ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে আবার চালু হচ্ছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৯ এপ্রিল ২০১৬

অবশেষে আবার চালু হচ্ছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম

বিভাষ বাড়ৈ ॥ অবশেষে নানা সঙ্কটে অকার্যকর হয়ে পড়া মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম সচলের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সারাদেশে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম মনিটরিং, মেনটরিং, টেকসই ও পুরোপুরি কার্যকর করতে মাঠপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ২৩ হাজারেরও বেশি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমকে সমানভাবে কার্যকর ও কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে কাজও শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। সফটওয়্যার সমস্যা থেকে শুরু করে যে কোন জটিলতা নিরসন ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নিয়মিত তদারকি করতে আঞ্চলিক উপ-পরিচালক, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতি বছর দেয়া হবে ‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এ্যাওয়ার্ড’। অভিযোগ উঠেছে, মনিটরিং ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের তদারকি এবং ভৌত অবকাঠামোর অভাবে শিক্ষার্থীরা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে পাঠদানের সুবিধা পাচ্ছে না। অনেক বিদ্যালয়ের প্রধানরা ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা মাল্টিমিডিয়া শিক্ষা উপকরণ বাসায় নিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম পরিচালনা তো দূরের কথা বেশিরভাগ ল্যাপটপ, ইন্টারনেট মডেম, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, প্রজেক্টরের স্ক্রিন এবং সাউন্ড সিস্টেম মাসের পর মাস অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে অনেক প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষা উপকরণ দেয়ার দুই বছর পরও প্যাকেট খুলে দেখেনি অনেক প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিখন-শেখানো কার্যক্রমের গুণগতমান নিশ্চিত হচ্ছে না বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ‘শিখন ও শিক্ষণ’ পদ্ধতির মানোন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম হলেও সেভাবে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ বিশেষজ্ঞরা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম পরিচালনায় নিয়োজিত শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন। সরকারের নতুন উদ্যোগ সম্পর্কে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন বলেছেন, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের স্বচ্ছতা ও কার্যকর করতে ব্যাপক নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। ক্লাসরুম মনিটরিং, মেনটরিং, টেকসই করতে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সারাদেশের সকল আঞ্চলিক উপ-পরিচালক, জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের কার্যক্রম নিয়মিত তদারকি করবেন। সফটওয়্যারের যে সমস্যা তা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা এ সমস্যা সমাধান করবে। জানা গেছে, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমকে কার্যকর করতে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক সংস্কৃতি গড়ে তোলারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রতি বছর উপ-পরিচালক, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষক প্রশিক্ষক ও শিক্ষকদের ‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হবে। পাশাপাশি স্থানীয় বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে তহবিল গঠনের মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সকল ক্লাসরুম পর্যায়ক্রমে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে রূপান্তরের উদ্যোগ গ্রহণে নির্দেশনা প্রদান ও উদ্বুদ্ধ করা হবে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম সচলের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর দ্রুত কাজ শুরু করেছে। সারাদেশে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমগুলোকে অনলাইনে ম্যানেজমেন্ট, মনিটরিং ও মেনটরিং করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘একসেস টু ইনফরমেশন’ (এটুআই) প্রোগ্রামের সহায়তায় ‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামে একটি অনলাইন ড্যাসবোর্ড তৈরি করা হয়েছে। যাতে সংশ্লিষ্ট পর্যায়ের শিক্ষকরা মাল্টিমিডিয়া ক্লাস সংক্রান্ত সব তথ্য সেখানে আপলোড করবেন। প্রতিদিন সারাদেশের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের চিত্র পর্যবেক্ষণ করা হবে। কোথাও কোন ত্রুটি দেখা দিলে সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে নিয়মিত মাসিক অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নতুন উদ্যোগের ফলে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জাবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। কোন শিক্ষক কাজে ফাঁকি দিতে পারবেন না কিংবা ব্যক্তিগত কাজে মাল্টিমিডিয়া উপরকরণ ব্যবহার করতে পারবেন না। গত ২ মার্চ দেশের ১২৫টি উপজেলায় আইসিটি ট্রেনিং এ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার ফর এডুকেশন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের তাৎপর্য বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম রূপান্তরে সরকারের নতুন পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
×