চেহারাই পাল্টে যাবে

মশিউর রহমান খান ॥ রেলপথে দেশে প্রথমবারের মতো আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন লিংকে হফম্যান বুশ (এলএইচবি) ব্রডগেজ কোচ সংযুক্ত করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ভারত থেকে স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ১২০টি কোচ আনছে রেলওয়ে। এর মধ্যে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে চুক্তি অনুযায়ী প্রথম চালানের ৪০টি কোচ ভারত থেকে আনা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৭ সালের মধ্যে বাকি কোচ প্রদানের কথা থাকলেও বাকি কোচগুলো চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে আনা সম্ভব হবে বলে জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) মোঃ শামছুজ্জামান। এসব কোচ রেলওয়েতে যুক্ত করে সেবা প্রদানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অতিদ্রুতই এসব কোচ রেলওয়ের বহরে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের। এসব কোচের ট্রেন ঘণ্টায় সর্বনিম্ন ১২০ কিলোমিটার ও সর্বোচ্চ ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে চলতে সক্ষম হবে। এসব কোচের মাধ্যমে অধিক গতিতে ট্রেন চলাচলের জন্য অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিনও সংযোজন করা হবে। ভারতীয় সরকারের অর্থায়নে কোচগুলো আনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬৭ কোটি রুপী বা ৪২৬ কোটি টাকা। এটিই ভারতের রেলওয়ের এলএইচবি কোচের সবচেয়ে বড় রফতানি। আমদানি করা ১২০টি এলএইচবি কোচে থাকবে ১৭টি প্রথম শ্রেণীর এসি, ১৭টি এসি, মালগাড়িসহ ৩৪টি নন-এসি চেয়ার ও প্রার্থনা কক্ষসহ ৩৩টি নন-এসি চেয়ারকোচ। এসব যুক্ত হলে রেলওয়ের চেহারাই পাল্টে যাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী কোচগুলোয় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিকতম প্রযুক্তি। পাশাপাশি কোচের ভেতর ও বাইরের নান্দনিক উৎকর্ষের জন্যও কাজ করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের দেয়া চাহিদা অনুযায়ী কোচগুলোয় রং করা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা পৌঁছে দিতে এসব কোচে ওয়াইফাই সংযোগ দেয়া হবে। নতুন এ কোচগুলোর ভেতরে বর্তমানে চলাচলকারী কোচগুলোর তুলনায় কিছুটা চওড়া হবে। এছাড়া দেশে চলমান প্রতিটি কোচে শোভন চেয়ার ৯০টি থাকলেও এসব কোচে ১২০টি শোভর চেয়ার আসনের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে ভেতরে যাত্রীদের চলাচল ও আসন বেশি থাকায় অধিকসংখ্যক যাত্রী নেয়া সম্ভব হবে। স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি এ কোচগুলো তুলনামূলকভাবে ওজনে কম বিধায় পরিবহন জ্বালানি অনেক কমবে। স্বাভাবিকভাবে বর্তমান ট্রেনগুলো ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে পারে। কিন্তু নতুন এসব কোচ সংযোজনের পর প্রাথমিকভাবেই প্রতিটি ট্রেন ন্যূনতম ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার ও সর্বোচ্চ ১৫০ কিলোমিটার বেগে চলাচল করতে পারবে। এতে যাত্রীদের যাতায়াতে সময় অনেক কমে আসবে। অপর একটি সূত্র জানায়, প্রথম পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেনের গতি ১০০ কিলোমিটার রাখা হবে। বর্তমানে চলাচলকারী কোচগুলোর তাপমাত্রা ধারণের মাত্রা হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ ভোল্ট। নতুন আধুনিক এসব কোচের তাপমাত্রা ৭০০ ভোল্ট পর্যন্ত। ফলে ট্রেনের ভেতরে তুলনামূলকভাবে শীতল অনুভূত হবে। সূত্র আরও জানায়, এসব কোচের মধ্যে প্রতিটি এসি কোচের সঙ্গে তিনটি ও নন-এসি কোচের দুই প্রান্তে দুটি করে টয়লেটের ব্যবস্থা থাকবে। এর মধ্যে একটি হাই কমোড ও অন্যটি প্লেন কমোডের টয়লেট থাকবে। অসুস্থ ও সাধারণ সকল প্রকার যাত্রীর সুবিধার কথা বিবেচনা করে এ সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এসি