ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্ডিপেনডেন্টের বিশ্লেষণ

ট্রাম্প, না ক্রুজ ॥ দ্বিধায় রিপাবলিকানরা

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ১৩ এপ্রিল ২০১৬

ট্রাম্প, না ক্রুজ ॥ দ্বিধায় রিপাবলিকানরা

উইসকনগিনে ৫ এপ্রিল প্রাইমারিতে পরাজয়ের পর ট্রাম্প এখনও প্রেসিডেন্ট পদে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পেতে অন্য যে কারও তুলনায় বেশি ভাল অবস্থানে আছেন। কিন্তু তিনি যে জুলাইয়ের দলীয় কনভেনশনের আগে প্রয়োজনীয়সংখ্যক ডেলিগেটের সমর্থন পাবেন না, সেই সম্ভাবনা বেড়ে চলেছে। এটি ঘটলে কাকে বাছাই করা হবে তা নিয়ে সম্ভবত এক ফ্লোর ফাইট হবে। সেক্ষেত্রে টেক্সাস সিনেটর টেড ক্রুজই ট্রাম্পের সবচেয়ে স্পষ্ট বিকল্প হবেন। কাগজপত্রে মনে হয়, ক্রুজ রাজনীতিতে সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে সঠিক ব্যক্তিই হবেন। প্রিন্সটন ও হার্ভাডের গ্র্যাজুয়েট ক্রুজ সাধারণ পথেই রাজনীতির শীর্ষস্থানে আরোহণ করেন। প্রথমে তিনি সুপ্রীমকোর্টে চাকরি করেন এবং জর্জ ডাব্লিউ বুশের উভয় প্রশাসনেও তার প্রথম নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় কাজ করেন। ২০১২ সালে সিনেট আসনে বিজয়ী হওয়ার আগে টেক্সাসের সলিসিটর জেনারেল ছিলেন। তিনি কিউবান অভিবাসীদের ছেলে। এটি হিসপ্যানিক ভোট পেতে মরিয়া রিপাবলিকান পার্টির অবশ্যই বর বলে গণ্য হবে। কিন্তু তিনি অবশ্যই কোন সাধারণ রিপাবলিকান নন। তিনি কথায় কথায় বাইবেলের উপদেশ উদ্ধৃত করে থাকেন। তার এ ঢং তাকে ট্রাম্পের উপহাসের পাত্রে পরিণত করেছে। ট্রাম্প ক্রুজকে মিথ্যার ফেরিওয়ালা বলে থাকেন। গত সপ্তাহে ১৭ হাজার লোকের এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, টেড হলেন মিথ্যাবাদী। বাইবেলের স্থান ওপরে, তিনি একে নিচে নামিয়ে আনেন এবং এরপর মিথ্যা কথা বলেন। যে মুহূর্তেই ক্রুজ সিনেটে যোগ দেন, সেই মুহূর্তেই তিনি এর নিয়মকানুন মেনে চলবেন না বলে স্পষ্ট করে দেন। তিনি কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করতেও কোন আগ্রহ দেখাননি। এটি কারও মনোযোগ এড়ায়নি যে এমনকি তখনও উইসকনসিন তার প্রচারাভিযানের খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান হওয়া সত্ত্বেও কেবল অন্য দু’সিনেটর বাস্তবে তার মনোনয়ন অনুমোদন করেছেন। এর কারণ একটাই- ক্যাপিটল হিলের খুব কম লোকই তাকে পছন্দ করতে পারেন। ১৯ এপ্রিল নিউইয়র্কে যখন দলীয় প্রাইমারি ভোট অনুষ্ঠিত হবে, তখন ক্রুজ শোচনীয় ফল করবেন বলে মনে হয়। এর অন্যতম কারণ হলো, তিনি নিউইয়র্কের মূল্যবোধ লালন করার অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ আগে ট্রাম্পকে আক্রমণ করেন। যেন সেই মূল্যবোধ এক ভয়াবহ বিষয়। এর আরও কারণ হলো সামাজিক ইস্যু নিয়ে তার চরমপন্থী অবস্থান এবং খ্রীস্টান ধর্মমতের প্রতি লোক দেখানো উৎসাহ এ অঙ্গরাজ্যে খুব পছন্দের চোখে দেখা হবে না। কিন্তু এগুলোর কথা বাদ দিলেও ক্রুজের এমন আরেক প্রতিশ্রুতি রয়েছে, যা বেশিরভাগ রক্ষণশীল ভোটারকেই ভাবিয়ে তুলবে। তিনি ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিস উঠিয়ে দিতে এবং শতকরা ১০ ভাগ হারে ফ্ল্যাট ট্যাক্স প্রবর্তন করতে চান। এতে বাজেট ঘাটতিতে বিস্ফোরণ ঘটবে বলে বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদ মনে করেন। ইসলামিক স্টেটকে পরাজিত করতে ক্রুজ সিরিয়া ও ইরাকের কোন কোন স্থানে নির্বিচারে বোমাবর্ষণের পরিকল্পনা করছেন। বালু অন্ধকারে ঝলমল করতে পারে কিনা, তা আমি জানি না কিন্তু আমাদের সেটিই দেখতে হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। সিরীয় শরণার্থীদের বিষয়ে তিনি বৈষম্য প্রদর্শন করবেন। তিনি সম্প্রতি প্রস্তাব করেন, যারা নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পেতে পালিয়ে যাচ্ছে, তাদের মধ্যপ্রাচ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশগুলোতে পুনর্বাসন করা উচিত। আর গণহত্যার লক্ষ্যস্থলে পরিণত হওয়া খ্রীস্টানদের যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপদ আশ্রয় প্রদান করা উচিত। আরও পরিচিত কথা, তিনিও যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যে একটি দেয়াল নির্মাণ করতে চান। অন্য কথায়, ক্রুজ এক চরমপন্থী। ট্রাম্পকে মনোনয়ন দেয়া হলে তাদের দলের সর্বনাশ হবে এবং তিনি পরে প্রেসিডেন্ট হলে দেশ ও বিশ্বের সর্বনাশ হবে- এ আশঙ্কা করছেন এমন রিপাবলিকানদের মুক্তির সর্বশেষ, সর্বোত্তম সুযোগ হিসেবে ক্রুজের প্রতি আকর্ষণবোধ ক্ষমা করা যেতে পারে। কিন্তু রিপাবলিকানরা যা চাচ্ছেন, সেই বিষয়ে সতর্ক হলে ভাল করবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্প কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে যে উপায়ে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন করা হয়েছে, তাকে কারচুপিপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছেন। এ প্রক্রিয়ায় দলের সিনিয়র সদস্যরা ডেলিগেটদের বাছাই করেন এবং টেড ক্রুজই সব ডেলিগেটকে তার পক্ষে পান। -ইন্ডিপেনডেন্ট।
×