ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছয় খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার;###;কারিগরি প্রযুক্তির দক্ষ মানব গঠন পাবে সর্বাধিক গুরুত্ব

সব থেকে বড় বাজেট

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৯ এপ্রিল ২০১৬

সব থেকে বড় বাজেট

এম. শাহজাহান ॥ আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য ছয়টি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় প্রস্তাবিত এই বাজেটে মোট রাজস্ব আয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ২২০ কোটি টাকা। বাজেটে ৯১ হাজার ৭৭০ কোটি সামগ্রিক ঘাটতি নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশাল অঙ্কের এই ঘাটতি মোকাবেলায় বৈদেশিক উৎস থেকে আসবে ৩০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ ঋণ ও অন্যান্য আয় থেকে ৬১ হাজার ৭০ কোটি টাকার অর্থায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেটে ১ লাখ ১২ হাজার ৮৯০ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর রূপরেখা দেখা হয়েছে। এ ছাড়া বাজেটে ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার প্রস্তাব করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে গড় মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ শতাংশ এবং প্রাক্কলিত জিডিপি ১৯ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি মূল্য প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে বাজেটে যে ছয়টি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে তা হলো- স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নসহ সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়ন, বিদ্যুত, জ্বালানি, সড়ক, রেলপথ ও বন্দরসহ ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন ও কর্মসৃজন প্রকল্প, সরকারী সেবা প্রদানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন, জলবায়ু মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জন এবং বহির্বিশ্বের অর্থনৈতিক সুযোগ অধিকতর ব্যবহার ও প্রবাস আয় বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন রফতানি বাজার অনুসন্ধান। এ ছাড়া নতুন বাজেটে যে বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে তা হচ্ছে চল্লিশটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জেন্ডার বাজেট রিপোর্ট প্রণয়ন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, এ সংক্রান্ত একটি নতুন ধারণাপত্র প্রণয়ন এবং শিশু বাজেট ও ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অগ্রযাত্রা হালনাগাদ করা। জানা গেছে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সামনে রেখে রূপকল্প-২১ বাস্তবায়ন এবং ওই সময়ের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। এ ছাড়া এমডিজি অর্জনে ব্যাপক সাফল্যের পর এবার জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বাস্তবায়নেও অভাবনীয় সাফল্য প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়েই আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। সম্প্রতি সচিবালয়ে বাজেট নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগামী বাজেটে কারিগরি প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষমানব গঠনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। একই সঙ্গে সরকারী-বেসরকারী খাতের বিনিয়োগে গতিশীলতা আনয়ন করে ব্যাপক ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। শুধু তাই নয়, আমরা আমাদের স্বপ্নের দিগন্ত আরও প্রসারিত করেছি। ছয় শতাংশের বৃত্ত ভেঙ্গে উচ্চ প্রবৃদ্ধির সোপানে আহরণ এবং মাথাপিছু আয়ের ধারাবাহিক উত্তরণ ঘটিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী দেশের কাতারে শামিল হওয়া আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায় হতে উত্তরণ ঘটিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের মতো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে সরকার। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জাতিসংঘ মাথাপিছু জাতীয় আয়, মানবসম্পদের অবস্থান ও অর্থনীতির ঝুঁকিগ্রস্ততা সূচক বিবেচনায় নিয়ে থাকে। ইতোমধ্যে অর্থনীতির ঝুঁকিগ্রস্ততা সূচকে নির্ধারিত মাপকাঠি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। আর তাই আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে এই তিনটি সূচকেই নির্ধারিত প্রমাণ অর্জন করতে সক্ষম হবে। আসছে বাজেটে যে পাঁচটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখা হবে ॥ আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। জ্বালানি তেলের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমন্বয় করা হবে যাতে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পায় এবং মুদ্রার বিনিময় হার কাক্সিক্ষত পর্যায়ে থাকে। ইতোমধ্যে জ্বালানি তেলের মূল্য কমিয়ে আনার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শীঘ্রই সরকারের এই ঘোষণা কার্যকর করা হবে বলে জানা গেছে। দ্বিতীয়ত, পদ্মা সেতুসহ ফাস্ট ট্রাক প্রজেক্টসমূহের অর্থায়ন এবং সুষ্ঠু বাস্তবায়ন। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর মূল কাজ শুরু করা হয়েছে। এ ছাড়া ফাস্ট ট্রাক প্রজেক্টের অন্যান্য প্রকল্পসমূহও দ্রুত বাস্তবায়নে নজরদারি বাড়িয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তৃতীয়ত, রাজস্ব খাতে পরিকল্পিত সংস্কার কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন যার মধ্যে রয়েছে, ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন এবং ভ্যাট আদায় জোরদার করা। কর প্রশাসনের চলমান সম্প্রসারণ এবং অটোমেশন অব্যাহত রাখা। কর ব্যবস্থায় অপ্রয়োজনীয় কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ প্রত্যাহার করা, কর প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ই-পেমেন্ট এবং ই-ফাইল চালুকরণ, আমদানি শুল্ক এবং আয়কর রেয়াতি না দেয়া। চতুর্থত, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা এবং রফতানি বৃদ্ধির প্রয়াস জোরদার করাসহ নতুন বাজার অনুসন্ধান। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিনিয়োগ। গত কয়েক বছর ধরে সরকারী খাতের বিনিয়োগ কয়েকগুণ বাড়লেও বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ সেই অনুপাতে বৃদ্ধি পায়নি। যদিও দেশী-বিদেশী নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণে ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন বিনিয়োগ করে উৎপাদন পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ। উদ্যোক্তারা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা থেকেই নতুন বিনিয়োগে এগিয়ে আসেন। কিন্তু ঘোষিত রূপকল্প-২১ বাস্তবায়ন এবং ওই সময়ের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের কাতারে নিয়ে যেতে হলে বিদ্যমান বিনিয়োগের দক্ষতা বাড়ানোর ওপর সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া প্রয়োজন। দেশে যে বিনিয়োগ আছে সেগুলোর সঠিক ব্যবহার করা গেলে উৎপাদন ও সেবার মান প্রায় দ্বিগুণ করা সম্ভব। তাই আগামী বাজেটে বিদ্যমান বিনিয়োগের দক্ষতা বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে। জানা গেছে, আসছে বাজেটে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগে যেসব প্রতিবন্ধতা রয়েছে তা দূর করা হবে। এ জন্য বিদ্যুত, গ্যাস প্রাপ্তিতে বিলম্ব, বিনিয়োগ প্রক্রিয়াকরণে প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতা, জমির সঙ্কট দূর করা এবং উচ্চ ঋণের সুদ কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ২২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাতলুব আহমাদ সম্প্রতি বিনিয়োগ সংক্রান্ত এক সেমিনারে বলেন, এদেশে প্রায় সব খাতে বিনিয়োগ উন্মুক্ত। অবকাঠামের মধ্যে বিদ্যুতের নিশ্চয়তা আছে। তবে বন্দর, গভীর সমুদ্র বন্দরসহ অন্যান্য অবকাঠামো খাতে মনোযোগ দিতে হবে। নতুন বাজেটেও এর প্রতিফলন থাকা উচিত।
×