ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

উর্মি রহমান

কলকাতার চিঠি

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২২ এপ্রিল ২০১৬

কলকাতার চিঠি

একটু দেরিতে হলেও নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি শুরু করছি। আমাদের জীবন থেকে আরও একটি বছর বিদায় নিল। কি পেলাম আর কি হারালাম তার হিসাব না কষে নতুন বছরে নতুন স্বপ্ন ও নতুন উদ্যমের আশা রেখে এগিয়ে চলতে হবে। কলকাতায় বসবাস আমার ভাল লাগে। কিন্তু বছরের কয়েকটি দিন নিজের দেশ বিশেষ করে ঢাকার কথা খুব মনে পড়ে। যেমন পহেলা বৈশাখ। চট্টগ্রাম থেকে আসা শান্তা ফোন করে জানতে চেয়েছিল এখানে কোথায় কি হয়। হতাশ হয়েই ওকে বলতে হলো- তেমন কিছু হয় না। ঢাকার বাংলা নববর্ষের উৎসব উদ্যাপনের সঙ্গে তুলনা করলে সেটা ‘কিছু না হওয়ারই’ নামান্তর। তবু বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস প্রতিবছরই দূতাবাস প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠান করে বলে বোঝা যায় সে দিনটি বাংলা বছরের প্রথম দিন, নতুন বছরকে স্বাগত জানাবার দিন। সকলের জন্য উন্মুক্ত এই অনুষ্ঠানে প্রতিবছরই যাই। তাতে মনের বিষাদ কিছুটা কমে। সেখানে শিশুদের জন্য আনন্দের উপকরণ অনেক থাকে। নাগরদোলা থাকে, বায়োস্কোপ থাকে, যা আমরা ছোটবেলায় দেখতাম, গোল একটা কাচে চোখ রাখলে এক জাদুকরী জগত সামনে খুলে যেত। দূতাবাসে সেটা দেখার আগে মনে হয়েছিল আরও অনেক ভাল জিনিসের সঙ্গে সেটাও লুপ্ত হয়ে গেছে। ওই অনুষ্ঠানে থাকে নানা রকমের খাবার-দাবার, নানা রকম পিঠা, জিলাপি, কদমা, মিষ্টি ও হাওয়া মিঠাই। এক কোণে মুড়িওয়ালা দাঁড়িয়ে থাকে। সবই কিন্তু আতিথেয়তার অংশ, কোন মূল্য লাগে না। এছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তো আছেই। পুতুলনাচ ছিল এবার। পশ্চিমবঙ্গে লেখাপড়া করতে আসা বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের নাচ ও গান ছিল। খুব গরম ছিল, এখন তো হিটওয়েভ চলছে। ত্রিপলের নিচে সামিয়ানাতে রোদ আটকালেও গরম আটকায়নি। বড় বড় পাখা অবশ্য ছিল। তার মধ্যেই সবাই সেজেগুজে এসেছেন। এখানে উৎসবের কোন থিম নেই, যেমনটা আমাদের আছে। বসন্তে বাসন্তী রং, একুশে গাম্ভীর্য রক্ষা করে সাদা-কালো আর বাংলা নববর্ষে সাদা-লাল। দর্শকদের পোশাকের রং দেখেই বোঝা যাচ্ছিল কারা বাংলাদেশী আর কারা স্থানীয় অতিথি। বাচ্চাদের দেখে খুব ভাল লাগছিল। ছোট্ট মেয়েরা শাড়ি, চুড়ি, টিকলি আর ছেলেরা পাঞ্জাবি পরে গালে ফুল-লতা-পাতার মধ্যে বাংলাদেশের পতাকা এঁকেছে। সব মিলিয়ে দিনটা ভাল কাটল। নইলে কলকাতা বসে বোঝার উপায় নেই এটি একটি বিশেষ দিন। এবার বর্ষবিদায় অবশ্য একটু ধাক্কা দিয়ে, আতঙ্ক ছড়িয়ে তারপর এসেছে। একটি সংবাদপত্রের শিরোনাম ছিল ‘মেদিনী কাঁপিয়ে বাংলার বর্ষবিদায়’। ঠিকই, আমি ভূমিকম্পের কথা বলছি। সন্ধ্যায় এক বন্ধু এসেছিলেন। আমি শর্মিষ্ঠার সঙ্গে কথা বলছিলাম। ও হঠাৎ বলল, ‘ঊর্মিদি, ভূমিকম্প।’ আমি প্রথম টের পাইনি বলে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। টেলিভিশন খুলে দেখি সেখানে স্ক্রিনের নিচের দিকে লেখা ভূমিকম্পের কথা। তার পরপরই দুবার কেঁপে উঠল। সেটা ভালমতোই টের পেলাম। উঁকি মেরে দেখি অনেক লোকজন নিচে বাচ্চাদের খেলার জায়গায় জড়ো হয়েছে। আমি থাকি একটি বহুতল (৩৬ তলা) ভবনে। তবে শুনেছি এই আবাসনের দালানগুলো ভূমিকম্প থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থাসহ তৈরি করা হয়েছে। জানি ঢাকার তুলনায় কলকাতায় হয়ত কম্পন কম হয়েছে, বিশেষ করে চট্টগ্রামে নাকি বেশ জোরেশোরে ধাক্কা লেগেছে। কিন্তু এখানে প্রচ- আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে কিছু। যেমন, কলেজ স্ট্রিটে হিন্দু স্কুলের দেয়ালের একটা অংশ ওয়াইএমসিএ’র সুইমিং ক্লাবের ছাদের ওপর ভেঙ্গে পড়েছে। কিছুদিন ধরে ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে। অথচ ছোটবেলায় এমনটি দেখিনি। যা বুঝতে পারছি, বাকি জীবন ভূমিকম্পের আতঙ্ক নিয়েই কাটাতে হবে। এসবের মধ্যে চলছে আরও কয়েকটি রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে বিধান সভার নির্বাচন। এই রাজ্যে ছয় দফায় ভোটগ্রহণ চলছে। নির্বাচন এলেই যা হয়, অন্তত আমাদের দেশে- খানিকটা উৎসব, খানিকটা সহিংসতা, অনেকটা গলাবাজি। সবই চলছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের ভাগ্যে কি আছে সেটা জানার জন্য মে মাসের ১৯ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
×