ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বালানি তেলের মূল্য ২৪ এপ্রিল থেকে কমতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৬ এপ্রিল ২০১৬

জ্বালানি তেলের মূল্য ২৪ এপ্রিল থেকে কমতে পারে

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ইতোপূর্বে আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতন ঘটলেও সরকার দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য কমায়নি। ইতোমধ্যে এ নিয়ে নানা মহলের হৈ চৈ ও ব্যবহারকারীদের স্বার্থের বিষয়টি চিন্তা করে সরকার শেষ পর্যন্ত জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ঘটনায় চলতি অর্থবছরে এ খাতে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। সংস্থার দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৪ এপ্রিল থেকে সরকারের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ভেজাল তেল বিক্রি, মাপে কমসহ নানান অনিয়মের অভিযোগে সারাদেশে সাড়ে ৩শ’ পেট্রোল পাম্পের লাইসেন্স বাতিল করে এগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এটি নিয়ে দেন-দরবার চলছে। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কী হয়, সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বিপিসি সূত্র জানায়, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লিটারপ্রতি অকটেন ১০, পেট্রোল ১৫, ডিজেল ৪ ও কেরোসিন ৫ টাকা হারে কমানোর নীতিগত প্রস্তাব এসেছে। বিপিসির পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে। এর অর্ধেকেরও বেশি ডিজেল। শতাংশ হিসেবে ৬৪। এদিকে ফিলিং স্টেশনগুলোতে ডিজেল ও অকটেনের সঙ্কট অব্যাহত রয়েছে। সরকার জ্বালানি তেলের দাম কমাচ্ছেÑ এ তথ্য চাউর হওয়ার পর থেকে পেট্রোল পাম্পগুলোর মালিকরা তিনটি তেল কোম্পানি থেকে তাদের চাহিদার চেয়ে কম তেল উত্তোলন করছে। এর কারণ হিসেবে মালিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমান দামে প্রয়োজনীয় তেল কেনার পর কখন সরকার আকস্মিকভাবে মূল্যহ্রাসের ঘোষণা দেয়Ñ এ শঙ্কায় তারা চাহিদা অনুযায়ী তেলের সরবরাহ নিচ্ছে না। এতে বড় অঙ্কের অর্থের লোকসান গুনতে হবে বিধায় এপথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে। পেট্রোল পাম্প মালিকদের এহেন সিদ্ধান্তে যানবাহন চলাচলে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এমনিতেই গ্যাসের অভাবে সিএনজিচালিত বিভিন্ন যানবাহন লম্বা সময় অতিবাহিত করে গ্যাস ফিলিং করে। এতে সংশ্লিষ্ট যানবাহনগুলোর মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এদের বড় একটি অংশ বাধ্য হয়ে ডিজেল-অকটেন দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। এ অবস্থায় পেট্রোল পাম্পগুলোতে জ্বালানি সঙ্কট পরিস্থিতি আরও অবনতিশীল করেছে। বিপিসি সূত্রে শুক্রবার জানানো হয়েছে, ভেজাল তেল বিক্রি, মাপে কমসহ আরও বিভিন্ন অনিয়মের কারণে সারাদেশে সাড়ে ৩শ’ পেট্রোল পাম্পের লাইসেন্স বাতিল করা হচ্ছে। এসব পেট্রোল পাম্প বন্ধ করে দেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট পেট্রোল পাম্প মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার শুরু হয়েছে। গৃহীত সিদ্ধান্তে পরিবর্তন না এলে ওই সব পেট্রোল পাম্প অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। এর পাশাপাশি গ্যাস ক্ষেত্র থেকে আহরিত কনডেনসেট মিশিয়ে যে সমস্ত পেট্রোল পাম্প জ্বালানি তেল বিপণনের অবৈধ তৎপরতায় লিপ্ত সেগুলোকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাসের সঙ্গে উৎপাদিত কনডেনসেট সরাসরি বিপিসির কাছে বিক্রির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিপিসি এসব কনডেনসেট ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধনের মাধ্যমে তা ডিজেল আকারে বিক্রি করে থাকে। কিন্তু গ্যাসক্ষেত্র থেকে আহরিত কনডেনসেড গ্রহণের সঙ্গে জড়িত এজেন্টদের একটি অংশ এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে অধিক মুনাফার লোভে এসব কনডেনসেট সরাসরি বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে বিক্রি করে দিচ্ছে। পাম্প মালিকরা তা ডিজেল ও অকটেনের সঙ্গে মিশিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে অধিক মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ এ জাতীয় কনডেনসেট মিশ্রিত ডিজেল বা অকটেন ব্যবহারের ফলে যানবাহনের যন্ত্রাংশের আয়ুষ্কাল কমে যায় এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে, যা গাড়ির জন্য যেমন ক্ষতিকর, মালিকদের জন্যও আর্থিকভাবে ক্ষতি ডেকে আনে। উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় জ্বালানি তেলের দর কমানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন ধাপে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়। শীঘ্রই এ ব্যাপারে পরিপত্র জারি করা হবে এবং বিপিসি সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তা আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যে কার্যকর করার কথা রয়েছে। ওই সূত্র জানায়, ভর্তুকি দিয়ে জ্বালানি তেল বিক্রির জের হিসেবে সরকার বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। জনস্বার্থে এ লোকসান দেয়া হলেও তা জাতীয় রাজস্ব কোষাগারকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এ অবস্থায় সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস হলেও সরকার দেশে মূল্য কমায়নি। ফলে গত অর্থবছরে সরকার পক্ষে বিপিসি এক খাতে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। দেশে তেলের দাম না কমানোর সিদ্ধান্তে অটল থাকায় সরকার বিভিন্ন মহলের চাপ ও সমালোচনার মুখে পড়ে। সরকার এ ব্যাপারে একটি ব্যাখ্যাও দেয় এবং এতে বলা হয়Ñ অতীতের কিছু লোকসান কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে এ মুহূর্তে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকার গত ৩ এপ্রিল জ্বালানি তেলের মূল্য কমানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। বিপিসি সূত্র জানায়, সরকার বাড়িঘরে গ্যাসের ব্যবহার যেমন নিরুৎসাহিত করছে, তেমনি যানবাহনে সিএনজি ব্যবহারেও নিরুৎসাহিত করার পথ বেছে নিয়েছে। এর বিপরীতে বোতলজাত গ্যাস ব্যবহারে উৎসাহ যোগাবে। এতে গ্যাসের তীব্র সঙ্কট কিছুটা হলেও কমবে বলে নীতিনির্ধারক মহলের ধারণা। এর পাশাপাশি ভবিষ্যতে আবারও ভর্তুকি দিয়ে জ্বালানি তেল বিক্রির পথ বেছে নিতে পারে বলে সরকারী সূত্রের ধারণা। বিপিসি সূত্র জানায়, জ্বালানি মন্ত্রণালয় জ্বালানি তেলের দাম কমানোর যে প্রস্তাবটি দিয়েছে এবং যার ওপর ভিত্তি করে সরকার দাম কমানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে সে অনুযায়ী অকটেন লিটারপ্রতি ৯৯ টাকা থেকে ৮৪ দশমিক ১৫ টাকা, পেট্রোল ৯৬ টাকা থেকে ৮১ দশমিক ৬০ টাকা, ডিজেল এবং কেরোসিন ৬৮ টাকা থেকে ৫১ টাকায় কমতে পারে। প্রসঙ্গত, দেশে জ্বালানি তেলের দাম সাধারণত কমানো হয় না। বিভিন্ন সময়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত এরশাদ সরকার আমলে একবার ব্যাপকভাবে তেলের দাম হ্রাস করার ঘটনা ঘটে। বর্তমান সরকার আমলে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তা হবে দ্বিতীয় দফার রেকর্ড। জনস্বার্থে এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে সরকারের মুনাফা কমবে বটে, তবে ব্যবহারকারীদের জন্য সুফল বয়ে আনবে বলে সূত্র জানায়।
×