কোচে যাতায়াতকারী যাত্রীদের অধিক সুবিধা দিতে তিনটি করে টয়লেট সংযোজন করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানের সকল কোচের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল সর্বোচ্চ ৩০ বছর হলেও এসব কোচের আয়ুষ্কাল কমপক্ষে ৪০ বছর। জানা গেছে, বাংলাদেশের জন্য স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি এলএইচবি কোচগুলো বর্তমানে ভারতের কাপুরথালার রেলকোচ কারখানায় নির্মাণাধীন রয়েছে। এ কোচগুলো ব্রডগেজ লাইনের জন্য নির্মিত হচ্ছে। কাপুরথালার এ রেলকোচ নির্মাণ কারখানাটি বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি বাজারে বেশ দৃঢ় অবস্থান তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে। এর আগেও এ কারখানার নির্মিত কোচ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় ও আফ্রিকান বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়েছে। তবে সেসব দেশে রফতানিকৃত কোচগুলো ছিল মিটারগেজ লাইনের জন্য নির্মিত। জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি ভারতের রেল মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রাইটস (আরআইটিইএস) লিমিটেডের মাধ্যমে বাংলাদেশে রেলকোচ রফতানির চুক্তি সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশের পক্ষে এ চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। চুক্তির ধারাবাহিকতায় একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ভারতের কাপুরথালার রেলকোচ নির্মাণ কারখানার সঙ্গে চুক্তি করে রাইটস। ওই চুক্তি মোতাবেকই কাপুরথালায় এ এলএইচবি কোচগুলো নির্মিত হচ্ছে। পরে গত জানুয়ারিতে রেল মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ ফিরোজ সালাউদ্দিনসহ বাংলাদেশ ও ভারতের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ কাপুরথালার কারখানাটি পরিদর্শন করেন। এ সময় চলতি মাসে আসা প্রথম চালানের কোচগুলোর গুণগতমান যাচাই করা হয় বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) মোঃ শামছুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, রেলপথে চলাচলে গতিশীলতা আনা, আধুনিকত্ব তৈরি করা, যাত্রীদের রেলপথে চলাচলে আগ্রহী করা ও আরামদায়ক যাত্রীসেবা প্রদানে এসব আধুনিক লিংকে হফম্যান বুশ (এলএইচবি) ব্রডগেজ কোচ আনা হচ্ছে। এসব কোচ চালু করা হলে যাতায়াত সময় বর্তমানের তুলনায় অনেক কমবে। ইতোমধ্যে ভারত থেকে ১২০টি কোচের প্রথম চালান হিসেবে ৪০টি কোচ আনা হয়েছে। এ কোচগুলো রেলে সংযোজন করতে প্রয়োজনীয় সকল কাজ করা হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী ২০১৭ সালের মধ্যেই বাকি সব কোচ প্রদানের কথা থাকলেও আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ কোচগুলো আনা সম্ভব হবে। স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি এসব কোচ হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সুবিধাসম্পন্ন। কোচে ওয়াইফাই প্রযুক্তির সুবিধা থাকবে। এসব কোচ স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক গতিতে চালানো সম্ভব হবে। এর সর্বনিম্ন গতি ১২০ কিলোমিটার হলেও বর্তমানে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে চালানো হবে। তবে সর্বোচ্চ গতি ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত হবে। ফলে যাতায়াত সময় ও যাত্রীদের কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হবে। এর মাধ্যমে রেলপথে যাত্রী চলাচলে আগ্রহ তৈরি হবে। এলএইচবি কোচের ট্রেনগুলোর অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল হবে কমপক্ষে ৪০ বছর। তাছাড়া অধিক তাপমাত্রা সহনশীল হওয়ায় এসব কোচ তুলনামূলক অনেক শীতল থাকবে। যাত্রীদের অধিক সুবিধা প্রদানের বিবেচনায় এসব কোচে কমপক্ষে দুটি ও এসি কোচের ক্ষেত্রে তিনটি করে টয়লেটের ব্যবস্থা থাকবে।
×