ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়ার পর মিলল ২ গুলিবিদ্ধ লাশ

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৪ এপ্রিল ২০১৬

ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়ার পর মিলল ২ গুলিবিদ্ধ লাশ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ও নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝিনাইদহ ॥ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া দুই কলেজছাত্র আবুজর গিফারী ও শামীম মাহমুদের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে যশোরে। বুধবার সকালে পুলিশ যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের বহরামপুর সার্বজনীন শ্মশানঘাট থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে। বুধবার সকালে স্থানীয়রা মন্দিরে পূজা করতে এসে পুকুরে লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ নিহতদের পরিবারের লোকজন সেখানে গিয়ে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করে। গত ২৫ মার্চ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহর থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকের লোক শামীম মাহমুদ এবং ১৮ মার্চ আবুজার গিফারী নামে দু’জনকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ ছিল। ছেলের খোঁজে উভয় পরিবারের সদস্যরা থানায় জিডি ও সংবাদ সম্মেলন করে। নিখোঁজ শামীম কালীগঞ্জ পৌরসভাধীন বাকুলিয়া গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে এবং ঝিনাইদহ সরকারী কেসি কলেজের অনার্স ব্যবস্থাপনা দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এছাড়া নিখোঁজ আবুজার গিফারী যশোর এমএম কলেজের বাংলায় অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র ও কালীগঞ্জ পৌর এলাকার চাপালী গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, আমি শুনেছি দু’জনের লাশ পাওয়া গেছে। তবে ঘটনাস্থল যশোরের মধ্যে হওয়ায় বিস্তারিত জানতে পারেনি। নিখোঁজ শামীম মাহমুদের বাবা রুহুল আমিন জানান, সে বাইরে বেড়াতে গিয়েছিল। কিন্তু যশোর-ঢাকা মহাসড়কের মাহতাব উদ্দীন ডিগ্রী কলেজের পাশ থেকে অপরিচিত ৪ লোক তাকে তুলে নিয়ে গেছে। প্রশাসনের সব দফতরে খোঁজ করেছি কিন্তু আমার ছেলের কোন সন্ধান পায়নি। নিখোঁজ আবুজার গিফারীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, তার একামত্র পুত্র আবুজার গিফারী যশোর এমএম কলেজের বাংলায় অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র। গত ১৮ মার্চ নিজ গ্রামের মসজিদে জুমার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুটি মোটরসাইকেলে ৪ ব্যক্তি গিফারীর পথরোধ করে। তারা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে গিফারীর হাতে হাতকড়া দিয়ে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আবুজার গিফারী মা কুলসুম বেগম, মামা ফজলু সরদার, ফুফু নূরজাহান বেগম, চাচাত ভাই পান্নু রহমান, ফুফাত ভাই রিপন হোসেন। এ ব্যাপারে তিনি পুত্রকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে না পেয়ে ২২ মার্চ কালীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে। নিহত দুই কলেজছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। কালীগঞ্জের আরেক কলেজছাত্র নিখোঁজ ॥ এদিকে ১০ এপ্রিল বিকেলে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা ঈশ্বরবা গ্রামের জামতলা থেকে সোহানুর ইসলাম নামে এক কলেজছাত্রকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একটি ইজিবাইকে করে চারজন অপরিচিত লোক তাকে তুলে নিয়ে যায় বলে স্থানীয়রা জানায়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ রয়েছে। তবে কালীগঞ্জ থানার পুলিশই তাকে তুলে নিয়ে গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা ইঙ্গিত করেছেন। নিখোঁজ সোহানুর ঈশ্বরবা গ্রামের কাপড় ব্যবসায়ী মহসিন আলীর ছেলে ও কালীগঞ্জ শহরের শহীদ নুর আলী কলেজের প্রথম বর্ষের মানবিক বিভাগের ছাত্র। এদিকে কালীগঞ্জ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন ও ডিবি পুলিশ তার আটকের বিষয়টি অস্বীকার করছেন। অপহরণ হওয়ার পর দুই কলেজছাত্রের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের সংবাদে নিখোঁজ সোহানের পরিবারে শোক এবং অজানা আতঙ্ক শুরু হয়েছে। নিখোঁজ সোহানুর ইসলামের মা পারভিন আক্তার জানান, আমি চিকিৎসা শেষে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। আমার দুই ছেলে গ্রামের জামতলা এলাকায় বসেছিল আমাকে নেয়ার জন্য। আমার সঙ্গে মোবাইলে শেষ কথা হয় ৫টা ১০ মিনিটের সময়। এর ২০ মিনিট পর আমি গ্রামের জামতলায় পৌঁছায়। এসে দেখি অনেক মানুষ। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আমার ছেলেকে দেখতে না পেয়ে জানতে চাইলাম আমার ছেলে কোথায়? কিন্তু আমার ছেলে কোথায়, না বলে, সবাই বলছে, আপনি বাড়ি চলেন। পরে সব জানতে পারবেন। এরপর পাশের বাড়ি থেকে আমার ছোট ছেলে কাঁদতে কাঁদতে এসে বলল, আম্মু ভাইকে কারা যেন ধরে নিয়ে গেছে।
×