ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

দাম কমছে জ্বালানি তেলের, বাড়ছে বিদ্যুত ও গ্যাসের

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৭ এপ্রিল ২০১৬

দাম কমছে জ্বালানি তেলের, বাড়ছে বিদ্যুত ও গ্যাসের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জ্বালানি তেলে ভেজাল দিলেই লাইসেন্স বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বুধবার জ্বালানি বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়। দেশের সকল পেট্রোল পাম্পের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) সরকারকে জ্বালানি তেলে ব্যাপক ভেজালের কথা জানিয়েছে। বৈঠকের পর বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, এক হাজার ২০০ পেট্রোল পাম্পের মধ্যে কোন্ কোন্ পাম্প ভেজাল দিচ্ছে আমাদের কাছে সে খবর রয়েছে। আমরা ধীরে ধীরে তাদের লাইসেন্স বাতিলের দিকে যাব। তিনি বলেন, তেলে ভেজাল দিলে জরিমানা না, সরাসরি লাইসেন্স বাতিল হবে। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, আগামী ১০ দিনের মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে। এবার অকটেন, কেরোসিন, পেট্রোল ও ডিজেলের দাম কমিয়ে পরিপত্র জারি করা হবে। জ্বালানি তেলের দাম কমলেও গ্যাস এবং বিদ্যুতের সমন্বয় করার কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, ফার্নেস অয়েলের দাম কমানো হয়েছে এতে বেশ কিছু জায়গায় সাশ্রয় হচ্ছে। সে বিষয়গুলো সরাসরি আমাদের জনগণের পর্যায়ে পৌঁছেছে। বৈঠক সূত্র জানায়, বিপিসি জানিয়েছে তেলে ভেজাল দেয়ার অপরাধে সারাদেশে এর আগে ছয়টি পেট্রোল পাম্পকে জরিমানা করা হয়েছে। এরপর তেলে ভেজাল দেয়ার বিষয়টি নজরে এলে সারাদেশের পেট্রোল পাম্পগুলোর ওপর সমীক্ষা চালায় বিপিসি। এতে দেখা যায়, পেট্রোল পাম্পগুলো আগে বিপণন কোম্পানির কাছ থেকে যে পরিমাণ তেল ক্রয় করত এখন তা কমে গেছে। গত অর্থবছরে এভাবে ১৫ ভাগ পর্যন্ত বিপিসির তেল বিক্রি কমে গেছে। গ্যাস ক্ষেত্রের উপজাত কনডেনসেট জ্বালানি তেলের মধ্যে ভেজাল দিয়ে থাকে পেট্রোল পাম্পগুলো। এখন ৪২ টাকা লিটার দরে কনডেনসেট ক্রয় করে পেট্রোল, অকটেন এবং ডিজেলের মধ্যে তা ভেজাল দেয়া হচ্ছে। দেশে বেসরকারী কনডেনসেট প্রক্রিয়া করছে এমন কোম্পানিগুলো কনডেনসেটের রমরমা বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। পেট্রোবাংলার কাছ থেকে গ্যাসের উপজাত কনডেনসেট ক্রয় করে ফ্রাকশেনেশন করে তা একক ক্রেতা হিসেবে বিপিসির কাছে বিক্রি করার কথা। সরকারের নজরদারির অভাবে কনডেনসেট প্রক্রিয়া হওয়ার বদলে যাচ্ছে তা পেট্রোল পাম্পে। বৈঠকে বিপিসির তরফ থেকে জানানো হয় সারাদেশে তারা ১০৩টি পেট্রোল পাম্প খুঁজে পেয়েছেন যাদের কোন অনুমোদনই নেই। প্রথমবার অভিযানের সময় ছয়টি পেট্রোল পাম্পের তেলে ভেজাল দেয়ার প্রমাণ পেয়ে তাদের জরিমানা করার কথা জানানো হয় এগুলো হচ্ছে বগুড়ার জীবিকা ফুয়েল সেন্টার, ত্রিশা এন্টারপ্রাইজ, এম আর ট্রেডার্স, রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ীর শাহানা ফুয়েল, নড়াইলের সরদার ফিলিং স্টেশন এবং নওগাঁয়ের হক ফিলিং স্টেশন। বৈঠকে বিপিসির কাছে জানতে চাওয়া হয় কেন শুধু জরিমানা করেই তাদের ছেড়ে দেয়া হলো কেন তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হলো না। তবে বিপিসি এ বিষয়ে বৈঠকে জবাব দিতে পারেনি। এ সময় ভবিষ্যতে কেউ জ্বালানি তেলে ভেজাল দিলে তাদের অনুমোদন বাতিল করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। গ্যাসের দাম বাড়ছে ॥ জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কাছে গত বৃহস্পতিবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির একটি প্রস্তাব দেয় বিতরণ কোম্পানিগুলো। মাত্র সাত মাসের ব্যবধানে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কাছে সর্বোচ্চ ১৪০ ভাগ দাম বৃদ্ধির আবদার নিয়ে হাজির হলো। নতুন প্রস্তাবে গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত গ্যাসের দুই চুলার (ডাবল বার্নার ) ক্ষেত্রে মাসের বিল ৭৭ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৬৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা আর এক চুলা (সিঙ্গেল বার্নার) মাসিক চার্জ ৮৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৬০০ টাকা হতে এক হাজার ১০০ টাকা, আবাসিকের যেসব গ্রাহক মিটার ব্যবহার করেন তাদের ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৭ টাকা থেকে ১৪০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৬ টাকা ৮০ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। শিল্প কারখানার ক্যাপটিভ বিদ্যুত (নিজস্ব) উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১৩০ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ টাকা ৩৬ পয়সা থেকে ১৯ টাকা ২৬ পয়সা করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য বিদ্যুত কেন্দ্রে দুই টাকা ৮২ পয়সা থেকে ৬৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৪ টাকা ৬০ পয়সা, কারখানার বয়লারের জন্য ৬ টাকা ৭৪ পয়সা থেকে ৮২ শতাংশ বাড়িয়ে ১০ টাকা ৪৫ পয়সা, বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ৭২ শতাংশ বাড়িয়ে ১১ টাকা ৩৬ পয়সার স্থলে ১৯ টাকা ৫০ পয়সা এবং সার কারখানার জন্য ৭১ শতাংশ বৃদ্ধি করে ২ টাকা ৮২ পয়সা থেকে ৪ টাকা ৪১ পয়সা বৃৃদ্ধির আবেদন করেছে। একই সঙ্গে সিএনজির দাম প্রতি ঘনমিটারের ৩৫ টাকা থেকে ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৫৮ টাকা নির্ধারণের আবেদন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত দাম আগামী পহেলা জুলাই থেকে কার্যকর করার আবেদন করেছে গ্যাস বিতরণ কোম্পানি।
×