ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

উপকূলে মাছ ধরা হয় কাদায় হাত ঢুকিয়ে

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

উপকূলে মাছ ধরা হয় কাদায় হাত ঢুকিয়ে

চৈত্র-বৈশাখে রোদের প্রখর তাপে খাল-বিল, পুকুর-ডোবা শুকিয়ে একাকার হয়ে যায়। মাঠ-ঘাট ফেটে হয় চৌচির। এ সময়ে দক্ষিণ-উপকূল অঞ্চলের চিরায়ত প্রাকৃতিক দৃশ্য। আর এসব পুকুর-ডোবা, খাল-বিলের হাঁটু পানিতে মাছ ধরা মানুষের অন্যতম বিনোদন বটে। শত শত বছর ধরে এ ধারা চলে আসছে, যা আজও বহমান। পটুয়াখালীর উপকূল অঞ্চলের ভূ-গঠন প্রণালীর প্রধানতম ধারা হচ্ছে- একটা সময়ে এ অঞ্চলের অধিকাংশ পুকুর-ডোবা, খাল-বিল কোন না কোনভাবে নদ-নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। বর্ষায় যখন নদ-নদী পানিতে টই-টম্বুর, তখন সে পানিতে প্লাবিত হয়েছে গাঁয়ের ভেতর দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া খাল-বিল আর পুকুর-ডোবা। নদ-নদীর পানির সঙ্গে বয়ে আসত ঝাঁকে ঝাঁকে দেশী মাছের রেণু পোনা। প্রায় সারা বছর পুকুর-ডোবা, খালে-বিলে সে মাছ বড় হয়েছে। যা ধরা হয়েছে চৈত্র-বৈশাখে, যখন সে সবের পানি শুকিয়ে যেত। গত কয়েক দশকে ব্যাপকহারে বেড়িবাঁধসহ রাস্তাঘাট নির্মাণের কারণে পুকুর-ডোবা, খাল-বিলের সঙ্গে নদ-নদীর সংযোগ অনেক কমে এলেও বিচ্ছিন্ন হয়নি। ফলে মাছ ধরার ধারাটিও পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। এখনও গাঁয়ের মানুষের কাছে পুকুর-ডোবা, খাল-বিল মাছের অন্যতম উৎস। বিশেষ করে যখন রোদের কড়া তাপে পানি শুকিয়ে যায়। চৈত্র থেকে শুরু করে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত খাল-বিল, পুকুর-ডোবার হাঁটুপানিতে মাছ ধরা চলে। বর্ষার নতুন পানি না আসা পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকে। সূর্য ওঠার শুরু থেকে গাঁয়ের নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর সকলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে বাড়ির কাছের হাঁটু পানির পুকুর-ডোবা, খাল-বিলে। ঘরের হাঁড়ি পাতিল থালা বালতি দিয়ে চলে পুকুর-ডোবার পানি সেচা। পুরোপুরি পানি শূন্য হলে তবেই শুরু হয় মাছ ধরার উৎসব। পুকুর-ডোবা আকারে বড় হলে মাঝখানে একাধিক মাটির বাঁধ দিয়ে তলদেশ ভাগ করে নিতে হয়। রীতিমতো আনন্দ উল্লাস করে লোকজন পুকুর-ডোবা, খাল-বিলের শূন্য পানির কাদার ভিতরে হাত ঢুকিয়ে তুলে আনে একের পর এক মাছ। এসব পুকুর-ডোবায় মেলে চ্যাং, টাকি, গজাল, পুটি, খলসে, ভেদি, কৈ, মাগুর, সিং, ট্যাংরাসহ দেশী প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। আবার অনেকে শাড়ি এবং গামছা দিয়েও মাছ ধরে। গামছার দু’ প্রান্ত দু’জনে দু’দিক থেকে পানির মধ্যে টেনে নিয়ে যায়। এতে মেলে ছোট মাছ। স্কুল ফাঁকি দিয়ে শিশুরাও নেমে পড়ে মাছ ধরায়। তাদের কাছে এটি নির্মল বিনোদন। পানি সেচে মাছ ধরার পাশাপাশি ঝাঁকি জাল দিয়ে চৈত্র-বৈশাখে মাছ ধরার প্রবণতাও এ অঞ্চলে রয়েছে। ঝাঁকি জাল বিভিন্ন মাপের হয়। তবে ঝাঁকি জাল প্রধানত ব্যবহৃত হয় বড় খাল, ভরা পুকুর ও নদীতে। এর সঙ্গে পুকুর-ডোবা ও ছোট খাল-বিলে পানি সেচে হাত দিয়ে মাছ ধরার আনন্দের কোন তুলনা হয় না। পরিবারের নারী-পুরুষ, শিশু সকলেই এ আনন্দে অংশ নেয়। এতে আনন্দের মাত্রা আরও বাড়ে। পুকুর-ডোবার মাছ দিয়ে পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি অনেকে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও তা পাঠিয়ে দেয়। পানি সেচে মাছ ধরার এ চিরায়ত দৃশ্য উপকূলের যে কোন গাঁয়ে গেলে এখনও দেখা মিলবে। এ দৃশ্য আবহমান বাংলার কথা মনে করিয়ে দেয়। Ñশংকর লাল দাশ, গলাচিপা থেকে
×